আন্তর্জাতিক

চাকরি বাজারে বেশি চাহিদা থাকবে যাদের

বিশ্বব্যাপী দ্রুত বদলে যাচ্ছে চাকরির বাজার। বদলাচ্ছে দক্ষতার চাহিদাও। কর্মক্ষেত্রগুলো দিন দিন আরও বেশি যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে। ফলে খুব শিগগির চাকরি বাজারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয়তা)। শুধু ম্যানুয়াল কাজেই স্বয়ংক্রিয়তা আসবে তা নয়; স্মার্ট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-চালিত যন্ত্রগুলোর চাহিদাও ক্রমেই বাড়বে।

Advertisement

তাহলে আমরা কী করবে? মানুষ কি কর্মহীন হয়ে পড়বে? না! আপাতত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এত তাড়াতাড়ি আমরা পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছি না। বরং আমরা সেইসব কাজে নজর দেবো যেগুলো যন্ত্র ঠিক আমাদের মতো করতে পারে না (এখন পর্যন্ত)। যেমন- যেসব কাজে কৌশল, সৃজনশীলতা বা মানসিক বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয়।

২০২৩ সাল, এমনকি তারপরেও শিল্প ও এন্টারপ্রাইজে তাদেরই সফল হওয়ার সুযোগ বেশি, যাদের স্মার্ট যন্ত্র ও সফটওয়্যার পরিচালনার দক্ষতা থাকবে। নিচে এ ধরনের পাঁচটি দক্ষতা সম্পর্কে জানানো হলো, যেগুলো আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে।

১. ডেটা কমিউনিকেটর২০২৩ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যবসায় চাহিদাসম্পন্ন ও মূল্যবান হয়ে উঠবেন ডেটা কমিউনিকেটর ও গল্পকাররা (স্টোরি টেলার)। কারণ, ফরেস্টারের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ চাকরিতেই সরাসরি ডেটার কাজ থাকবে। সুতরাং এর ব্যাখ্যা, অনুবাদ ও যোগাযোগের জন্য প্রতিটি কোম্পানিতেই দক্ষ লোকের প্রয়োজন হবে।

Advertisement

দক্ষ কমিউনিকেটররা ডেটার চতুর্মুখী বর্ণনা দেখতে ও যোগাযোগ করতে সক্ষম। এর অর্থ হলো- ইনসাইট কোথা থেকে আসে, কেন সেগুলো ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে এটিকে কাজে লাগাতে হবে তা বুঝতে পারেন ডেটা কমিউনিকেটররা। সুতরাং, ডেটা যেহেতু বিভিন্ন ব্যবসায়িক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে, তাই এ বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও ক্রমেই মূল্যবান হয়ে উঠছেন।

২. সাইবার নিরাপত্তাকোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে বাড়িতে বা দূরে বসে কাজ করার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিল, তা ২০২৩ সালেও চলবে। ফলে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিটি কোম্পানির জন্যই অপরিহার্য। এটি শুধু আইটি বিভাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রতিটি কর্মচারীকে নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে তার ওপর অর্পিত ডেটার নিরাপত্তার দায় নিতে হবে।

তবে তার মানে এই নয় যে, বিশেষায়িত সাইবার নিরাপত্তা এজেন্টরা অতীত হয়ে যাবেন। সেই দিন বহূদূর। বস্তুত আশা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালে এই খাতে এক কোটি পেশাদার কর্মী নিয়োগ পাবেন।

৩. ইউএক্স ডিজাইনসময়ের সঙ্গে প্রতিটি কোম্পানি প্রযুক্তিনির্ভর এবং প্রতিটি চাকরি প্রযুক্তি-সম্পর্কিত হয়ে ওঠায় ইউজার এক্সপিরিয়েন্স (ইউএক্স) ডিজাইন এবং ইউজার ইন্টারফেস (ইউআই) ডিজাইনের মতো দক্ষতাগুলো ক্রমেই মূল্যবান হয়ে উঠছে৷

Advertisement

প্রযুক্তির এই গণতন্ত্রীকরণের অর্থ হলো- ভূমিকা যা-ই হোক না কেন, প্রত্যেককে কিছুটা হলেও প্রযুক্তির সঙ্গে কাজ করতে হবে। সুতরাং, সেইসব প্রযুক্তি যে কারও জন্য ব্যবহারযোগ্য হতে হবে, এমনকি যাদের সফটওয়্যার ও প্রোগ্রামিংয়ের দক্ষতা নেই তাদের জন্যেও।

ইউএক্স ও ইউআই ডিজাইনারের দক্ষতা হলো- প্রযুক্তির সঙ্গে কাজ করতে অভ্যস্ত না হলেও যে কারও জন্য প্রযুক্তিকে স্বজ্ঞাত এবং অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলা। আমরা যখন লো-কোড/নো-কোড প্ল্যাটফর্মের যুগে এগিয়ে যাচ্ছি তখন এটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। তাছাড়া ভোক্তারা কেনা পণ্য ও সেবার অন্যান্য দিকগুলোর (যেমন দাম বা গুণমান) তুলনায় অভিজ্ঞতাকে বেশি মূল্যায়ন করায় আগামীতে ইউএক্স ডিজাইনারের চাহিদা আরও বাড়বে।

৪. ডিজিটাল মার্কেটিংআমরা দৃষ্টি আকর্ষণের অর্থনীতিতে বসবাস করি। অর্থাৎ, মানুষের মনোযোগই হয়ে উঠছে সবচেয়ে মূল্যবান পণ্য, যা পাওয়া যেকোনো ব্র্যান্ড ও কোম্পানির জন্য এখন এক নম্বর অগ্রাধিকার। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং আপনার পণ্য বা সেবাগুলোকে তাদের মনে সামনের সারিতে জায়গা করিয়ে দেওয়া।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মধ্যে রয়েছে পেইড সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে ইনফ্লুয়েন্সার-নেতৃত্বাধীন প্রচারাভিযান, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশান (এসইও), ইমেইল মার্কেটিং ফানেল, মেটাভার্স অ্যান্ড অগমেন্টেড রিয়েলিটির (এআর) মতো অত্যাধুনিক চ্যানেল। অর্থাৎ প্রযুক্তিগত থেকে সৃজনশীল বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত এতে।

ভালো মার্কেটার বা বিপণনকারীরা এক, একাধিক বা অনেকগুলো বিষয়ে দক্ষ হতে পারেন। আর তেমনটি হলে ২০২৩ সালে তাদের চাকরির অভাব হবে না।

৫. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাআগামীতে চাকরি বাজারের রাজা হতে চলেছে এই দক্ষতা। আপনি হয়তো খেয়াল করবেন, ওপরে যতগুলো চাকরির কথা বলা হয়েছে সবগুলোতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। বিশেষভাবে, এআই’র সঙ্গে কাজ করার ক্ষমতাকে আজকাল ‘বাড়তি দক্ষতা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

ডেটা কমিউনিকেটরদের কাছে এমন এআই টুল রয়েছে, যা তাদের ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও গল্প বলার সবচেয়ে কার্যকর ধরন নির্বাচনে সাহায্য করে। সাইবার নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্টরা নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক বিশ্লেষণ এবং আগেভাগে সম্ভাব্য আক্রমণগুলো চিহ্নিত করতে এআই ব্যবহার করেন। কোন বৈশিষ্ট্য ও কার্যকারিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত তা নির্ধারণে এআই’র সাহায্য নেন ইউএক্স ডিজাইনাররা। আর ডিজিটাল মার্কেটারদের কাছে দর্শকদের আচরণের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য, এমনকি কপি ও কন্টেন্ট তৈরির জন্যে বিভিন্ন ধরনের এআই টুল থাকে।

সেক্ষেত্রে, এআই’র মাধ্যমে আপনার বা কোম্পানির মানবিক দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ খুঁজে বের করা এবং সেই মোতাবেক কাজ করার জন্য যথাযোগ্য টুল ও প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের ক্ষমতাই হতে পারে আগামীতে সবচেয়ে মূল্যবান দক্ষতা।

সূত্র: ফোর্বসকেএএ/