দেশজুড়ে

উন্নয়নকাজে ধীরগতি, ভোগান্তিতে নগরবাসী

প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে খুলনা মহানগরী জুড়ে। ড্রেন নির্মাণ, সড়ক মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কাজ চলছে। নগরীর বেশিরভাগ সড়ক বন্ধ রেখে এসব কাজ চলছে। এতে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। সেইসঙ্গে ধুলার শহরে পরিণত হয়েছে খুলনা।

Advertisement

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি), খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে এসব উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে নগরবাসীর অভিযোগ, এসব কাজে ধীরগতির কারণে তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

সম্প্রতি খুলনা মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশকিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় খুলনা সিটি করপোরেশন। ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করতে হবে সব কাজ। ফলে কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর থেকেই একযোগে কার্যক্রম শুরু করেছেন ঠিকাদাররা। একই সঙ্গে খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষও তাদের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য শহরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি অব্যাহত রেখেছে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কজুড়ে ড্রেনের জন্য খনন করা মাটির স্তূপ। কোথাও কোথাও রাখা হয়েছে বর্জ্য। ইট-বালুসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ও সরঞ্জাম সড়কের অর্ধেক অংশজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে পথচারী ও যান চলাচল। ঘটছে দুর্ঘটনা।

Advertisement

খুলনা মহানগরীর ব্যস্ততম খানহাজান আলী রোড, লোয়ার যশোর রোড, হাজী মহসিন রোড, আহসান আহমেদ রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, টুটপাড়া মেইন রোড, শামছুর রহমান রোড, পূর্ব বানিয়া খামার, বি কে মেইন রোড, মিয়াপাড়া, মুন্সিপাড়াসহ কমপক্ষে অর্ধশত সড়কে ড্রেন নির্মাণ ও পাইপ স্থাপনের কাজ চলমান।

একসঙ্গে এত কাজের কারণে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। শ্রমিকের অভাবে অনেক এলাকায় দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে নির্মাণকাজ। ড্রেনের জন্য খনন করা মাটি দিনের পর দিন পড়ে থাকছে সড়কজুড়ে। ঠিকাদারের সহযোগীরা বলছেন, কেউ মাটি নিতে চাইলে তাকে বিনা টাকায় দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কেউ ময়লাযুক্ত মাটি নিতে চাইছেন না। যথাসময়ে এস্কেভেটর, ডাম্প ট্রাক না পাওয়ায় এসব মাটি শুকিয়ে ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, ‘আমরা এখন কাজের লোক পাচ্ছি না। ফলে আমাদের কাজে একটু দেরি হচ্ছে। ময়লা অপসারণের যানবাহন কম থাকায় খুঁড়ে রাখা মাটিও ঠিকমতো অপসারণ করতে পারছি না।’

নগরীর টুটপাড়া জোড়াকল বাজারের ব্যবসায়ী সাইদুল ও মোসলেম হাওলাদার বলেন, ‘ড্রেন খোঁড়ার কারণে মাটি তুলে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। মাটি শুকিয়ে তা ধুলায় পরিণত হয়ে দোকানপাটে ঢুকছে। দিনের মধ্যে কয়েকবার সেই ধুলা পরিষ্কার করতে হচ্ছে।’

Advertisement

নগরীর আদালত পাড়া ও কেডিঘোষ রোডের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, সড়কের ওপর থেকে মাটি না সরানোর কারণে ধুলাবালিতে তাদের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। একটি ভারী যানবাহন গেলেই ধুলায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

শুধু ড্রেনের কাজে ধীরগতি নয়, সড়ক মেরামতের কাজেও লক্ষ্য করা গেছে কচ্ছপ গতি। নগরীর শামসুর রহমান রোড, বিকে রায় রোড, মিয়াপাড়া রোডসহ বেশিরভাগ সড়কের ওপর ইটের খোয়া বিছিয়ে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। বৃষ্টিতে ইটের খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়কে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে যানজট। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

নগরীর জোড়াগেট এলাকার সিএনবি কলোনির বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন স্বাধীন, হুমায়ুন কবীর ও শাহ আলম বলেন, আমাদের কলোনির পাশেই খুলনা-যশোর মহাসড়ক। এরপাশেই রয়েছে খালিশপুর সড়ক। সেই সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। সড়কের ধুলাবালি ঘরবাড়িতে উড়ে এসে পড়ছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনার সহকারী পরিচালক ফরহাদ হোসেন শিকদার বলেন, ‘অনেক সড়কে এখন আমাদের গাড়ি ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারছে না। কিন্তু উন্নয়ন তো দরকার। তাই উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের একটু মানিয়ে নিতে হচ্ছে।’

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, নগরীতে বর্তমানে ২১১টি ড্রেন, খাল ও স্লুইস গেটের নির্মাণকাজ চলছে। ৫৭১টি সড়কে পর্যায়ক্রমে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশকিছু সড়কের কাজ খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরে সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব উন্নয়ন কাজ ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ পিইঞ্জ বলেন, ওয়াসার সুয়ারেজ লাইন স্থাপনের কাজ চলতি বছর শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ৩০ মাস।

এ বিষয়ে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, বর্তমানে খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলমান। তবে সবার প্রচেষ্টা ছাড়া সুন্দর নগরী গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, কেসিসির সব সেবা অনলাইনে আনার চেষ্টা চলছে। নগরবাসী ঘরে বসেই সবধরনের সেবা পাবেন।

এসআর/জেআইএম