মহামারি করোনাভাইরাস, জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা মানুষ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব। সবমিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি ভয়াবহ। এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে ছিল ব্যাংক খাত। ডলারের চরম সংকট, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, রিজার্ভে টান পড়া নিয়ে বছরজুড়েই আলোচনা ছিল। রিজার্ভের হিসাব নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রশ্ন তোলাও ছিল আলোচনায়। তবে বছরের শেষ দিকে কয়েকটি ব্যাংকে ঋণ অনিয়মের অভিযোগ টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়।
Advertisement
তবে নানামুখী উদ্যোগে ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপর হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। নতুন বছরে খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকিং কমিশনকে পরামর্শও দিয়েছেন তারা। প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ কমাতে পারলেই আগামীতে ঘুরে দাঁড়াবে দেশের ব্যাংক খাত।
ব্যাংক খাতে যত আলোচনা-সমালোচনা—
খেলাপি ঋণ বাড়ছেই
Advertisement
ব্যাংক খাতে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়। সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। খেলাপিতে পরিণত হয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও (এনবিএফআইএস) ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে চার হাজার ৩১১ কোটি টাকা। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: সরবরাহ কম, খোলাবাজারে সর্বোচ্চ দামে ডলার
Advertisement
ডলারের বাজারে অস্থিতিশীলতা
দেশে মার্কিন ডলারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারের আমদানি দায় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রির পরিমাণ ৬০৫ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেখানে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কিনেছিল প্রায় ৭৯৩ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন: এক্সচেঞ্জ হাউজের সামনেই দালালচক্রের রমরমা ডলার ব্যবসা
এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স বাতিল
দেশের খোলাবাজারে মার্কিন ডলার নিয়ে কারসাজি করায় পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বিসমিল্লাহ মানি এক্সচেঞ্জ, অঙ্কন মানি এক্সচেঞ্জ ও ফয়েজ মানি এক্সচেঞ্জ। এছাড়া ৪২টি মানি এক্সচেঞ্জকে শোকজ করা হয়েছে। আরও ৯টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডলারকাণ্ডে ছয় এমডিকে শোকজ
মার্কিন ডলারের সংকটকে পুঁজি করে অনৈতিক সুবিধা নেয় ১২ ব্যাংক। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার মজুত করে বড় অংকের মুনাফা করে তারা। কোনো কোনো ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ৭৭০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের কারণে ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এমডিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরও পড়ুন: খেলাপি বৃদ্ধির শীর্ষে ২০ ব্যাংক
রিজার্ভে টান পড়া নিয়ে ‘শঙ্কা-সংশয়’
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এতে রিজার্ভের পরিমাণও দিন দিন কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪০০ কোটি (৩৪ বিলিয়ন) ডলারের আশপাশে ওঠানামা করছে। এ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি তহবিলে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৮০০ কোটি (৮ বিলিয়ন) ডলার। এ বিনিয়োগ করা অর্থ বাদ দিলে রিজার্ভ থাকে ২৬০০ কোটি (২৬ বিলিয়ন) ডলার, যা দিয়ে বর্তমানে নিয়ন্ত্রিত আমদানির মধ্যে সাড়ে চার মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ খরচ করার মতো রিজার্ভ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ কমার এ প্রক্রিয়াকে সরকার স্বাভাবিক বললেও এ নিয়ে নানান সমালোচনা শুরু হয়। সরকারবিরোধীরা রিজার্ভে টান পড়ায় বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হতে পারে বলেও বিভিন্ন সময় আশঙ্কা জানিয়ে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্সপ্রবাহ ঠিক থাকলে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।
আরও পড়ুন: রিজার্ভ এখন ৩৪.২১ বিলিয়ন ডলার
রিজার্ভ সংস্কারে আইএমএফের প্রস্তাব
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আসলে কত, রিজার্ভ গেলো কোথায়? এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বাংলাদেশের রিজার্ভ সংরক্ষণের হিসাব পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রিজার্ভের হিসাব রাখাসহ বেশকিছু সংস্কারের পরামর্শ দেয় আইএমএফ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাতে সায় দেয়। এর পরের দিনই অর্থমন্ত্রী জানান, আইএমএফ ও দেশীয় দুই হিসাবই থাকবে। এতে আইএমএফ থেকে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণপ্রাপ্তির পথও অনেকটা পরিষ্কার হয়।
সন্দেহজনক লেনদেন
দেশের আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম (এসএআর) হয়েছে আট হাজার ৫৭১টি। বিএফআইইউর ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। এরপরই তুমুল আলোচনায় আসে আর্থিক খাত। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন ছিল পাঁচ হাজার ২৮০টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এর সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৬৭৫টি। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেন দেড়গুণের বেশি বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ডলারের দাম বাড়ায় চাল আমদানিতে অনীহা ব্যবসায়ীদের
এলসিতে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং
দেশে এলসির ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং করা হচ্ছে। গত বছর এবং চলতি বছরের এলসির তথ্য যাচাইয়ের সময় এ বিষয়টি ধরা পড়ে। ওভার ইনভয়েসিং করা ১০০ এলসি বন্ধ করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা চাইলে পরে তা সংশোধন করে প্রকৃত দরে আমদানি করতে পারবেন।
‘অস্থিরতা’র মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন গভর্নর
ডলার সংকট, রিজার্ভ কমে যাওয়াসহ নানান সংকটে ব্যাংক খাতে যখন অস্থিরতা, তখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন গভর্নর নিয়োগ করে সরকার। নতুন গভর্নর হন আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি দেশের ১২তম গভর্নর হিসেবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হিসেবে যোগ দেন।
ঋণ পরিশোধে ঢালাও ছাড়
করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধে বেশ কয়েক দফা ‘বিশেষ ছাড়’ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার করোনার পাশাপাশি বন্যা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারও ছাড় দেওয়া হয়। নিয়মিত থাকা ঋণে এ বিশেষ সুবিধা মিলবে।
জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর প্রান্তিকে বড় ঋণের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা যথাক্রমে তার ৫০, ৬০ ও ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করলে আর খেলাপি হবে না। কৃষি ও সিএমএসএমই ঋণে যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা তার ২৫, ৩০ ও ৪০ শতাংশ পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকা যাবে। আর বন্যাকবলিত জেলায় কৃষিঋণ পরিশোধে এর চেয়েও বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ৮ ব্যাংক
প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ৮ ব্যাংক
ঋণ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ ছাড় দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। ছাড়ের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। ফলে ঋণের কিস্তি পুরোপুরি পরিশোধ না করেও খেলাপি হওয়া থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন গ্রাহকরা। তবুও কমছে না ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ। উল্টো আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। ফলে উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে ব্যাংক খাত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে আট ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার বেশি।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয়। সেখানে দেশে খেলাপির হার ৯ শতাংশের বেশি। একইসঙ্গে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) বা শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে অর্থসংস্থানে ব্যর্থ সরকারি-বেসরকারি খাতের অন্তত আটটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তাকে শোকজ
সংবাদকর্মীদের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ যুগ্ম পরিচালক থেকে নির্বাহী পরিচালক পর্যন্ত ১০ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশেও। এটা নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। পরে সাংবাদিকদের ওপর দেওয়া বিধিনিষেধ তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন: ভালো নেই ব্যাংক
বিলাসীপণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি
আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে বিলাসীপণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক। মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়। একইসঙ্গে অতি জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে বলা হয়।
সোনা নিলামে বিক্রির উদ্যোগ
বিভিন্ন সময় জব্দ করা সোনা নিলামে বিক্রি করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে দুই হাজার ১৭০ ভরি সোনা (২৫ দশমিক ৩১ কেজি) বিক্রি করার কথা জানানো হয়। লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা নিলামে অংশ নিয়ে এ সোনা কিনতে পারবেন বলেও জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংকগুলোয় ঋণ কেলেঙ্কারি
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে এস আলম গ্রুপের ১১টি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে চারটি প্রতিষ্ঠান নিয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠান নিয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রভাবশালী চক্রের যোগসাজশে গায়েবি প্রতিষ্ঠানে তিন ইসলামী ব্যাংক বিপুল পরিমাণ এ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন ও ব্যাংকগুলোর নথিপত্র অনুযায়ী, অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হয়।
তারল্য সংকটে ইসলামী ব্যাংক
ঋণ জালিয়াতির কারণে তারল্য সংকট দেখা দেয় ইসলামী ব্যাংকগুগলোতে। গ্রাহকরা আস্থা সংকটের কারণে টাকা তুলে নিতে থাকেন। চলমান তারল্য সংকট কাটাতে পাঁচটি ইসলামী (ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) ব্যাংককে তারল্য সহায়তা হিসেবে নগদ টাকা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের আমানত কমেছে এক লাখ ৪৬ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার
বাণিজ্য ঘাটতি
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এক হাজার ৯৩৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ১৮০ কোটি ডলারের পণ্য। এতে ৭৫৫ কোটি (৭ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৩ টাকা ৮৫ পয়সা ধরে) এর পরিমাণ ৭৮ হাজার ৩১০ কোটি টাকা।
রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমছেই
চলতি (২০২২-২০২৩) অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এর পরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিনমাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে রেমিট্যান্স। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে) এ অর্থ ১৭ হাজর ৬৩ কোটি টাকার বেশি।
দুই ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক
ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে গত ১২ ডিসেম্বর দুজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া আবুল কালাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন রিজার্ভ ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক। আর ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া মোতাসিম বিল্লাহ পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের পরিচালক। পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এ দুই কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের সবগুলো সভায় অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন: তিন ব্যাংকে ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম অনুসন্ধানে দুদক
বাংলাদেশ ব্যংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার কারণে দুই বছর গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে নানা সুবিধা পেয়েছিলেন। চলতি বছরও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভাবনা ছিল- ঋণ পরিশোধ না করলেও হয়তো চলবে। এ কারণে ব্যাংক খাতের মতো এ সেক্টরেও খেলাপি ঋণ দিন দিন বেড়েই চলছে।
সাবেক এ গভর্নর বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে বা আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখনই আরও কঠোর হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর না হলে এ খাতের খেলাপি ঋণ দিন দিন আরও বাড়বে। নতুন নতুন ছাড় দেওয়ার সিস্টেমও বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে খেলাপি আদায়ে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে হবে। খেলাপি আদায় বা কমে গেলেই ব্যাংক ও আর্থিক খাত ঘুরে দাঁড়াবে।
ইএআর/এএএইচ/এসএইচএস/এমএস