টানা তিনদিনের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। অতিরিক্ত পর্যটক আসায় ভিড় জমেছে এখানকার হোটেল-রিসোর্টগুলোয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, পর্যটকের তুলনায় হোটেল-রিসোর্ট কম এখানে। বেসরকারিভাবে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে সে তুলনায় সরকারিভাবে তেমন কিছুই গড়ে ওঠেনি।
Advertisement
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বেশকিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়, দল বেঁধে পর্যটকরা ঘোরাঘুরি করছেন এবং ছবি তুলছেন। এসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে কয়েকজন বিদেশি পর্যটককেরও দেখা গেছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই এখানে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। বড়দিন কেন্দ্র করে সরকারি বাড়তি একদিন ছুটি যুক্ত হওয়ায় সারাদেশের পর্যটন এলাকায়ই ছুটছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। ব্যতিক্রম ঘটেনি চায়ের রাজ্যেও।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দই শ্রীমঙ্গল। ৯০ শতাংশ পর্যটকই শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রাতযাপন করেন। বাকি ১০ শতাংশ পর্যটক জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় অবস্থান করেন।
Advertisement
শ্রীমঙ্গলের রামনগর রিসোর্টে কর্মরত হিরনময় সিং জাগো নিউজকে বলেন, বড়দিনের ছুটিতে এরই মধ্যে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ ৯০-৯৫ শতাংশ রিজার্ভ হয়ে গেছে।বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) থেকেই হোটেল রিসোর্টগুলোয় পর্যটকরা অবস্থান করছেন।
তিনি আরও জানান, যেকোনো ছুটিতেই পর্যটকদের ভিড় থাকে চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলে। আকর্ষণীয় সবুজ চা বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান শ্রীমঙ্গল।
পর্যটনসেবা সংস্থার সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য জাগো নিউজকে বলেন, ভালো গাইডের অভাবে এখানে পর্যটকরা এসে এলোমেলো হয়ে যান। গাইডলাইন দিয়ে সেবা দিলে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারেন। কম সময়ে অনেক স্পট দেখতে পারেন।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকিট কাউন্টার ম্যানেজার শাহিন মাহমুদ জানান, দু’দিন ধরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১২ শতাধিক পর্যটক টিকিট নিয়ে লাউয়াছড়া বনের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি কয়েকজন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।
Advertisement
শ্রীমঙ্গল পর্যটনসেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যেকোনো ছুটি কিংবা উৎসবে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটে। মৌললভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের বড় অংশ রাতযাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এছাড়া আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের ৯০ শতাংশ হোটেল-রিসোর্টে আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ২০০৮ সাল মৌলভীবাজার পর্যটন জেলা হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পর থেকে চাহিদা অনুযায়ী আবাসন গড়ে ওঠেনি। রাস্তাঘাটের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ পর্যন্ত যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে তার বেশিরভাগই করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সব সময় উন্নয়নের গল্প শোনান। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হচ্ছে না। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নিয়োজিত সিনিয়র ট্যুর গাইড সৈয়দ রিজভী ও সোলেমান হাসিব বলেন, আমরা যথাযথভাবে পর্যটকদের সেবা দিতে চেষ্টা করি। গত কয়েকদিন ধরে দেশি পর্যটক আসতে শুরু করেছে। তবে বিদেশি পর্যটক কম আসছেন। শুক্রবার ২-৩ জন বিদেশি পর্যটকের দেখা মিলেছে।
পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, টানা তিন দিনের ছুটিতে যথেষ্ট পরিমাণ পর্যটক আসছেন। এছাড়া শীতের সময় এমনিতেই পর্যটক বেশি থাকে। বিভিন্ন উৎসবে যে পরিমাণ পর্যটক আসেন সে পরিমাণ থাকার হোটেল-রিসোর্ট এখানে নেই। বেসরকারিভাবে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে সে তুলনায় সরকারিভাবে তেমন কিছুই গড়ে ওঠেনি।
তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা বা সহজে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের আরো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং আমরা আরো সুন্দরভাবে সাজাতে পারবো।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, পর্যটকদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলার প্রতিটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ট্যুরিজম বোর্ড এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। ট্যুরিস্টদের জন্য চমৎকার একটা পর্যটন স্পট আমরা উপহার দিতে পারি।
আব্দুল আজিজ/এফএ/এএসএম