আন্তর্জাতিক

নতুন বছরে যে ১০ বিষয়ে নজর থাকবে সবার

গত দুই বছর বিশ্ব পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি ছিল করোনাভাইরাস মহামারি। কিন্তু এখন তার মূল চালক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আসন্ন মাসগুলোতে গোটা বিশ্বকে ভূরাজনীতি, নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি বাজারে সংঘাতের অনিশ্চিত প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। থাকবে চীনের মহামারি পরবর্তী গতিপথের উদ্বেগও। বিষয়গুলোকে আরও জটিল করে তুলেছে এদের মধ্যকার নিবিড় যোগসূত্র।

Advertisement

দেখে নেওয়া যাক নতুন বছরে কোন ১০টি বিষয়ের ওপর নজর রাখতে হবে বিশ্বকে-

১. সবার চোখ ইউক্রেনে: বিদ্যুতের দাম, মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যের ঘাটতি— সবই নির্ভর করবে আগামী মাসগুলোতে সংঘাত পরিস্থিতি কেমন থাকবে তার ওপর। ইউক্রেনের অগ্রগতিতে রাশিয়া পিছু হটতে পারে। তবে হয়রানিমূলক অচলবস্থাই হতে পারে সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল। জ্বালানি ঘাটতি ও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পরিবর্তনে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন কমবে- এই আশায় সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করতে পারেন ভ্লাদিমির পুতিন।

আরও পড়ুন>> যে তিন উপায়ে শেষ হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

Advertisement

২. মন্দার চোখরাঙানি: ২০২৩ সালে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে পারে প্রধান অর্থনীতিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা পরিস্থিতি তুলনামূলক হালকা হলেও ইউরোপের অবস্থা হবে কঠিন। মার্কিন ডলারের মূল্যমান বৃদ্ধি দরিদ্র দেশগুলোকে এরই মধ্যে ক্ষতির মুখে ফেলেছে। নতুন বছরে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন>> মূল্যস্ফীতিই হবে ইউরোপের জন্য অভিশাপ

৩. জলবায়ু সংকট: জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশ যেহেতু দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানিতে ফিরছে, সে কারণে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট বাড়তে পারে। কিন্তু মধ্যমেয়াদে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমদানি করা হাইড্রোকার্বনের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরকে ত্বরান্বিত করবে। এতে বায়ু, সৌর, পারমাণবিক এবং হাইড্রোজেন জ্বালানি খাতও উপকৃত হবে।

আরও পড়ুন>> জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়তে পারে অভিবাসন

Advertisement

৪. চীন পরিস্থিতি: ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে জনসংখ্যার দিক থেকে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত। একদিকে জনসংখ্যা, অন্যদিকে অর্থনৈতিক গতি কমে গেলে চীন তার সর্বোচ্চ চূড়ায় এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার মানে অর্থনীতির আকারে যুক্তরাষ্ট্রকে আর ছাড়িয়ে যাওয়া হবে না চীনের।

আরও পড়ুন>> শি জিনপিংয়ের জন্য কঠিন বছর ২০২৩?

৫: বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র: যদিও মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে, তবু গর্ভপাত, বন্দুকসহ বিভিন্ন গরম ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের বিতর্কিত রায়ের পর দেশটিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজন বাড়তে পারে। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক প্রবেশ বিভাজনের আগুনে ঘি ঢালতে পারে।

আরও পড়ুন>> কোন পথে মার্কিন অর্থনীতি?

৬. সম্ভাব্য সংঘাত: ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে বিশ্ববাসীর গভীর মনোযোগ অন্যত্র সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। রাশিয়াকে দেখে চীন ভাবতে পারে, তাইওয়ানের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় হয়তো আর হবে না। হিমালয়ে ভারত-চীন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া তুরস্ক এজিয়ান সাগরে একটি গ্রিক দ্বীপ দখলের চেষ্টা করতে পারে।

আরও পড়ুন>> ২০২৩ সালে যুদ্ধ লাগতে পারে আর কোন কোন দেশে?

৭. জোট পরিবর্তন: ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে বৈশ্বিক জোটগুলোও সাড়া দিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দুই নতুন সদস্যকে স্বাগত জানাতে পারে ন্যাটো। মার্কিন সমর্থিত ইসরায়েলি জোটে (আব্রাহাম অ্যাকর্ড) সৌদি আরব যোগ দেবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। ক্রমেই গুরুত্ব বাড়তে থাকা অন্য জোটগুলোর মধ্যে রয়েছে কোয়াড, অকাস (চীনের উত্থান মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট) এবং আই২আই২ (ভারত, ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের জোট)।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক জোটকে ঢেলে সাজাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ

৮. পর্যটনের প্রতিশোধ: মহামারির মধ্যে দীর্ঘদিন যেহেতু বাইরে বেরোনো যায়নি, তাই লকডাউন-পরবর্তী ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে ভ্রমণে বেরোবে বহু মানুষ। নতুন বছরে ভ্রমণকারীদের ব্যয় ২০১৯ সালের ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার ছুঁতে পারে। অবশ্য এর পেছনে মূল্যস্ফীতির বড় অবদান থাকবে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের প্রকৃত সংখ্যা হতে পারে ১৬০ কোটি, যা ২০১৯ সালের মহামারি-পূর্ব ১৮০ কোটির চেয়ে কম। বিভিন্ন সংস্থা খরচ কমানোয় ব্যবসায়িক ভ্রমণও কমতে পারে।

আরও পড়ুন>> ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন কমবে, বাড়বে ভ্রমণ-বিনোদনে

৯. মেটাভার্স: ভার্চুয়াল জগতে কাজ ও খেলা করার ধারণা কি ভিডিও গেমের বাইরেও ধরা দেবে? ২০২৩ সালেই কিছু উত্তর মিলবে। অ্যাপল তার প্রথম হেডসেট সামনে আনলে এবং শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় মেটা তার কৌশল পরিবর্তন করবে কি না তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে এর ভবিষ্যৎ।

আরও পড়ুন>> ২০২৩ সালেই চালু হতে পারে ‘উড়ন্ত ট্যাক্সি’

১০. নতুন পরিভাষা: ‘পাসকি’ (passkey) শব্দটা কি কখনো শুনেছেন? কিংবা ‘ইমবি’ (yimby), ‘নিমবি’ (nimby)? ‘সিনফুয়েল’ (synfuel) কি জানেন তো? না জানলে জেনে রাখা ভালো। নতুন বছরে শব্দগুলো ঘুরেফিরে আপনার সামনে আসতে পারে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্টকেএএ/