দেশজুড়ে

ভবন পরিত্যক্ত : ক্লাস হচ্ছে অন্য স্কুলের মাঠে

জামালপুর সদরের দড়িহামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল ধরে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় বছর দুই আগে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী একটি হাইস্কুলে। কিন্তু হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা চলে আসলে বাকি ক্লাস নেয়া হয় স্কুল মাঠে। এতে করে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পাঠদান করতে পারছেন না শিক্ষকরা এবং দিন দিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের দড়িহামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৩০ সালে। এরপর ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে এলজিইডি বিদ্যালয়টির জন্য ৪ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মাণ করে দেয়। বিদ্যালয়ের ভবনটির একটি কক্ষ শিক্ষকদের অফিস হিসেবে আর বাকী ৩টিতে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। ২০১৪ সালে বিদ্যালয় ভবনটির ৪টি কক্ষের মধ্যে ৩টি কক্ষের ভীমে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে এলজিইডির একটি প্রতিনিধি দল পরির্দশন করে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এরপর থেকেই পার্শ্ববর্তী ডা. হানিফ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে ভোর ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ওই স্কুলে ক্লাস নেয়া হচ্ছে দড়িহামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। আর ভবন পরিত্যক্ত হওয়ার পর থেকেই প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। প্রতিদিন প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য ৪টি ক্লাসে ৪০ মিনিট করে দুই ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট এবং তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির জন্য ৬টি ক্লাসে ৪ ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানোর কথা। এছাড়াও দুই শিফটে ৩০ মিনিট করে ১ ঘণ্টা ক্লাস বিরতির নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়টির নিজস্ব শ্রেণি কক্ষ ব্যবহার করতে না পারায় সময় স্বল্পতার জন্য বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সাড়ে ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা বিরতিহীন পাঠদান করানো হচ্ছে।এছাড়াও ডা. হানিফ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলে আসলে গুরুত্বপূর্ণ পাঠদানের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাকি ক্লাস স্কুল মাঠে খোলা আকাশের নিচে নিতে হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ মনোযোগে চরম বিঘ্ন ঘটছে। অপরদিকে শীত আর গরমে খোলা আকাশের নিচে কষ্ট করে ক্লাস করলেও বৃষ্টির সময় সেই ক্লাসও নেয়া সম্ভব হয় না। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাথী আক্তার জানায়, স্কুলের ছাদ ফেটে যাওয়ায় আমরা শ্রেণি কক্ষে ক্লাস করতে পারছি না। আমাদের স্কুলের মাঠে ক্লাস করতে অনেক অসুবিধা হয়।অপরদিকে দড়িহামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন সমস্যার কারণে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে না অভিভাবকরা। যে কারণে প্রতি বছর কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টিতে ২২০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও ২০১৫ সালে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৯৭ জন এবং ২০১৬ সালে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ১৬৫ জন। আর এভাবে প্রতি বছর শিক্ষার্থী সংখ্যা কমতে থাকলে বিদ্যালয়টি অচল হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষকসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা।বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান জানান, দড়িহামিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অনেক পুরাতন স্কুল। এই স্কুলের ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেও সমাধান পাচ্ছি না। দড়িহামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাজেদা বেগম জানান, স্কুল ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় শ্রেণি কক্ষ সঙ্কটে আমরা অনেক অসুবিধার মধ্যে রয়েছি। শিক্ষার্থীদের ঠিকভাবে পাঠদান করানো যাচ্ছে না। প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত নতুন একটি স্কুল ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল আলীম জানিয়েছেন, দড়িহামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের বেহাল দশার অবস্থা ছবিসহ প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সরকার তৎপর রয়েছে। আশা করছি বরাদ্দ পেলেই দ্রুত এসব স্কুলের ভবন নির্মাণ করা হবে। শুভ্র মেহেদী/এফএ/এসএস/আরআইপি

Advertisement