বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে বর্বর পাকিস্তানীরা পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছিল। তারা চেয়েছিল কেবল এ দেশের উর্বর মাটি, মানুষ নয়। তাই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হায়েনার মত বাংলার নিরস্ত্র মানুষের ওপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা একাত্তরের নয় মাস ধরে নারী-পুরুষ, ধনী-গরীব, বুদ্ধিজীবী-শ্রমিক নির্বিশেষে নির্বিচারে বাঙালিদের হত্যা করে। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি সন্তানকে দুগ্ধপানরত মা’ও। এসময়ে ৩০ লাখ বাঙালি শহিদ হন। ধর্ষণের শিকার হন তিন লাখ নারী। গোটা বাংলাদেশকে ধ্বংস্তুপে পরিণত করা হয়।
Advertisement
এ হত্যাযজ্ঞে তাদের প্রধান দোসর ছিল যুক্তরাষ্ট। তারা পাকিস্তানের মানবতাবিরোধী সমস্ত অপকর্মকে চাপা দেয় বা মামুলি অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে। সেদিন এক দুর্ধর্ষ অপরাধী রাষ্ট্রের মানবতা ভুলুণ্ঠিত করাকে সমর্থনকারী দেশটি অবশ্য এখন ভোল পাল্টে ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রশ্রয় না পেলে পাকিস্তান সেদিন এ দেশে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চালাতে সাহস পেত না। দীর্ঘদিন ধরে ‘উদরে’ লালিত হিংস্র এক পশুর উন্মত্ত তাণ্ডব তারা সেদিন উপভোগ করেছে। আজ পর্যন্ত এ জন্য তাদের কোনরূপ অনুশোচনা করতে দেখা যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অবস্থান ছিল ভিন্ন। তারা পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। নাগরিকেদের চাপের কারণেই ভারত মহাসাগর থেকে সপ্তম নৌবহর প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। ৫২ বছর পর সেই যুক্তরাষ্ট্র অতীত বিস্মৃত হয়ে অন্যদের মানবতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে।
বর্বর পাকিস্তানীদের মনোভাব অবশ্য আগাগোড়া অপবির্তিত রয়েছে। একাত্তরের খুন-খারাবির জন্য তারা আজ পর্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করেনি। বরং যুদ্ধে পরাজয়ের জন্য একজন অপরজনকে দোষারোপ করছে। পাকিস্তানের সদ্য প্রাক্তন প্রধান সেনাপতি কামার জাভেদ বাজওয়া তার বিদায়ি ভাষণে একাত্তরে পরাজয়ের জন্য রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করেছেন। নাম উল্লেখ না করলেও রাজনীতিবিদ বলতে তিনি একত্তরে গণহত্যার প্রধান রূপকার জুলফিকার আলি ভুট্টোকেই বুঝিয়েছেন। কারণ কেবল ভুট্টোই একাত্তর সালে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সরব ছিলেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ভুট্টোর নাতি (বেনজীর ভুট্টোর ছেলে) ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ময়দানে নামেন। তিনি বলেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানের শোচনীয় পরাজয়ের জন্য রাজনীতিবিদ নয়, সেনাবাহিনী দায়ি’। কিন্তু তারা একবারও একাত্তরের গণহত্যার কথা উচ্চারণ করেননি।
Advertisement
ভারতে বন্দী ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যকে ফিরিয়ে আনতে পাকিস্তান সেদিন ভারতের ষংগে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ১৯৭২ সালে ভারতীয় অবকাশ নগরী সিমলায় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে পাকিস্তান দেশে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে মর্মে অঙ্গিকারনামায় স্বাক্ষর করে। যুদ্ধাপরাধীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার করা হবে শর্তেই ভারত ৯৩ হাজার পাকিস্তানী বন্দী সেনাকে মুক্তি দেয়। এদের প্রায় সবাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে খুন, গুম, লুট ও ধর্ষণের মত ন্যক্কারজনক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু দেশে ফিরিয়ে নিয়ে একজনকেও বিচারের সম্মুখীন করেনি পাকিস্তান। কারণ এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্যই ভুট্টো সাহেবরা তাদেরকে বাংলায় পাঠিয়েছিল। তাছাড়া বিচার করতে হলে প্রথমেই যার নাম আসবে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো। তিনিই ইয়াহিয়া খানকে পাকিস্তান ‘রক্ষায়’ ১০ লাখ বাঙালি হত্যার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যেটা অবশ্য ৩০ লাখে গিয়ে ঠেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবশ্য যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সেনাদের মুক্তিদানের বিরোধিতা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দাবি ভরতের উপেক্ষা করার উপায় ছিল না। কারণ হানাদার পাকিস্তানীরা বাংলাদেশ ও ভারত উভয় কমান্ডের কাছে যুগপৎ আতত্মসমর্পণ করে। বিপদ বুঝে ভুট্টো চতুরতার আশ্রয় নেন। তিনি তুরুপের তাস হিসেবে পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের দেশদ্রোহিতার অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন করার ঘোষণা দেন। পাকিস্তানে তখন ৪ লাখ বাঙালি আটক। তাদের মধ্যে সিনিয়র আমলা, সেনা-নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য এবং ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও শিক্ষবিদসহ নানা পেশার হাজার হাজার গুণি মানুষ ছিলেন। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ পুনর্গঠনে যাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা বঙ্গবন্ধু তীব্রভাবে অনুভব করছিলেন। তাছাড়া বাঙালিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের আত্মীয়-স্বজনরা বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এদিকে পাকিস্তান ভুয়া মামলা সাজিয়ে আটকে পড়া বাঙালিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারে বলে বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছিল। একারণে একপ্রকার নিরুপায় হয়ে বঙ্গবন্ধু বন্দী পাকিস্তানী সেনাদের মুক্তিদানে সম্মত হন। তবে এই মর্মে শর্তারোপ করা হয় যে পকিস্তান দেশে নিয়ে প্রথমেই তালিকাভুক্ত ১৯৫ জন দাগি যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে। তখন এই শর্তে সম্মত হলেও তারা এ যাবৎ একজন যুদ্ধাপরাধীরও বিচার করেনি।
সম্প্রতি পাকিস্তানকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য শাস্তিদানের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে ব্রাসেলস ভিত্তিক গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন- সাউথ এশিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফোরাম (এসডিএফ)। এক প্রতিবেদনে তারা মতপ্রকাশ করে যে ১৯৫১ সালে গৃহীত গণহত্যা অপরাধের প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশনের সুপারিশ মেনে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার উচিত পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করা। ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক পাউলা কাসাকা স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবসের মাধ্যমে গণহত্যার শিকারদের স্মরণ করা হয়।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যেই বেশকিছু অপরাধের জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। কিন্তু পাকিস্তান এখনও সেই অপরাধের দায় স্বীকার করেনি। কাউকে শাস্তিও দেয়নি মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য। এমনকি, কাউকে ক্ষতিপূরণও দেয়নি। এ জন্য প্রতিবেদনটিতে পশ্চিমা দুনিয়ার নীরবতাকে দায়ী করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানি গণহত্যার স্বীকৃতি না মেলায়ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে এসএডিএফ।
Advertisement
পাউলা বলেন, বাংলাদেশের বাইরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমরা আজ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রক্রিয়ার সাক্ষী। সিনেটর বেঞ্জামিন কার্ডিন (ডি-এমডি)’র উদ্যোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি এলি উইজেল গণহত্যা এবং নৃশংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণীত হয়েছে। আইনটি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এলি উইজেলের চেতনায় ভর করে তৈরি। এলি ছিলেন গণহত্যা এবং নৃশংসতার কড়া সমালোচক। আইনটি গণহত্যা প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব স্বার্থের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও মানবাধিকার রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা নেওয়ারও উপযুক্ত বলে আইনটির প্রশংসা করা হয়। পাউলা কাসাকা বলেন, ‘আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রে বা আন্তর্জাতিক স্তরে সিনেটর বেঞ্জামিন কার্ডিন দ্বারা চিত্রিত অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিরও উন্নতি এবং পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে।’
তার মতে, বেশির ভাগ মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক উদ্যোগেই সুশীল সমাজের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। প্রকৃত সুশীল সমাজ সাংগঠনিক, পারিবারিক বা গোষ্ঠীগত উদ্বেগ থেকে বা মানবিক নীতি থেকে উদ্ভূত। স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের একটি কাজে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মাথায় রাখা জরুরি।
এসডিএফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাস্তবতা আমাদের দেখিয়েছে কিভাবে তথাকথিত সরকারি, বেসরকারি সংস্থা বা দাতব্য হিসাবে মুখোশধারী সমতুল্য লাভজনক বা স্বার্থান্বেষী সংস্থাগুলি- বেশিরভাগ সুশীল সমাজকে দখল করেছে। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের মানবাধিকার। এধরনের সুশীল সমাজ বা মানবাধিকার সংগঠনই তথ্য গোপন করে অপরাধীদের সহায়তা করে’।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে আগের একটি লেখার। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নামে সংগঠনটি বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিষয়টিকে আড়াল করার চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠনটি কাদের টাকায় চলে তা নিয়েও অবশ্য সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনি প্রক্রিয়ায় এধরনের সংগঠনের সঙ্গে মুরগির খামারে শিয়ালের হানার সঙ্গেও তুলনা করেছেন পাউলা। এলির বার্তাকে মাথায় রেখে প্রতিবেদনটিতে দ্বিতীয় উদ্বেগের বিষয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়, অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত দায়মুক্তি প্রত্যাখ্যান।
যুক্তরাষ্ট্রে গৃহীত আইনটিতে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হবে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া শক্তিশালীকরণ এবং এর কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে নৃশংসতার ঝুঁকি শনাক্ত, প্রতিরোধ এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে অতীতের নৃশংসতার জন্য অপরাধমূলক জবাবদিহিতাসহ উপযুক্ত ক্রান্তিকালীন বিচার ব্যবস্থা সমর্থন করা’।
এসডিএফ-এর প্রতিবেদনে এখনও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিশ্ময় প্রকাশ করা হয়েছে । উল্লেখ করা হয়, ‘অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ রয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তাই এই ধরনের গণহত্যায় তাদের ভূমিকা স্বীকৃত। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেসব অপরাধী এখনও জীবিত আছে তাদের বিচার করা জরুরি’। মার্কিন কংগ্রেসে কংগ্রেসম্যান রো খান্না এবং কংগ্রেসম্যান স্টিভ চ্যাবোটের তোলা প্রস্তাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তারা দুজনই একাত্তরের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রস্তাব পেশ করেছেন।
এসএডিএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই প্রস্তাবটিকেই দলিল হিসাবে গ্রহণ করে বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবাধিকার ইস্যুতে ইউরোপীয় সংসদের একটি শক্তিশালী ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও পিছিয়ে রয়েছে। ২০১২ সালের যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুরূপ আইনকে অনুপ্রাণিত করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, ইউরোপীয় সংস্করণ খুবই দুর্বল। বিদেশ নীতিতে অতীতের নৃশংসতার জন্য অপরাধমূলক জবাবদিহিতা বিবেচনায় নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিছিয়ে রয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট গত ৩০ মে মানবতার বিরুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধ এবং সম্পর্কিত অন্যান্য অপরাধ সংক্রান্ত সংশোধনী প্রবিধান গ্রহণ করে। সেখানে গণহত্যা সম্পর্কিত প্রমাণের সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং সংরক্ষণের জন্য বিধান রাখা হয়। তবে সেটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এলি উইজেল গণহত্যা এবং নৃশংসতা প্রতিরোধ আইনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনটি তাদের সম্পূর্ণ বৈদেশিক নীতির পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট নির্বাহী সংস্থা কেন্দ্রিক বলে মন্তব্য করা হয়েছে। সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, আইনটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও। প্রতিবেদনটির মতে, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অতীতের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে আইনের পূর্ণ শাসন পদ্ধতি থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ‘ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট’ এবং এর ইউরোপীয় সংস্করণ অনুসরণ করা আইনগুলি গভীরভাবে অপব্যবহার করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।
২০২২ সালেও গণহত্যা এবং এই অপরাধের প্রতিরোধে অপরাধের শিকারদের স্মরণ ও মর্যাদার আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় মঞ্চে অতীতের নৃশংসতার জন্য সর্বজনীন অপরাধমূলক জবাবদিহির দাবিতে একটি আন্দোলন শুরু করারও দাবি তুলেছে।
পাকিস্তান কিন্তু আজও একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে অপরাধী সাব্যস্ত করার পরও আন্তর্জাতিক দুনিয়া রহস্যজনকভাবে আজও নিরব। অবশ্য একাত্তরের গণহত্যাকে প্রচারের আলোয় আনার উদ্যোগ নিয়েছে এসএডিএফ। সেইসঙ্গে সাম্প্রতিককালে সংঘটিত অন্যান্য গণহত্যা এবং নৃশংসতার সঙ্গে একসঙ্গে একাত্তরের গণহত্যারও বিচারের দাবি উঠছে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
এইচআর/এএসএম