দেশজুড়ে

এখনো টিকে আছে দোয়াত-কলম

ছোট বেলায় বিচুলি (খড়) পুড়িয়ে ছাই গুঁড়ো করে তাতে জিবলি গাছের আঠা মিশিয়ে কালি তৈরি করতাম। লেখার জন্য ব্যবহার করতাম বাঁশের কঞ্চি। সাইজ অনুযায়ী কঞ্চি তেরচা করে কেটে, এক মাথায় সুচালো করে কলম বানানো হতো। তখন সেটি কালিতে চুবিয়ে তাল পাতার ওপর লিখতাম। এরপর বাজারে কাগজ আসলো, তখন পাখির পালক দিয়েও লিখেছি। বাজারে যখন ফাউন্টেন পেন (দোয়াত-কলম) আসলো, তখন লেখার অভিজ্ঞতা পরিবর্তন করতে হয়েছে। এরপর পেয়েছি বল পয়েন্ট কলম।

Advertisement

এভাবেই কলম নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে নিজের এই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন সাতক্ষীরার প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক মো. অলিউল্লাহ।

তার মতোই কলম, কালি আর তাল পাতা ব্যবহার করে লেখা শেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ছোটবেলায় বাবা কঞ্চি দিয়ে কলম তৈরি করে দিতেন। সঙ্গে কালি হিসেবে ব্যবহার করতাম কয়লার গুঁড়ো, আর আঠা হিসেব ব্যবহার করতাম একটি আঠালো গাছের কষ। এরপর আলগা নিব, ঝরণা কলম ব্যবহার করে লিখতাম। পরে বাজারে শিষ কলম, বল পয়েন্ট কলম আসলো।

সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির নেতা সাবেক শিক্ষক আনিছুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ছোটবেলায় ফাউন্টেন পেন কলম দিয়ে লেখা শুরু করেছি। বল পয়েন্ট কলম আসার পর সেই কলমে আর লেখা হয়নি। সেসময় কলমের কালি ছিল দুই রঙের, কালো ও লাল। পরে কালোর পাশাপাশি নীল। শেষে সবুজ কালি বেরোয়। যতদূর মনে পড়ে, তখন নামকরা কলম ছিল পাইলট, আর কালি ছিল পেলিকেন, হিরো, কমেট, হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, এভারেডি ইত্যাদি।

Advertisement

তিনি বলেন, আরও এক ধরনের কালির ট্যাবলেট পাওয়া যেত। এক দোয়াত পানির মধ্যে ওই ট্যাবলেটের একটা দিয়ে ঘুঁটে নিলেই এক দোয়াত কালি হয়ে যেত। আধুনিক যুগে সেসব এখন স্মৃতি। তবে এখনো বাজারে কালি ও কলম কিনতে পাওয়া যায়। আমি শখ করে কয়েকটি কলম ও কালি সংগ্রহে রেখেছি।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষক অলিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ছোটবেলায় ফাউন্টেন ও বল পয়েন্ট দুটোই পেয়েছি। সেসময় লিখতে বেশ সময় লাগত। তবে হাতের লেখা অনেক ভালো হতো। কলমের কালি শেষ হয়ে গেলে কলম রিফিল করা যেত। পরে শিষসহ বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করতাম। শিষের কালি শেষে পরিবর্তন করে নিতাম। শিষ ছাড়াও ওয়ান টাইম কলম এখন বেশ জনপ্রিয়। এখন নামিদামি কোম্পানির আরও ভালো ভালো কলম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে দোয়াত কলমের স্মৃতি সবসময় মনে পড়ে।

সাতক্ষীরার সবচেয়ে পুরাতন স্টেশনারি দোকান জনতা পেপার্স হাউজের মালিক মো. কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ৩০ বছর ধরে কলম বিক্রি করছি। এখনো বাজারে ফাউন্টেন পেনের (দোয়াত-কলম) চাহিদা রয়েছে। দলিল লেখকরা ভলিউম লেখার কাজে এই কলমের ব্যবহার করেন। এছাড়া সাতক্ষীরা কোর্টের অনেক সিনিয়র আইনজীবী, কবি, সাহিত্যিকরা এই কলমে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অনেকে শখ করে এই কলমে লেখেন।

তিনি আরও বলেন, ফাউন্টেন কলম আগের চেয়ে অনেক আধুনিক হয়েছে। কালি ভরার পর কালি পড়ার ভয় নেই। এছাড়া নিবটি আরও মজবুত করা হয়েছে। আমার দোকান থেকে প্রতিমাসে এখনো কয়েকশ কলম ও কালি বিক্রি হয়। একটি কলম কয়েকবছর ব্যবহার করা যায়। এর বর্তমান দাম ৬০ টাকা, কালির দামও ৬০ টাকা।

Advertisement

আহসানুর রহমান রাজীব/এমআরআর/এএসএম