নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর শাখা ফকিরনি নদীর পুনঃখনন কাজ শুরু হয়েছে। এতে সারা বছরই এ নদীতে পানি থাকবে। যা ইরি-বোরো ও রবিশষ্য উৎপাদনে যেমন সুবিধা দিবে তেমনি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাবে এলাকাবাসী। এমনকি নদী ভাঙনের দুশ্চিন্তা থেকেও তারা মুক্ত থাকবে।
Advertisement
মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর শাখা ফকিরনি নদী। এ নদীতেই এক সময় ব্যবসায়ীরা ব্যবসার কাজে পাল তোলা নৌকা নিয়ে চলাচল করতেন। এই নদীর পানি ফসল উৎপাদনসহ গৃহপালিত পশুদের গোসল, হাঁস পালন, মাছ শিকার ও সাংসারিক কাজে ব্যবহার করতেন আশপাশের বাসিন্দারা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে পলি পড়ে ও নদীর তলভাগ ভরাট হয়ে নদী তার নাব্যতা হারায়। বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ মাস পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে এটি প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। নদী থেকে কৃষিকাজে ফসল উৎপাদন ও অন্যান্য কাজে পানি না পাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হতো এলাকাবাসীর। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে অল্প পানিতে বাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হওয়ার পাশাপাশি ভেঙে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো। রাত জেগে পাহারা দিতে হতো এলাকাবাসীকে। অনেক সময় বেঁড়িবাধ ভেঙে কিছু এলাকা প্লাবিতও হতো। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে হতো এলাকাবাসীকে।
এ অবস্থায় নদীটির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়ে) (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় খনন কাজ করা হচ্ছে। নদী খননের কাজটি করছে ঢাকার ‘ইমটিআই-ইউবি (জেবি)’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
নুরুল্যাবাদ গ্রামের বয়জেষ্ঠ্য ঈসমাইল হোসেন ও শহীদুল ইসলাম বলেন, এক সময় এ নদী দিয়ে পাল তোলা নৌকা চলত। নদী খনন হওয়ার পর কোনো সংস্কার না হওয়ায় দীর্ঘ বছর পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। এতে বর্ষার সময় নদীতে সামান্য পানি হলেই উচড়ে পড়ার উপক্রম হয়। আমরা যারা নদী পাড়ের বাসিন্দা ওই সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকি। আতঙ্কে সারা রাত জেগে পাহারা দিতে কখন কী হয় এই ভয়ে।
Advertisement
নদীর খনন কাজ হচ্ছে এতে তীরে পানির চাপ কম হবে এবং নদীতে সারা বছরই পানি পাওয়া যাবে। এতে করে কৃষি কাজে পানি সেচ বিশেষ করে ইরি-বোরো ও রবিশষ্য উৎপাদনে সুবিধা হবে বলে যোগ করেন তারা।
গোয়াল মান্দা গ্রামের মকবুল গোসেন বলেন, বর্ষায় যখন আত্রাই নদীতে পানি থৈ থৈ করে তখন বেড়িবাঁধে প্রচুর চাপ পড়ে। নদী খননের ফলে গভীরতা বাড়ছে, এতে পানির চাপ কম হবে। ইতোপূর্বে বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের বাড়িঘর ডুবে গেছে। আশা করছি এখন আর সেই চিন্তা থাকবে না। আমাদের দুশ্চিন্তাও কমবে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান খান বলেন, আত্রাই নদীর একটি শাখা ফকিরনি নদী। নওগাঁর অংশে আত্রাই নদীর ত্রিমোহনী থেকে ২৩ মিটার প্রস্থ ও দুই মিটার গভীর করে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার দূরুত্বে হুলিখালি স্লুইচ গেট পর্যন্ত পুনঃখনন কাজ করা হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে পানি থাকে না। এ কাজ সম্পন্ন হলে নদীতে যেমন পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে তেমনি নদীর বাঁধ বা তীর ভাঙন অনেকটা রোধ হবে। সেইসঙ্গে মৎস্যজীবীরা মাছ শিকার করাসহ কৃষি কাজে সেচ সুবিধা বাড়বে। এছাড়া ভুগর্ভস্থ পানির চাপ কমবে। জলবায়ুর যে বিপর্যয় তা অনেকাংশে কমে আসবে।
আব্বাস আলী/এফএ/এএসএম
Advertisement