সময়ের সঙ্গে সারা বিশ্বে মানুষের কাপড়-চোপড় কেনার অভ্যাস বেড়েছে। তারা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জামাকাপড় কেনে, কিন্তু পরিধান করে কম। ফলে প্রতি সেকেন্ডে এক ট্রাক পুরোনো কাপড়-চোপড় ভর্তি আবর্জনা জমা হচ্ছে ময়লার ভাগাড়গুলোতে। সুতরাং এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে ফ্যাশনিস্তারা, বিশেষ করে তরুণরা, পরিবেশের ওপর পোশাক শিল্পের প্রভাব নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে।
Advertisement
২০২৩ সালে এ ধরনের ফাস্ট ফ্যাশন বা ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে নিত্য-নতুন পোশাক তৈরির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া আরও বাড়বে। এর পরিবর্তে রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহার, পুনঃবিক্রি ও ভাড়ার মাধ্যমে কম আইটেম থেকে বেশি মুনাফা অর্জনের ‘বৃত্তাকার’ ব্যবসায়িক মডেলে ঝুঁকতে চাপ বাড়বে।
নতুন বছরে অনেক ব্র্যান্ডই তাদের পোশাক সংস্কার সেবা জোরদার করবে। এতে গ্রাহকদের ক্ষতিগ্রস্ত পোশাকগুলো ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে সংস্কারের মাধ্যমে ফের ব্যবহার করতে উত্সাহিত করা হবে।
বিশ্বের বৃহত্তম লাক্সারি গ্রুপ এলভিএমএইচ এরই মধ্যে অংশীদারদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে তারা ‘অত্যাধুনিক’ সংস্কার সেবা ঘোষণা করবে৷ হুগো বসের নতুন রিসেল প্ল্যাটফর্মে শিগগির পোশাক সংস্কারের ব্যবস্থা যোগ হবে। টমি হিলফিগারও তাদের সংস্কার সেবার মাত্রা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। আর্ক’টেরিক্স, বার্বর, গান্নি, পাতাগোনিয়া, ইউনিকলোসহ বহু ডিজাইনারের এমন সেবা চালু রয়েছে আগে থেকেই। ২০২৩ সালে আরও অনেকে একই পথ অনুসরণ করবে।
Advertisement
করোনাভাইরাস মহামারি এই প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘উন্নত’ পোশাক সংস্কারকারী সংস্থা মেক নু’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা লরা জনসন বলেন, ‘আমাদের ওয়াড্রবে শুধু সংস্কার করলেই পরা যায় এমন বহু পোশাক বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে... মানুষকে এটি বোঝার জন্য সময় করে দিয়েছে লকডাউন।’
জাপানের ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প কিন্তসুগি। এতে মৃৎপাত্রের ফাটলগুলো বিশেষ প্রক্রিয়ায় স্বর্ণের গুঁড়ো দিয়ে পূরণ করা হয়। মেক নু’র কাজও প্রায় একই। তারা পোশাকের ছেঁড়াফাটাগুলো দারুণ সব নকশায় সাজিয়ে ও সারিয়ে তোলে।
এ ব্যবসার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বুঝতে পেরে বিনিয়োগকারীরা দু’হাতে অর্থ ঢালতে শুরু করেছেন। ‘সোজো’ নামে লন্ডন-ভিত্তিক একটি অ্যাপ পোশাক ফেরি করার জন্য চালকের ব্যবস্থা করে থাকে। ২০২২ সালে এটি প্রি-সিড তহবিল হিসেবে ২২ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। ‘সেভ ইওর ওয়ারড্রোব’ নামে আরেকটি স্টার্টআপ প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩০ লাখ ডলারের নিশ্চিয়তা পেয়েছে। সংস্থাটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় অনলাইন কাপড় বিক্রেতা জাল্যান্ডোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। ২০২৩ সালের মধ্যে পুনঃবিক্রি ও পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে কমপক্ষে পাঁচ কোটি পোশাকের আয়ু বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে জাল্যান্ডো।
‘দ্য রিস্টোরি’ নামে আরেকটি প্ল্যাটফর্ম প্রাথমিকভাবে ৪৮ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে। এটি সেলফ্রিজ-হার্ভে নিকোলসের মতো বৃহৎ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোর পাশাপাশি অনলাইন বুটিক ফারফেচের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
Advertisement
তবে সংস্কার ও পুনর্ব্যবহারে বেশি জোর দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, ফাস্ট ফ্যাশনের দাপট খুব শিগগির কমে যাবে। সমীক্ষা বলছে, এর বাজারের আকার ২০২০ সালের ৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০৩০ সালের মধ্যেই ২০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে। এরপরও ২০২৩ সালে অনেকেই হয়তো ওয়াড্রবে এমন কাপড়-চোপড় খুঁজবেন, যেগুলোকে নতুন প্রাণ দেওয়া যেতে পারে।
১৯ শতকের বিখ্যাত ব্রিটিশ শিল্প সমালোচক জন রাসকিন লিখেছেন, ‘সময়ের স্বর্ণালী দাগ’ই ভবনগুলোকে মহিমান্বিত করে তোলে। পোশাকের ক্ষেত্রেও তেমনটি হতে পারে। সংস্কারের মাধ্যমে পুরোনো পোশাক হয়ে উঠতে পারে নতুনের চেয়ে অনেক বেশি দামি, সেই সঙ্গে পৃথিবীর জন্যেও উপকারী।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্টকেএএ/