কৃষি ও প্রকৃতি

মধুু চাষে সাবলম্বী হচ্ছে রাজশাহীর তরুণরা

রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার হাতনাবাদ গ্রামের যুবক সুমন আলী। একসময় ছিলেন কাঠমিস্ত্রী। এরপর ২০১৩ সাল থেকে সরিষা ক্ষেতে মধুচাষ করছেন। সরিষার মাঝে মৌমাছির সাহায্যে মধুচাষ করেই সুমন এখন সাবলম্বী। মধুচাষ করেই নিজের বাড়িটিও পাকা করেছেন। এবারও আশা করছেন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার মধু বিক্রির।

Advertisement

মধুচাষি সুমন জানান, রাজশাহীর বিসিক এলাকা থেকে মধু সংগ্রহরে বক্স তৈরি করে আনেন। এরপর মধু সংগ্রহের ট্রেনিং নিয়ে চাষ করা শুরু করেন। এবারও ৫০টির বেশি বক্স বসিয়েছেন। গড়ে প্রতি সপ্তাহে তিনি আড়াই মন মধু সংগ্রহ করছেন।

সুমন বলেন, আমাদের এখনকার উৎপাদিত মধুগুলো ২১ থেকে সাড়ে ২২ গ্রেডের হওয়ায় স্থানীয় ও মার্কেটে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের সব খরচ বাদ দিয়ে গড়ে প্রতি মৌসুমে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার মধু বিক্রি হয়।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের উত্তরপাড়ায় মৌচাষ করছেন মোঃ মমিন, নারায়ণ মন্ডল, হৃদয় মন্ডল, রুবেল, আলিম। মৌচাষি মোঃ মমিন বলেন, নাটোর এলাকা থেকে রানি মৌমাছি সংগ্রহ করে এবার ২০টি বক্সে মধু চাষ করছি। প্রতিটি বক্সে ৫টি করে চাক আছে। এগুলো থেকেই গতবার ভালো আয় হয়েছে। এবারও ভালো লাভের আশা করছেন তারা।

Advertisement

মমিন বা সুমনই নয়, রাজশাহীতে এখন অন্তত ৫০জন তরুণ মধুচাষি মধু চাষ করছে। কম খরচে মধু উৎপাদন করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। এতে করে ভাগ্য বদল ও সাবলম্বী হচ্ছেন বেকার তরুণরা। একদিকে বাণিজ্যিক এই মধু আহরণে মৌ চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন পাশাপাশি বাড়ছে সরিষা উৎপাদন।

রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রাজশাহীতে এবার সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে এবার সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ২৫০ হেক্টর। সেখানে রাজশাহী জেলাতে সরিষা চাষ হয়েছে ৪২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে ৬৭ হাজার ৫০০ মেট্রিটন সরিষা উৎপান হতে পারে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। রাজশাহীতে এবার প্রথমিক পর্যায়ে ৩ হাজার ৪০২টি মধু চাষের বক্স স্থাপন করা হয়েছে। এসব বক্স থেকে ৪০ হাজার ৮০০ কেজি মধু উৎপাদন হতে পারে। এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ২৩০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার মৌ চাষি এসে মধু সংগ্রহ করছেন। এদিকে মৌ চাষ শুরু হওয়ার পর সরিষার ফলন বিঘা প্রতি ৩ থেকে ৪ মণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার বাসুদেবপর বিলে মধু সংগ্রহ করছেন মজিদ আলী। তার বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুরে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রতিটি বক্স থেকে সপ্তাহে প্রায় ৩ থেকে ৫ কেজি মধু উৎপাদন হয়। সরিষা চাষের সময় আমাদের মূল সময়। এই সময়েই বেশি মধু উৎপাদন হয়। এছাড়া লিচু, ধনিয়া ও কালোজিরা চাষের সময় মধু উৎপাদন হয়।

মজিদ বলেন, আমার গড়ে প্রতি কেজি পাইকারি দরে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করি। আর স্থানীয়দের কাছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি।

Advertisement

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে আমরা সরিষা চাষ বাড়িয়েছি। কারণে মৌ বক্সও বাড়ছে। অনেক চাষিরা জমির পাশে বসতে দিতেন না। আমরা তাদের মটিভেশন করেছি। মধু চাষের কারণে সরিষারও ফলন ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এটি একটি উইন উইন গেম। তিনি বলেন, প্রতি বছরই মধু চাষির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণরা। কিছু প্রবীণ মধু চাষিও আছে। কম খড়ছে লাভজনক এই চাষের কারণে এতে তরুণরা ঝুঁকছেন এবং সাবলম্বী হচ্ছেন।

কেএসকে/জেআইএম