অবশেষে সুন্দরবনে শুরু হয়েছে বাঘ শুমারি কার্যক্রম। এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ১৫ ডিসেম্বর। দেড় বছর পর জানা যাবে বাঘ গণনার ফলাফল। এছাড়া আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বাঘ শুমারি বা গণনার জন্য সুন্দরবনের ৬৬৫ স্পটে ক্যামেরা বসানো হবে।
Advertisement
সর্বশেষ ২০১৮ সালে সুন্দরবনে বাঘ শুমারি হয়। সেই গণনাতে ১১৪টি বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়। বর্তমানে সুন্দরবনে আগের চেয়ে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য চলতি বছরের ২৩ মার্চ সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি চলতি বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, চলতি মাসের ১৫ ডিসেম্বর সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের কালাবগি ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন খালগুলোর দুই পাশে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বাঘ শুমারি বা গণনার জন্য সুন্দরবনের ৬৬৫ স্পটে স্থাপন করা হবে জোড়া ক্যামেরা। ২০২৪ সালের জুন মাসে বাঘ গণনার ফলাফল জানা যাবে।
Advertisement
এই কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের আওতায় এবার বাঘ শুমারির পাশাপাশি হরিণ ও শূকর শুমারি করা হবে। ক্যামেরা ট্রাপিং ও খাল সার্ভের মাধ্যমে চলবে এই শুমারি। ১৫ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ খালের দুইপাশে জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। জরিপের মাধ্যমে বাঘের গতিবিধি ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করার কাজ শুরু করা হচ্ছে। আগামী ১ জানুয়ারি শুরু হবে ক্যামেরা বসানোর কাজ। দেড় বছর ধরে ছবি তুলবে এই ক্যামেরা। এরপর ছবি পর্যালোচনার মাধ্যমে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একটি টেকনিক্যাল কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সুন্দরবনের মোট ৬৬৫টি স্পটে ক্যামেরা বসানো হবে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি, খুলনা রেঞ্জে ১৪০টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৮০টি, চাঁদপাই রেঞ্জে ১৪৫টি। প্রতিটি গ্রিডে এক জোড়া ক্যামেরা বসানো হবে। সবমিলিয়ে ৬৬৫ গ্রিডে ১ হাজার ৩৩০টি ক্যামেরা বসানো হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর শুরু হচ্ছে বাঘ শুমারি। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনের ৬৬৫টি স্থানে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। প্রতি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এসব ক্যামেরা দিয়ে বাঘের গতিবিধি ও সংখ্যা নিরূপণ করা হবে।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তত দুটি বাঘের গলায় স্যাটেলাইট কলার স্থাপনের মাধ্যমে মনিটরিং, অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টাওয়ার নির্মাণ, আগুন নেভানোর যন্ত্রাংশ, ড্রোন কেনা হবে। এ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ৫০০ জনবলের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পাশাপাশি ৬০ কিলোমিটার এলাকা নাইলনের বেড়ার মাধ্যমে বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, এছাড়া সুন্দরবনে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালে আইলা ও ২০২১ সালে ইয়াসের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বনের পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণী আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণী ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কিল্লা স্থাপন করা হবে।
আলমগীর হান্নান/এমআরআর/এএসএম