মুমিনের জন্য রাতের ঘুমকে করেছেন প্রশান্তির মাধ্যম। এটি ইবাদতও বটে। যদি কোনো ব্যক্তি ইসলামের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ঘুমায় তার সে ঘুমও ইবাদতে পরিণত হবে। তাই রাতে ঘুমের আগে যেসব আমল করবেন, তাহলো-
Advertisement
১. রাতে আগে আগে ঘুমানো
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৮৭৯)
২. উন্মুক্ত স্থানে না ঘুমানো
Advertisement
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমাল, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই।’ (আবু দাউদ ৫০৪১)
৩. নিরাপদে ঘুমানোর উপদেশ
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে নিরাপদে ঘুমানোর জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যেগুলোর ওপর আমল করলে যেমন সুন্নত আদায়ের সওয়াব পাওয়া যাবে পাশাপাশি বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা রাতে পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রেখো। আর সাঁঝের বেলা তোমাদের বাচ্চাদের ঘরে আটকে রেখো, কারণ এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও করে। ঘুমানোর সময় বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্বালিত সলতেযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং ঘরবাসীকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়।’ (বুখারি ৩৩১৬)
Advertisement
৪. কোনো ঘরে একা না ঘুমানো
কোনো ঘরে একা ঘুমানোর ব্যাপারে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো ঘরে একাকী রাত যাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ ৫৬৫০)
৫. রাতে খাবার ঢেকে রাখা
রাতের বেলা ঘুমানোর আগে খাবারের পাত্র ঢেকে রাখা। যদি তা না ঢাকা হয় তবে তাতে ইঁদুর, তেলাপোকা বা অন্য কোনো পোকা এসে হানা দিতে পারে। ফলে তা থেকে ছড়াতে পারে মারাত্মক রোগ।
৬. পবিত্র হয়ে ঘুমানো
রাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয়ে ঘুমানো সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান রাতে আল্লাহকে স্মরণ করে অজু শেষে ঘুমায় এবং রাতে জাগ্রত হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো কল্যাণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তা দান করেন। ’ (আবু দাউদ ৫০৪২)
৭. ঘুমানোর আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। তারপর এই দোয়া পড়বে-
بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ
উচ্চারণ : ‘বিসমিকা রাব্বি ওয়াদাতু ঝাম্বি ওয়া বিকা আরফাউহু।’
অর্থ : হে আমার রব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩২০)
৮. ডান পার্শ্বে ঘুমানো
ডান কাতে ঘুমানোর মানে এই নয় যে সারা রাত আর বাঁ দিকে কাত হওয়া যাবে না। তবে ইসলামে সব ভালো কাজে যেহেতু ডানকে প্রাধান্য দিতে বলেছে, তাই আমাদের ঘুমের বেলায়ও ডান দিক থেকে শুরু করা উত্তম।
৯. দোয়া পড়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি শোয়ার পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা নেমে আসবে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৬)
তাই ঘুমানোর আগে ছোট এই দোয়াটি পড়া-
بِاسمِكَ اللَّهُمَّ اَمُوْتُ وَ اَحْيا
উচ্চারণ : ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনর্জাগ্রত হব।’
১০. সুরা ইখলাস, নাস ও ফালাক পড়া
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন। ’ (বুখারি ৫০১৭)
১১. আয়াতুল কুরসি পড়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। ’ (বুখারি ২৩১১)
১২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া
কোনো ব্যক্তি ঘুমানোর আগে এ দুই আয়াত পড়লে তা তাদের গোটা রাতের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি ৫০৪০)
১৩. সুরা মুলক পড়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো- তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)। (তিরমিজি ২৮৯১) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সুরা না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না।’ (তিরমিজি ২৮৯২)
এমএমএস/এএসএম