স্বাধীনতার ৫১ বছরেও হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে বধ্যভূমি। কয়েকটি পিলার দিয়ে কেবল একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা আছে। এখনো গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে। দ্রুত এ বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণসহ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, সুশীল সমাজ, শায়েস্তাগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের স্বজনরা।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার এক শোকাবহ স্মৃতিচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে আছে উপজেলার রেল জংশনের পাশের এ বধ্যভূমিতে। এখানে পাকবাহিনী লালচান্দ চা-বাগানসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১১ জনকে হত্যা করে গণকবর দেয়। এরা হলেন- রাজকুমার গোয়ালা, লাল সাধু, কৃষ্ণ বাউরী মেম্বার, দিপক বাউরী, মহাদেব বাউরী, অনু মিয়া, সুনীল বাউরী, নেপু বাউরী, রাজেন্দ্র রায়, গৌর রায় ও ভুবন বাউরী। এর মধ্যে শুধু অনু মিয়াই মুসলিম ধর্মের ছিলেন। শহীদ সবাই চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা বাগানের বাসিন্দা ছিলেন।
স্থানীয়রা বলছেন, এ শহীদদের যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া বাঙালি জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। সে বিবেচনায় শায়েস্তাগঞ্জের এ বধ্যভূমি উপযুক্ত মর্যাদা ও সম্মান পাওয়া থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমি রেললাইন সংলগ্ন হওয়ায় রেললাইন অতিক্রম করা ছাড়া সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়ক থেকে বধ্যভূমিতে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি পাকা সড়ক নির্মাণ করা হলেও ওই সড়কটি এখন সিএনজি অটোরিকশার দখলে আছে। এ সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচলের কোনো পরিবেশ নেই।
Advertisement
বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা তার নিজস্ব অর্থায়নে ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বধ্যভূমিতে গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। শুধুমাত্র একটা সাইনবোর্ড স্থাপন করা আছে। আর কয়েকটা পাকা পিলার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৫১ বছরে এখনো অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে বধ্যভূমিটি।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে এ বধ্যভূমি স্বীকৃতি পেয়েছে এবং গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বধ্যভূমি একটি আবেগ, ইতিহাসের অংশ, এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবার। বর্তমানে ওই বধ্যভূমি রক্ষণাবেক্ষণ করছে পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। অচিরেই এর উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌর প্রসাদ রায় জাগো নিউজকে বলেন, বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। মুক্তিযুদ্ধে দেশের মানুষ আত্মাহুতি সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে জানাতে বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ ও আধুনিকায়নের জন্য দাবি জানাই।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈম জাগো নিউজকে বলেন, বধ্যভূমি সংরক্ষণে আমরা এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জায়গা নিয়ে মামলা জটিলতার কারণে বধ্যভূমিটির উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। আশা করছি দ্রুত মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। একই সঙ্গে দেশের অন্য উপজেলার মতো শায়েস্তাগঞ্জেও বধ্যভূমির উন্নয়ন হবে।
Advertisement
কামরুজ্জামান আল রিয়াদ/এসজে/জেআইএম