শিক্ষা

স্কুলব্যাগ কিনতেও বাড়তি খরচ

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা। মৌচাক মার্কেটে কয়েকটি ব্যাগের দোকান ঘুরে সন্তানকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন ইমরান হোসেন। এসেছিলেন স্কুলব্যাগ কিনতে। তবে পছন্দের সঙ্গে মেলেনি সাধ্য। গন্তব্য ফের তালতলা মার্কেট, যেখান থেকে এসেছিলেন। কমের আশায় মৌচাক এসে আশাহত তিনি।

Advertisement

ইমরান বলেন, ‘সাড়ে নয়শো টাকার একটি ব্যাগ ছেলে পছন্দ করেছিল তালতলা মার্কেটে। এখানে কিছুটা কমের মধ্যে পছন্দের ব্যাগ পাবো মনে করে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে আরও মাথা ঘুরে গেছে। যেটাই পছন্দ হয়, দাম ১৫শ টাকার বেশি চায়। স্কুলব্যাগের এত দাম হয়েছে সেটা জানা ছিল না।’

গত কয়েক মাসে দেশে বেড়েছে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম। এর প্রভাব পড়েছে স্কুলব্যাগসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণেও। বই-খাতা, কাগজ-কলম-পেন্সিলসহ প্রায় সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। স্কুলব্যাগের দাম বেড়েছে মানভেদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে অভিভাবকদের নিতে হচ্ছে বাড়তি চাপ।

মৌচাক মার্কেটের পাশে কয়েকটি ব্যাগের দোকান মিলে সেলিম আহম্মেদের প্যারেন্টস গ্যালারি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জিন কাই জিন’ স্কুলব্যাগের জন্য চায়নার একটি পরিচিত ব্র্যান্ড। গত মৌসুমেও এ ব্র্যান্ডের সাধারণ মানের একটি ব্যাগের দাম ছিল এক হাজার টাকার মধ্যে। এ মৌসুমে সেটা ১৪শ টাকা। একই ধরনের দেশে তৈরি অন্যান্য রেপ্লিকা ব্যাগ এখন ৭শ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে এক হাজার টাকা।

Advertisement

তিনি বলেন, এর মধ্যে আবার আগামী মাস থেকে ব্যাগের দাম আরও একশো/দেড়শো টাকা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। চাইলেও চকবাজার থেকে কম দামে আর ব্যাগ কেনা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সবচেয়ে কম দামের দেশে তৈরি স্কুলব্যাগ কিনতে হলেও গুনতে হবে ৭শ টাকা। যেগুলো গত বছর ছিল সাড়ে ৪শ টাকা। মাঝারি মানের ব্যাগ ৮শ থেকে বেড়ে এখন এক হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা ভালোমানের ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে বেড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়।

নিউমার্কেটে সিয়াম ব্যাগ হাউজের বিক্রেতা সফিউজ্জামান বলেন, চায়না থেকে আমদানি করা ‘সিগোল্ড’ ব্র্যান্ডের এসব ব্যাগ আগে ৫৩০ টাকায় পাইকারি কিনতাম। এখন ৮৫০ টাকা চাচ্ছেন আমদানিকারক। পাইকারিতে দেশি বিভিন্ন কোম্পানির ৪শ টাকার ব্যাগ এখন ৬শ টাকায় কিনছি।

তিনি বলেন, দামের কারণে এখন ব্যাগের বেচাকেনাও কম। আগে যে ক্রেতা খুব ভালো কোয়ালিটির নিতেন, এখন তিনি মধ্যমমানের ব্যাগ কেনেন। অনেকেই পুরোনোটা দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে।

Advertisement

মালিবাগের ব্যাগ বিক্রেতা হাসান হুসাইন এন্টারপ্রাইজের মীর হুসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাগের দাম আরও বাড়বে। কারণ ব্যাগের মূল কেনাবেচা জানুয়ারি থেকে। দাম বাড়ার শঙ্কায় এখনই পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমানো হয়েছে।

চকবাজারের ব্যাগ আমদানিকারক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিবি করপোরেশনের কর্ণধার এনামুল হক মোল্লা বলেন, ডলারের দামের কারণে ব্যাগের আমদানি খরচ বেড়েছে। এছাড়া চীনে কোভিড পরবর্তীসময় থেকেই ব্যাগের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি পরিবহন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধির একটি প্রভাব রয়েছে।

তিনি জানান, দেশের স্কুলব্যাগের বাজারের সিংহভাগ আমদানিনির্ভর। সে কারণে পণ্য আমদানির জন্য এলসির ঝামেলা রয়েছে। অনেকে ব্যাগ আনতে পারছেন না। সেটাও বাজারে একটি সংকট তৈরি করেছে।

এদিকে চকবাজারে ব্যাগ কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, সন্তানের শিক্ষা উপকরণের দাম এতটা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে যে সেটা বড় প্রভাব ফেলছে সংসারের খরচের ওপর। পরিস্থিতি যেন দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। হিমশিম খেতে হচ্ছে রীতিমতো।

তিনি বলেন, শিক্ষা উপকরণের এমন দাম বাড়াটা মেনে নেওয়া যায় না। পড়াশোনার যে খরচ বাড়বে সে অনুপাতে অভিভাবকদের বেতন তো বাড়ে না। এখন কীভাবে বাড়তি খরচ চালাবো সেটিই চিন্তার বিষয়।

এনএইচ/এএসএ/জেআইএম