খেতে ভালোবাসেন অনেকেই। কেউ কোনো নির্দিষ্ট একটি পদ কেউ আবার সবকিছুই। খাওয়ার নানা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয় ভোজন রসিকদের জন্য। কে কত বেশি খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত খেয়ে দুর্ঘটনার নজিরও ইতিহাসে কম নয়। বেশি খেয়ে মারা গেছেন অনেকেই। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খেতে পারতেন তারারে নামের এক ব্যক্তি।
Advertisement
তারারে ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ। যেখানে মানুষ খাবার না পেয়ে মারা গেছেন। বিভিন্ন শতাব্দীতে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। সেখানে তারারে খেতে বাদ রাখেননি কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন পশু-পাখি। মাঝে মাজেহ রান্না করার সময়টুকু দিতেন না কাঁচাই খেয়েছেন এসব। কথিত আছে মানবশিশুও নাকি খেয়ে নিয়েছেন খিদের তাড়নায়। এমনকি মৃত্যুও হয়েছিল খেতে খেতেই।
তবে শুধু তারারেই নন, অতিরিক্ত খাবার খেয়ে মারা গেছেন এমন ব্যক্তির তালিকায় আছেন রাজারাও। সুইডিশ রাজা অ্যাডলফ ফ্রেডেরিক ‘সেমলা’ ক্রিম রোল নামে একটি স্থানীয় মিষ্টির প্রতি আসক্ত ছিলেন। ১৭৭১ সালের একটি উৎসবে শ্রোভ মঙ্গলবার, অ্যাডলফ ফ্রেডেরিক লেন্টের মরসুমের প্রস্তুতিতে প্রচুর আনন্দদায়ক খাবার খেয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে ছুটির দিনটি পালন করেছিলেন।
তাই একবার ক্যাভিয়ার, গলদা চিংড়ি এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক খাবার ভোজনের পরে, রাজা এক সঙ্গে এক ডজনেরও বেশি ‘সেমলা’ খেয়ে ফেলেন। তবে বিপুল পরিমাণ খাবার রাজা আর হজম করতে পারেননি। কিছুক্ষণ পরই অনুভব করেন তার পেট খারাপ হয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। একটা সময়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসের পাতায় তিনিই একমাত্র রাজা যিনি অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে মৃত্যুবরণ করেছেন।
Advertisement
তবে রাজা অ্যাডলফ ফ্রেডেরিক শুধু অতিরিক্ত খেয়েই যে ইতিহাসে স্থান করেছেন তা কিন্তু নয়, তিনি আরও নানান কারণে ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। ফ্রেডেরিক ছিলেন একজন সফল রাজা। তার রাজত্বকালে সুইডিশ জনগণের নাগরিক অধিকার বৃদ্ধি পায় এবং দেশটি শান্তির একটি বর্ধিত সময়ের সাক্ষী ছিল। ১৭৬৬ সালে, তার শাসনামলে সুইডিশ পার্লামেন্টও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং তথ্যের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে বিশ্বের প্রথম আইন পাস করে।
১৭৭১ সালের ১২ ফ্রেব্রুয়ারি দিনটি ছিল তাদের বিশেষ একদিন। দেশে ছিল সরকারি ছুটির দিন। রাজাও নিজের প্রাসাদে আয়েশ করছিলেন। সমাজের বেশ কিছু অভিজাত মানুষের সঙ্গে প্রীতিভোজে অংশ নেন। এসময় তিনি খেয়েছিলেন গলদা চিংড়ি, ক্যাভিয়ার, কিপারস, স্যুরক্রট, সেদ্ধ মাংস এবং শালগম। রাজা শ্যাম্পেইন দিয়ে তার খাবার শেষ করেন। এরপর ডেজার্ড হিসেবে রাজাকে পরিবেশন করা হয় ‘সেমলা’। দুধে ভেজানো দারুচিনি এবং কিশমিশের স্বাদযুক্ত এই ‘সেমলা’ ছিল রাজার প্রিয় খাবার।
‘সেমলা’ হলো বন রুটির মতো দেখতে এক ধরনের ক্রিম রোল। যা তৈরি হতো ময়দা দিয়ে। সঙ্গে দেওয়া হতো দারুচিনি, কিশমিশ সহ নানান স্বাদ। রাজার খুবই প্রিয় খাবার ছিল এই সেমলা। এমনকি সে সময় অভিজাত মানুষের প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছিল সেমলা। যেহেতু এটি শুধু সমাজের উচ্চস্তরের মানুষের জন্যই বানানো হতো তাই সাধারণ মানুষেরা এর স্বাদ নিতে পারতেন না।
তবে সেদিন রাজা একটু বেশিই সেমলা খেয়ে ফেলেন। একে তো গলদা চিংড়ি, শালগমের মতো অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করা খাবার খেয়েছিলেন। তারপর আবার দুধে ভেজানো সেমলা। একসঙ্গে ১৪টি সেমলা খেয়েছিলেন রাজা। কিছুক্ষণ পরই বদহজম হয় রাজার। এরপর আর সুস্থ হননি তিনি। রাত শেষ হওয়ার আগেই মারা যান রাজা অ্যাডলফ ফ্রেডেরিক।
Advertisement
সূত্র: অল দ্যট ইন্টেরেস্টিং
কেএসকে/জিকেএস