বয়স তখন সবে চার বছর। গুঁটি গুঁটি পায়ে বাবা-মায়ের হাত ধরে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে ঘুরতে যান মালিহা ফাইরুজ। সেই থেকে শুরু! এরপর যখন বুঝতে শিখেছেন, তখনই মনে মনে স্বপ্ন বুনেন পুরো বিশ্ব ঘুরে দেখবেন তিনি।
Advertisement
সেই স্বপ্নপূরণের পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন মালিহা। এরই মধ্যে তিনি ১০০ দেশ ভ্রমণ করেছেন, তাও আবার একাই। একজন নারী হয়ে একাই বিশ্বের ১০০ দেশ ভ্রমণ করতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন, তবুও স্বপ্নভঙ্গ হয়নি তার।
বাকি দেশগুলো ঘুরে দেখবেন একে একে, সে আশাতেই বুক বাঁধছেন। জাগোনিউজ২৪ এর সঙ্গে ১০০ দেশ ভ্রমণ বিষয়ক নানা অভিজ্ঞতার কথা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন মালিহা ফাইরুজ।
'
Advertisement
জাগোনিউজ২৪: কবে থেকে দেশের বাইরে আছেন ও এখন কী করছেন?মালিহা ফাইরুজ: ১৭ বছর হলো দেশের বাইরে আছি। এখন আমি জার্মানিতে থাকি। বার্লিনের একটি এনজিওতে কর্মরত আছি। বিগত ৮ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এনজিওতে কাজ করেছি।
জাগোনিউজ২৪: কীভাবে ভ্রমণের নেশা জেগে উঠলো?মালিহা ফাইরুজ: খুব ছোটবেলায়, সম্ভবত ৪ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথম বিদেশ ভ্রমণে যাই। ওই অনুভূতি এখনো আমার মনে গেঁথে আছে।
তখনই প্রথম আমি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড ও আমেরিকায় ভ্রমণ করি। প্রথমবারের মতো আমি যখন বিমানে উঠেছিলাম, তখন সত্যিই অবাক হয়েছিলাম।
আমার কাছে এটি সত্যি ‘অবিশ্বাস্য’ মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল, মেঘের মধ্যে পাখির মতো ভাসছি। তখনকার সেই অনুভূতি সত্যিই বিস্ময়কর ছিল।
Advertisement
জীবনে প্রথমবারের মতো আমি তখন সাদা ও কালো চামড়ার মানুষ দেখি। অবাক লেগেছিল যে, মানুষ কতরকমই না দেখতে হয়! এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ অনুভব করা, নানা দেশের সংস্কৃতি দেখা সবকিছুই আমাকে আকর্ষণ করেছিল।
তখন থেকেই হয়তো ভ্রমণের নেশা আমার মধ্যে জেগে উঠেছে। ভ্রমণের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়তো বিশ্বের অন্যকিছুতে নেই। একদেশ থেকে অন্যদেশ ভ্রমণের মধ্যে যে ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করে তা শুধু ভ্রমণপিপাসুরাই জানেন।
জাগোনিউজ২৪: শিশুদের মধ্যে ভ্রমণ কতটা প্রভাব ফেলে?মালিহা ফাইরুজ: বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথম যখন ফ্রান্স ভ্রমণে গিয়েছিলাম, তখন ফ্রেঞ্চ ভাষায় চার লাইন শিখেছিলাম। সেটি আজও মনে আছে আমার। যদিও পরবর্তী সময়ে ফ্রেঞ্চ শিখেছি। কিন্তু ওই চার লাইন আজও ভুলতে পারি না।
শিশুরা যখন বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যায়, তখন তাদের মধ্যে জানা ও শেখার আগ্রহ বাড়ে। বিভিন্ন বিষয় তাদের মাথায় ঘুরতে থাকে, এভাবে তাদের মানসিক বিকাশও ভালোভাবে ঘটে।
জাগোনিউজ২৪ : কোন কোন দেশ ঘুরেছেন? কী কী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে?মালিহা ফাইরুজ: চলতি বছরের নভেম্বরের ২৫ তারিখে আমার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ঘানা প্রজাতন্ত্রে অবতরণ করেন। এটি দিয়ে মোট ১০০ দেশ ভ্রমণ করলাম। পুরো বিশ্বই ঘুরে দেখতে চাই।
হয়তো শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, মানুষ, ভিন্ন খাবার, রীতিনীতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করে। এই নেশা মনে হয় আমার কোনোদিনই কাটবে না।
অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি, একা ভ্রমণ করতে গিয়ে। ইমিগ্রেশন অফিসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের পুলিশ পর্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেছেন আমার সঙ্গে।
মেয়ে বলে নানা ধরনের বাজে মন্তব্যও করা হয়েছে। আমার এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানলে হয়তো অনেকেই বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হবেন। তবে আমি কিন্তু থেমে যায়নি।
আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে ট্রোলড হই। বিশেষ করে আমার পোশাক নিয়ে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের বিষয়েও বলা হয় যে, মেয়ে হয়ে কেন আমি বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি নিয়েও ঘোরাঘুরি করি ইত্যাদি।
ছোটবেলা থেকে আমরা অনেকেই বড় হই এটা শুনে যে, ‘তুমি মেয়ে এটা করতে পারবে না, ওখানে যাওয়া যাবে না, এই পোশাক পরবে না ইত্যাদি’। সব বিষয়ে মেয়েদের উপরে দোষ চাপানো হয় কমবেশি।
সামাজিক এসব মনোভাবের বিপক্ষে গিয়ে যখন কেউ নিজের মতো করে চিন্তা করে কিংবা স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যায়, তখনই ওই মেয়ের নানা ধরনের কটূকথা শুনতে হয়।
আসলে মেয়েদের বড় করে তোলাই হয় নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে, এ কারণে অনেকেই সাহস পান না নিজের ভালো লাগার কাজটি করে উঠতে। এজন্য প্রতিটি বাবা-মায়েরই উচিত সন্তানকে ভয় দেখিয়ে বড় না করে বরং তাকে তার মতো করে চিন্তা করতে ও ঘুরতে দিন।
জাগোনিউজ২৪ : নারী হিসেবে একা বিশ্ব ভ্রমণের স্বপ্নপূরণে আপনাকে সবচেয়ে বেশি কে উৎসাহ দিয়েছেন? মালিহা ফাইরুজ: এদিক দিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ও সাপোর্ট পেয়েছি আমার বাবার। তিনি সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমার বাবা ইংল্যান্ডে পড়াশুনা করেছেন।
তিনিও ছিলেন একজন সলো ট্রাভেলার। বাবার এই গুণটিই হয়তো আমি পেয়েছি। আমার রক্তেই হয়তো আছে ভ্রমণের নেশা। তিনি এখনো একা একা ঘুরতে যান বিভিন্ন দেশে।
বাবার পাশাপাশি আমার মা সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। মেয়ে বলে কখনো তারা কোনো কাজে নিরুৎসাহিত করেননি বলেই বোধ হয় আজ আমি বিশ্বভ্রমণের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারছি। আমার বাবা সব সময় বলেন, বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখ।
জাগোনিউজ২৪ : একা ভ্রমণে বেশিরভাগ মানুষই ভয় পান, সেক্ষেত্রে আপনি কীভাবে ভয়কে জয় করেছেন?মালিহা ফাইরুজ: একা ভ্রমণে কমবেশি সবাই ভয় পান! বিশেষ করে সেটি যদি হয় দেশের বাইরে অপরিচিত কোন দেশ ভ্রমণকালে। এক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে দু’ধরনের ভয় কাজ করে- একটি হলো নিরাপত্তা বিষয়ক ও অন্যটি হলো একা একা আমি কী করবো?
যেহেতু আমি একাই ভ্রমণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, এজন্য প্রথমেই ভয় কাটাতে হয়েছে। তবে নিরাপত্তা বিষয়ক ভয় আমিও পাই নতুন নতুন দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে। তবে এজন্য প্রচুর রিসার্চ করতে হয় ওই স্থান সম্পর্কে। বিশেষ করে আমি কোথায় থাকব, তার আশপাশের সুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন সেদিকে বেশি নজর দিয়ে থাকি।
২০১১ সালে ২০ বছর বয়স থেকে আমি সলো ট্রাভেল শুরু করি। জীবনের প্রথম সলো ট্রাভেলে আমি গিয়েছিলাম রোমে। আমি যে হোস্টেলে উঠেছিলাম, তার আশপাশের ল্যান্ডমার্ক মনে রেখে বেরিয়েছিলাম ঘুরতে। যদিও তেমন কোনো সমস্যায় তখন পড়তে হয়নি। আমার সলো ট্রিপ সত্যিই স্মরণীয় হয়ে আছে।
তখন গুগল ম্যাপের অ্যাক্সেস ছিল না তেমন, এছাড়া আমার ফোনে ইন্টারনেটও থাকত না, কোনো অ্যাপেরও সাহায্য নিতে পারতাম না। তবে এদিক দিয়ে এখন অনেকটাই সাহায্য পান ভ্রমণকারীরা।
ইন্টারনেটের এই যুগে এখন এক দেশে বসেই অন্যদেশের খবরাখবর জানা যায়, সেখানে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়! শুধু প্রয়োজন ইচ্ছা ও আত্মবিশ্বাসের।
জাগোনিউজ২৪ : ১০০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লেগেছে এমন দেশ কোনগুলো?মালিহা ফাইরুজ: ১০০টি দেশের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ৫ দেশ ও শহর হলো- সাউথ আফ্রিকার কেপ টাউন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মেক্সিকো, পশ্চিম আফ্রিকার ঘানা ও তুর্কি।
ঘানার সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। এটি অপূর্ব সুন্দর একটি দেশ। সেখানকার মানুষ খুবই দয়ালু স্বভাবের, এছাড়া তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আপনাকে মুগ্ধ করবে।
ঘানা ছাড়াও মেক্সিকো, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এমন দেশ যাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করেছে।
জাগোনিউজ২৪: বিশ্ব ভ্রমণের জন্য কি সত্যিই অর্থ নাকি মনোবল বেশি প্রয়োজন?মালিহা ফাইরুজ: এটি সত্যি যে, ভ্রমণের জন্য অবশ্যই অর্থ প্রয়োজন। পকেটে টাকা না থাকলে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। যারা বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াতে চান, তাদের উচিত অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখা। কারণ অর্থ না থাকলে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়।
তার মানে এই নয় যে, আপনার কোটি কোটি টাকা থাকতে হবে। সাধ্যের মধ্যেও কিন্তু ভ্রমণ করা সম্ভব। আর এজন্য দরকার মনোবল। আপনার মধ্যে যদি ভ্রমণের নেশা না থাকে তাহলে যত টাকাই থাকুক না কেন, আপনি ঘুরতে পারবেন না।
কারণ এই বিশ্বে অনেক ধনী মানুষ আছেন, কিন্তু ১০০ দেশ ভ্রমণের তালিকায় যারা আছেন তাদের সংখ্যা মাত্র কয়েক হাজারেই সীমাবদ্ধ। তাই কারও কাছে অর্থ থাকলেই যে তিনি বিশ্বভ্রমণে বের হবেন, এমনটি নয়।
আসলে যারা বিশ্ব ঘুরে দেখতে চান, তাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা নিজের ঘর-বাড়ি বিক্রি করেও ভ্রমণ করছেন। তাদের কিন্তু ভ্রমণের জন্য আরও অর্থ প্রয়োজন, কিন্তু তারা পাচ্ছেন না! আর যাদের আছে তাদের মধ্যে হয়তো ইচ্ছাটুকুই নেই।
জাগোনিউজ২৪: ভিসা সংক্রান্ত জটিলতাগুলো কীভাবে কাটিয়ে উঠিয়েছেন? এক্ষেত্রে একজন ভ্রমণকারীর কী করণীয় ?মালিহা ফাইরুজ: বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে চাইলেই কিন্তু আপনি পারবেন না যদি ভিসা না পান। এজন্য আপনার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে হবে। এ কারণে আশপাশের ছোট দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড’সহ যেসব দেশের ভিসা সহজেই পাওয়া যায় এসব দেশে যাওয়ার চেষ্টা করুন প্রথমত। আবার ভিসা করার থেকে দেখতে হবে কোন ভিসায় কতটা উপকৃত হবেন আপনি।
যেমন- শেনজেন ভিসা পেলে আপনি ইউরোপের সব দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। এরপর আমেরিকান ভিসা পেলেও আপনি অনেক দেশ ভ্রমণে যেতে পারবেন যেমন- মেক্সিকো, ডমিনিকা, বনয়িা, সার্বিয়া’সহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন।
জাগোনিউজ২৪: কম খরচে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়?মালিহা ফাইরুজ: এক্ষেত্রে এক ট্রিপেই বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরতে হবে। যেমন- ইউরোপ ট্রিপে গেলে এক বা দুই মাসের ছুটিতে ঘুরে আসুন বেশ কয়েকটি দেশ।
এছাড়া অনেকেই ঘুরতে গেলে শপিং ও খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে বেশ অর্থ খরচ হয়। আপনি যখন ভ্রমণে যাবেন, তখন সেদিকেই শুধু মনোযোগ দিন।
আমি ভ্রমণ করি বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জ্ঞান আহরোণের জন্য। আপনার লক্ষ্যও যদি এটি থাকে তাহলে ভ্রমণে যান শুধুই জানতে ও শিখতে।
আমি ২৫ দিনের ঘানা ভ্রমণে শুধু সঙ্গে একটি হান্ড লাগেজ নিয়ে গিয়েছিলাম। এক্ষেত্রে কিন্তু অনেক সুবিধা আছে। কারণে দেশের বাইরে গিয়ে পরিবহনের পরিবর্তে কিন্তু হাঁটাহাঁটির দিকেই বিশেষ নজর দিতে হয়।
কারণ বিভিন্ন দেশের যাতায়াত খরচ কিন্তু অনেক বেশি। এক্ষেত্রে কম খরচে ভ্রমণ করতে চাইলে অল্প অল্প অর্থ বাঁচাতে হবে আপনাকে।
ইউরোপের ভেতরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যাগ-ব্যাগেজের জন্যও কিন্তু ফি দিতে হয় গণপরিবহনে। তাই ভ্রমণে গেলেই যে বেশ কয়েকটি লাগেজ পোশাকে পরিপূর্ণ করে বের হবেন, এটি কিন্তু ঠিক নয়।
এছাড়া যে দেশেই যাই না কেন, সেখান থেকে খুব কম জিনিসই কেনাকাটা করি। এতে যেমন অর্থও বাঁচে আবার লাগেজও ভারি হয় না।
ভ্রমণে খরচ কমানোর আরও একটি উপায় হলো খাবারে কম অর্থ খরচ করা। বাঙালিরা খেতে পছন্দ করেন। তবে বিদেশে খাবারের খরচও অনেক।
এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো সুপারমার্কেট থেকে খাবার কিনে খাওয়া। আমি কিন্তু ব্যাগপ্যাকে সামান্য চাল-ডাল ও মসলাপাতিও রাখি, যাতে সুযোগ পেলে কিছু রান্না করে খেতে পারি।
জাগোনিউজ২৪ : যেসব নারীরা একাই বিশ্ব ঘুরে দেখতে চান, তাদের জন্য কিছু বলুন।মালিহা ফাইরুজ: যেসব নারীরা বিশ্বভ্রমণে বের হতে চান তাদেরকে আমি জানাবো, নারীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভালো সুযোগ কোনোকিছুতে নেই।
কারণ নারীরা যখন এটা শুনে বড় হয় যে, তার এটা করা ঠিক নয় কিংবা ওখানে যাওয়া উচিত নয় ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে যখন কোনো নারী তার ভালোলাগার কাজে এগিয়ে যান তখন অনুধাবন করতে পারেন তার মধ্যে কতটা প্রতিভা আছে। ফলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও নতুন নতুন কাজ করার কর্মস্পৃহা জাগে।
যদিও সমাজ বা পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়াটা কঠিন। এদিক দিয়ে আমি অনেক সুবিধা পেয়েছি। কারণ আমার বাবা-মা আমাকে বুঝেছেন, আমার মনের ইচ্ছেপূরণে সব ধরনের সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে এসেছেন।
এ বিষয়েও অনেকে আমাকে বলেন, ‘তুমি তো অনেক সাপোর্ট পেয়েছো, এজন্যই এসব সম্ভব হয়েছে’। আসলে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়, কারণ একই স্কুল বা একই ক্লাসে আমার যেসব সহপাঠিরা ছিলেন তারাও পরিবার থেকে কিন্তু অনেক সহযোগিতা পেয়েছেন ক্যারিয়ার গড়তে।
তবে কেউ কিন্তু আমার মতো বিশ্বভ্রমণে বের হতে পারেননি। এজন্য অবশ্যই আত্মবিশ্বাস, সাহস, মনোবল ও ইচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আপনি যদি মনে করেন এটি করতে পারবেন, তাহলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই আপনাকে রুখতে পারবে না।
জাগোনিউজ২৪: আপনার ট্রাভেল ব্লগ সাইটে তো নিয়মিত ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ ও টিপস সম্পর্কে লেখেন। এগুলো কি সবই আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও মতামত?মালিহা ফাইরুজ: আমার ব্লগ সাইটের নাম ‘মালিহা অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’। ভ্রমণবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের টিপস আমি সেখানে শেয়ার করি। এছাড়া আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতাগুলো সবার সঙ্গে শেয়ার করি এই ব্লগ সাইটের মাধ্যমে।
বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহাসিক স্থান, খাবার ইত্যাদি বিষয়ক লেখা আপনারা পড়তে পারবেন আমার ব্লগ সাইটে। সেখানে যা কিছু লেখা সবই অথেনটিক ও আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার বর্ণনা।
আমার মতো যারা ভ্রমণপিপাসু তাদেরকে উৎসাহ দিতেই কিন্তু এই ব্লগ সাইটটি খোলা হয়েছে। সেখানে যতটা সম্ভব টিপস ও বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করি আমি। যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা চাইলে আমার ব্লগ সাইট ও ইনস্টাগ্রামে অনুসরণ করতে পারেন।
জেএমএস/জিকেএস