# খিলক্ষেতের কাওলায় ১০০ বিঘা জমিতে হেলিপোর্ট নির্মাণের প্রস্তাব# প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা# এখন হেলিকপ্টারে দিনে গড়ে ১৭০টি ট্রিপ হচ্ছে
Advertisement
দুই বছর আগে দেশে প্রথমবারের মতো হেলিপোর্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কিন্তু চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাভার প্রভাবে আটকে গেছে হেলিপোর্ট প্রকল্পটি। বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে পরিচালনা করা হচ্ছে হেলিকপ্টারের ফ্লাইট। প্রতিদিন প্রায় দুইশ ফ্লাইট পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ছে বেবিচকের জন্য। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায়ও নেই বঙ্গবন্ধু হেলিপোর্টের নাম। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মানের এই হেলিপোর্ট নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
হেলিপোর্ট খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে হেলিকপ্টারে যাতায়াত ক্রমেই বাড়ছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ১৭০টি ট্রিপ হচ্ছে। কিন্তু সরকারের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতায় এই খাতের ব্যবসা বাড়ছে না। এছাড়া এখন বেসরকারি খাতের হেলিকপ্টারগুলো উড্ডয়নের জন্য প্রতিবার বেবিচক থেকে অনুমতি নিতে হয়। হেলিপোর্ট নির্মাণ করা হলে আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হবে না। বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতর থেকেই চলছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হেলিকপ্টারগুলোর পরিচালনা।
বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হেলিপোর্ট নির্মাণে তারা এখনো আশা ছাড়ছেন না। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বাড়ায় হেলিপোর্ট প্রকল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। থার্ড টার্মিনালের কাজটি শেষ হলে সরকার হয়তো হেলিপোর্ট প্রকল্পে অর্থছাড় করবে।
Advertisement
রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেতের কাওলা এলাকায় বেবিচকের প্রায় একশ বিঘা জমিতে এই হেলিপোর্ট নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল। প্রস্তাবিত এ হেলিপোর্টের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘বঙ্গবন্ধু হেলিপোর্ট’।
বেবিচক সংশ্লিষ্টরা জানান, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু হেলিপোর্ট বাস্তবায়ন হলে একসঙ্গে অন্তত ৮০টি হেলিকপ্টার অবস্থান করতে পারবে। কিন্তু সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে যে ১ হাজার ৪৮৭টি প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হেলিপোর্ট নেই। যদিও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথমে জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকাকে প্রস্তাব দিয়েছিল বেবিচক। কিন্তু জাইকা এ প্রকল্পে সম্মতি দেয়নি। পরে বেবিচক সরকারি খরচেই হেলিপোর্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এখন সরকারের অগ্রাধিকারে না থাকায় প্রকল্পটি আটকে আছে।
বঙ্গবন্ধু হেলিপোর্ট প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী, কাওলায় হেলিপোর্ট নির্মাণ প্রকল্পের ট্যাক্সিওয়েটি হবে ২ হাজার ৬১৭ বর্গমিটারের। এছাড়া হ্যাঙ্গার এরিয়া ১৬ হাজার ২২৬ বর্গমিটার, টার্মিনাল ভবন ১ হাজার ৮৭৭ বর্গমিটার, ১ হাজার ৫১২ বর্গমিটার ভিআইপি কার পার্কিং, অ্যাকসেস রোডে ১৮ হাজার ৮৭০ বর্গমিটার জায়গা থাকছে। ফায়ার স্টেশনও নির্মাণ করা হবে।
হেলিপোর্টে ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের আদলে থাকবে ১৩টি শেড। এখানেই হেলিকপ্টার পার্ক করে রাখা হবে। শেডগুলোর উত্তর-দক্ষিণ দিকে দুটি করে হেলিপ্যাড থাকবে। এই হেলিপ্যাডগুলোতে ওঠানামা করবে হেলিকপ্টার। তিন তলাবিশিষ্ট বিশাল টার্মিনালেই থাকবে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, নিজস্ব টাওয়ার, অ্যাডমিন ইউনিট, ফুয়েল ট্যাংক, কার পার্কিং, ফুডকোর্ট ও থ্রি হুইলার সিকিউরিটি সিস্টেম।
Advertisement
প্রকল্পটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিচকের উপ-পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট ও মনিটরিং) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, হেলিপোর্ট নির্মাণে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তারা কিছু পর্যালোচনাসহ সেটি ফেরত পাঠিয়েছে। এখন আমরা বিস্তারিত ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির উদ্যোগ নিয়েছি। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন হলে প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
দেশে বাড়ছে হেলিকপ্টারের চাহিদাদেশে হেলিকপ্টারের বাণিজ্যিক ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। আগে বিদেশিরা ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সেবা নিতেন। এখন জরুরি প্রয়োজনে ও বেড়াতে অনেকেই হেলিকপ্টারে যাতায়াত করেন।
বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর সংগঠন অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) জানায়, দেশে বর্তমানে আরএনআর এয়ারলাইন্সের ১০টি হেলিকপ্টার, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্সের চারটি, বসুন্ধরার তিনটি, স্কয়ার গ্রুপের তিনটি, বেক্সিমকোর দুটি, পিএইচপি গ্রুপের একটি, বাংলা ইন্টারন্যাশনালের একটি, বিআরবি ক্যাবলসের দুটি, মেঘনা গ্রুপের তিনটি, ইমপ্রেস এভিয়েশনের দুটি, এমএএস বাংলাদেশের দুটি হেলিকপ্টার রয়েছে। এসব বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার দিয়ে গড়ে প্রতি মাসে পাঁচ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। এখন এই কোম্পানিগুলো আরও সমানসংখ্যক হেলিকপ্টার আনার জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশনে আবেদন করেছে।
জানতে চাইলে এওএবি মহাসচিব ও নভোএয়ার লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এখন শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টার পরিচালনায় নানান জটিলতায় পড়তে হয়। তাই হেলিকপ্টারের জন্য আলাদা একটা ব্যবস্থা করতে বেবিচককে অনেকবার বলা হয়েছে। তারা যখন উদ্যোগ নিলো তখন আবার সরকার প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক বছর আগেও মাসে হেলিকপ্টারের ফ্লাইট সংখ্যা ছিল এক হাজারের মতো। কিন্তু এখন প্রতি মাসে পাঁচ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। হেলিকপ্টারের ফ্লাইট সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিঘ্ন হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ চলাচল। এ কারণে হেলিপোর্ট নির্মাণে আগ্রহী হয় বেবিচক। কিন্তু সরকারি অর্থায়ন ছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
এমএমএ/এএসএ/এমএস