লাইফস্টাইল

ঘর সাজান বোতল বাগানে

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

Advertisement

ঘরের মধ্যে একটুখানি সবুজের উপস্থিতি অনেকেই চান। হোক সেটা পড়ার টেবিল, শোওয়ার ঘর, কিচেন, বাসার দেওয়াল, সিঁড়ি, খাবার টেবিল, গেস্ট রুম। এমনকি বাথরুমেও। এসব জায়গায় বোতল, জারে গাছ রাখা যায়। বোতলেই হতে পারে সুন্দর বাগান।

এটি ঘরের মধ্যে গাছ রাখার ভিন্ন একটি মাধ্যম। ম্যানিপ্লান্ট, ফার্ন, লাকি বাম্বু জাতীয় গাছ অনায়াসে বোতলে বেড়ে উঠে। খুব বেশি যত্নে ও প্রয়োজন হয় না। নানা রঙের বোতল অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়। দাম ৫০০-২০০০ টাকা।

এই বোতলগুলোতে সুন্দর ডিজাইন করা থাকে। আবার ভাঙারির দোকানেও ব্যবহৃত বোতল পাবেন। তবে এগুলো ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। বোতল কিনে নিজেও রং করে নিতে পারেন। এতে খরচ কম হবে। অন্যদিক জার পাওয়া যাবে অ্যাকুরিয়ামের দোকানে। সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা দাম। বড় হলে দামও বেশি।

Advertisement

জার বা বোতলে মাটি ভরে ফার্নজাতীয় গাছ লাগিয়ে দিলেই হলো। এই গাছগুলোর খুব বেশি রোদ লাগে না। এদের জন্য মাটি তৈরি মাটিতে বালুর উপস্থিতি যেন বেশি থাকে। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে পানি স্প্রে করে দিলেই হলো। মাঝে মধ্যে একটুখানি চা পাতা দিলে গাছ ভালো হবে।

দুই নিয়মে তৈরি হয় এই বোতল বাগান। ঢাকনাসহ ও ঢাকনাবিহীন। খোলা জার বা বোতলে ভালো হয় ক্যাকটাসজাতীয় উদ্ভিদ। কয়লা, পাথর, বালু, নারকেলের খোসার গুঁড়া এগুলো দিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। ঢাকনাসহ জারে গাছ লাগালে জার ঘেমে উঠলে ঢাকনা খুলে দিতে হবে।

বাসার বারান্দা জানালার যেসব জায়গায় রোদ পড়ে সেখানে বোতলে সবজির চাষ করাও সম্ভব। সবজির গাছের জন্য জৈব সার দিয়ে মাটি প্রস্তুত করে নিন। প্লাষ্টিকের বোতল একবার ব্যবহার করে সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। অথচ এগুলোতে অনায়াসে সুন্দর বাগান করা সম্ভব।

প্লাষ্টিকের এই পুনঃব্যবহার পরিবেশের জন্য উত্তম। বোতলে মানিপ্ল্যান্ট দু’ভাবে লাগানো যায়। এক মাটি দিয়ে, দুই- শুধু পানিতে। যেটাই বেছে নেন না কেন।

Advertisement

গাছ দ্রুত লতা পাতা ছড়িয়ে বেড়ে উঠবে। তীব্র রোদ পড়ে, সরাসরি এসির নীচে ঘরের গাছ রাখা যাবে না। মাঝে মধ্যে ব্রাশ দিয়ে পাতা পরিষ্কার করে দিন।

ঘরেও তো নানা রকম ধুলাবালি থাকে তাই না? ঘরে হোক আর বারান্দায়ই হোক। বোতল বাগান দ্রুত জনপ্রতি হয়ে উঠছে। কারণ খরচ কম। সময়ও দিতে হয় এর পেছনে অনেক কম। ঘরের শোভা বৃদ্ধি করে। পরিবেশ ভালো রাখে।

বোতলে ফল, সবজি, ওষুধি, লতাপাতাজাতীয় গাছ সবই হয়। তবে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। সেটাই বলছিলেন একপার্ট বাগানি জামিল আহমেদ।

তিনি বলেন, বোতলে বিভিন্ন ধরনের গাছ ভালোই হয়। তবে বোতলে বাগান করতে চাইলে কিছু বিষয়ের দিকেখেয়াল রাখতে হবে যেমন- গাছ অনুযায়ী বোতলের মাপ, মাটি, সার, পানির ব্যবস্থা ইত্যাদি।

তিনি পরামর্শ দেন সাধারণত বেলে ও দো-আঁশ মাটি গাছের জন্য ভালো। মাটিতে কিছু কোকোপিট (নারকেলের ছোবলার গুঁড়া) মেশাতে হবে।

সার হিসেবে জৈবসারের উপস্থিতি তো থাকবেই। নারকেলের ছোবড়া মাটিতে মেশালে অনেক উপকার। এতে ওজন হালকা হবে, মাটি ঝরঝরা থাকবে।

আর মাটির পানি ধারণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। কোকোপিট মাটিতে আর্দ্রতা ধরে রাখে। ফুলের গাছের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকা, অপরাজিতা, জুঁই, বোতলে ভালো হয়। তবে বোতলে যেটাই লাগানো হোক না কেন।

পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা চাই। মাটি ভেজা থাকবে তবে স্যাঁতস্যাঁতে হবে না। ১৯৬০ সালে যুক্তরাজ্যের ডেভিড ল্যাটিমার ১০ গ্যালন সাইজের বোতলে এই বিশেষ পদ্ধতির বাগান তৈরি করেন।

বোতল বিক্রেতার খবর

এবার জানিয়ে দিচ্ছি অনলাইনে বোতল টব বিক্রি করে এমন একজনের খবর। তার নাম ফাতেহা আফরোজ। ফেসবুকে তার পেইজের নাম ‘অরনা’।

এখানে সুন্দর ডিজাইন করা বোতল পাওয়া যাবে। ফাতেহা গ্লাস কালার, দড়ি, টিস্যু, স্প্রে, পুঁতি, পাথর, অ্যাক্রেলিক কালার ইত্যাদির মাধ্যমে বোতলকে রঙিন করে তোলেন। বোতল দিয়ে তার তৈরি ফুলের টব, গাছ রাখার টব, শো-পিস ইত্যাদি এখন বেশ জনপ্রিয়।

লেখক: অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশন্স, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড।

জেএমএস/এমএস