পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার বলেছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা বাড়ানো দরকার। এর নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা আশা করি দুই-একদিনের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কারণ আমরা মনে করি, পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা না পেলে আমাদের মতো দেশের জন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষার টার্গেট বাস্তবায়ন দুরূহ হয়ে যাবে।
Advertisement
বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র রক্ষায় কানাডার মন্ট্রিলে আয়োজিত কপ-১৫ এ বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন তিনি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার বলেন, যেটাকে আমরা কনভেনশনাল বায়োডাইভারসিটি বলছি এর একটি সদস্য দেশ আমরা। যাকে ইংরেজিতে বলি পার্টি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীকে প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের যোগ্য করে তুলতে হবে। এটা ২২টি মিশন ও ভিশনের মধ্যে বলা হয়েছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে যে বিশ্বব্যাপী কতটুকু এলাকে সংরক্ষিত করবো, কতটুকু এলাকা অলরেডি বিনষ্ট হয়ে গেছে, যে প্রতিবেশগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলোকে আমরা পুনরুদ্ধার করবো। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এবং এগুলো করতে গেলে আমাদের মতো দেশের যেটা দরকার সেটা হলো সামর্থ্য বাড়ানো। আমাদের আর্থিক, কারিগরি সামর্থ্য বাড়ানো দরকার। সেগুলোর জন্যই আমরা এখানে এসেছি। এই ২২টি টার্গেট এবং মিশন ও ভিশনগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়; সেই ফ্রেমওয়ার্কের ভেতরে কীভাবে কাজ করা যায়; সেজন্য আমরা প্রথম থেকে এখানে লেগে আছি। আমাদের মতো যারা উন্নয়নশীল দেশ আছে কিংবা যারা মোস্ট ভালনারেবল তাদের অনুকূলে কাজ করছি। আমরা চাচ্ছি যে এই ২০৩০ সাল পর্যন্ত যে ডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক এখন পরিণত হচ্ছে তার টার্গেটগুলো যেন এমন হয়। সেটা বাস্তবায়নে সেই পরিমাণে অর্থ দেওয়া হয় যাতে উন্নয়নশীল ও অনুন্নয়নশীল দেশগুলো জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রচুর অর্থ পায়।
Advertisement
সোলায়মান হায়দার আরও বলেন, এই কনভেনশনের আর্টিকেল ২০ এ বলা আছে উন্নয়নশীল দেশের যথেষ্ট পরিমাণের রিসোর্স করা হবে। এখনো এ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা আসেনি, তবে আলাপ-আলোচনা চলছে। এই আলোচনার মাধ্যমে দুই-একদিনের মধ্যে হয়তো চূড়ান্ত ফল পাবো।
চলতি সম্মেলনে ২২টি টার্গেট নিয়ে কাজ কাজ করা হচ্ছে। টার্গেটগুলো কী কী- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২২টি টার্গেটের মধ্যে রয়েছে- কতটুকু এলাকাকে সংরক্ষণ করবো। আমরা বলেছি আমাদের দেশটা ছোট। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যাদের অনেক জায়গা আছে। কানাডার, চীন, ব্রাজিল তাদের অনেক জায়গা আছে। আমাদের দেশ ছোট, তারপরও আমরা জায়গা দিতে পারবো। কিন্তু যাদের দেশ বড় তারা ৩০ শতাংশ বন সংরক্ষণ করবে। কিংবা ৩০ শতাংশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করবে বলে আমাদের জানিয়েছেন। সেটা সামুদ্রিক এলাকা হোক বা স্থল, বন, পাহাড় যে কোনো কিছু হতে পারে। আরেকটি জিনিস বলা হচ্ছে যে এলাকাগুলোর প্রতিবেশ এরইমধ্যে বিনষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। সেগুলোর ৩০ ভাগ সংরক্ষণ করা হবে।
এছাড়া বলা হয়েছে, বায়োডারভারসিটির ভ্যলুয়েশন করা। ইকো সিস্টেমকে ভ্যালুয়েশনের মধ্যে দিয়ে এর সার্বিক অর্থনৈতিক পরিমাপ করা এবং সে অনুযায়ী এর ব্যবস্থাপনায় সেই অর্থ ব্যয় করা। তাছাড়া ভ্যালুয়েশন করে এর যে গুরুত্ব তার উন্নয়নে কার্যক্রম গ্রহণ করা। কী পরিমাণ অর্থ দরকার এবং কোন কোন সোর্স থেকে অর্থ আসবে সেই টার্গেট- এসব বিষয় আছে।
বাংলাদেশের জন্য কত পরিমাণ অর্থ সাহায্য দরকার সে বিষয়ে কোনো টার্গেট নিয়ে প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জানান, এখানকার (কপ-১৫) টার্গেট যখন চূড়ান্ত হবে তখন আমরা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি স্ট্যাটিজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্লান আপডেট করতে হবে। আমাদের এর আগে ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি অ্যাকশন প্ল্যান ছিল ২০১৬ থেকে ২১ পর্যন্ত। সেটি এখন আবার আপডেট করতে হবে পোস্ট ২০২০ গ্লোবাল ফ্রেমওয়ার্কের আওতায়। সেখানে আমরা ক্যালকুলেশন করবো আমাদের আসলে কতটুকু অর্থায়ন দরকার। বায়োডাইভারসিটির আওতায় নতুন করে অ্যাকশন নিতে হবে।
Advertisement
বাংলাদেশের পক্ষে কতটুকু জায়গা জীববৈচিত্র্যের জন্য সংরক্ষণ করা হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত কিছু বলি নাই যে আমরা কতটুকু করতে পারবো। তবে আমাদের দেশ ছোট। আমাদের স্থলভাগ ছোট। সেই অনুযায়ী এখনই কিন্তু আমাদের ৬ ভাগ স্থলভাগ এলাকা সংরক্ষিত হিসেবে আছে। আমাদের সমুদ্রের ক্ষেত্রেও কিন্তু আমরা সাত ভাগ এরকম সংরক্ষিত রেখেছি। পৃথিবীব্যাপী ৩০ শতাংশ হলে আমাদেরও যে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ রাখতে হবে তা কিন্তু নয়। কারণ আমাদের দেশ ছোট মানুষ বেশি। পরবর্তীতে যখন আমরা আমাদের ন্যাশনাল টার্গেট ঠিক করবো তখন নির্ধারণ করা হবে কতটুকু জমি সংরক্ষণ করা হবে।
কানাডার মন্ট্রিলে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সাড়ে তিনটায় বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্রের রক্ষায় (কপ-১৫) সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এসময় মন্ট্রিলের সিটি মেয়র ভেলেরি প্ল্যান্টি, চীনের পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী হুয়াং রুনকুই, চীনের কুনমিং সিটি মেয়র লিও জিয়াচেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরদিন ৭ ডিসেম্বর থেকে মূল সম্মেলন শুরু হয়। এই সম্মেলনে ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে সম্মেলন।
মানব ধ্বংসের হাত থেকে প্রকৃতিকে বাঁচাতে ১৫তম বৈশ্বিক আলোচনার জন্য বিশ্বনেতাসহ প্রায় ১৯ হাজার প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
এইচএস/কেএসআর/এএসএম