১৬ ডিসেম্বর। আমাদের বিজয় দিবস। স্বাধীনতাকামী বাঙালির হৃদয়ে এদিনটি মহা আনন্দের, মহা গৌরবের। আজ বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। ইসলামে বিজয় ও স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম।
Advertisement
কেননা স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। বিজয় এবং স্বাধীনতা মহান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। ১৬ই ডিসেম্বর, বাঙালি জাতির বিশেষ আনন্দের দিন। আমাদের স্বাধীনতার বিজয় দিবস। বাংলাদেশের এ বিজয়ের রয়েছে ঐতিহাসিক পটভূমি। যার শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে।
ইসলাম চায় সকল মানুষ যেন শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীনভাবে স্বস্ব ধর্ম পালন করতে পারে। ইসলাম আমাদেরকে এই শিক্ষাই দেয় যে, আমরা যেন আমাদের ভূখণ্ড তথা মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)এর জীবনাদর্শ থেকেও আমরা মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিজয়ের আনন্দ উদযাপনের দৃষ্টান্ত পেয়ে থাকি।
তাই বলা যায় দেশপ্রেম রাষ্ট্রের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা হচ্ছে মুসলমানদের চরিত্র। রাষ্টে্রর সাথে কোন সত্যিকার ঈমানদার গাদ্দারি করতে পারে না। সুতরাং এদেশের বিজয় দিবস আমাদের গৌরব আমাদের অহংকার। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু, দিতে হয়েছে লাখ প্রাণের তাজা রক্ত। আল্লাহপাকের জমিনে তিনি পরাধীনতা পছন্দ করেন না। যেখানে স্বাধীন ভূখণ্ড নেই সেখানে ধর্ম নেই আর যেখানে ধর্ম নেই সেখানে কিছুই নেই। তাই ইসলামে স্বাধীনতার গুরুত্ব অতি ব্যাপক।
Advertisement
সৃষ্টির প্রতিটি জীব স্বাধীনতা পছন্দ করে। পৃথিবীতে এমন কোন জাতি বা জীব পাওয়া যাবে না যারা পরাধীন থাকতে চায়। তাই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সবাই কতই না চেষ্টা প্রচেষ্টা করে থাকে। আর এই স্বাধীনতার জন্যই মহানবি (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে মক্কাকে করেছিলেন স্বাধীন। তিনি সকলকে উপভোগ করতে দিয়েছিলেন বিজয়ের প্রকৃত আনন্দ।
বিজয়কে কেন্দ্র করে পবিত্র কুরআনে দু’টি সুরা রয়েছে। একটি সূরাতুল ‘ফাতাহ’ (বিজয়), অপর সূরার নাম ‘আন নাসর’ (মুক্তি ও সাহায্য)। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা কর। আর তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল’ (সুরা নসর, আয়াত : ১-৩)। এখানে বিজয়ের যে আনন্দ প্রকাশ তা আল্লাহর শুকরিয়া, আল্লাহর পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করার মাধ্যমেই ইসলাম আমাদেরকে দেয়।
ইসলামের ইতিহাস পাঠে জানা যায়, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত নবীর আগমন হয়েছে তারা সবাই সমাজ, দেশ ও জাতির স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। আর এই স্বাধীনতা অত্যাচারী শাসকের দাসত্ব থেকে জাতিকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রেই হোক বা ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হোক। এক কথায় বলা যায়, সব ধরনের দাসত্ব ও পরাধীনতা থেকে মুক্ত করাই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার প্রেরিত নবিদের কাজ।
আমরা জানি, গোলাম মুক্ত করে এবং সর্ব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার জন্য যিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন এবং শতভাগ সফল হয়েছেন তিনি হলেন বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি হচ্ছেন স্বাধীনতার উজ্জ্বল সূর্য। যার কিরণ দূরদূরান্তে বিস্তার লাভ করেছে, যিনি নিজের মাঝে সব ধরণের স্বাধীনতাকে ধারণ করেছিলেন। যিনি মানুষকে শুধু বাহ্যিক দাসত্ব থেকেই স্বাধীনতা দেননি, বরং সমাজ ও দেশ থেকে সব ধরণের নৈরাজ্য দূর করে সবাইকে করেছিলেন স্বাধীন।
Advertisement
বিশ্বের এক বিশাল জনগোষ্ঠী অবলোকন করেছে, কিভাবে বিশ্বনবি (সা.) সর্বত্রে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরাধীনতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য তিনি যেমন লড়েছেন তেমনি তিনি সকলকে করেছিলেনও স্বাধীন। একান্তই সত্য যে, বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ার কারণে স্বাধীনতা কেবল তাদের হাতছাড়া হয় নি বরং সে জাতির ইহ ও পরকাল উভয়ই ধ্বংস হয়ে গেছে।
প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহপাক মানুষকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এটাই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আল্লাহতায়ালা সবাইকে বিবেক ও বিশ্বাসেরও স্বাধীনতা দিয়েছেন। কাউকে পরাধীন করেননি।
যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন ‘তোমার প্রভুপ্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই অবশ্যই এক সাথে ঈমান নিয়ে আসত। তবে কি তুমি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর বল প্রয়োগ করবে?’ (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৯৯)। এই আয়াত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, আল্লাহ সবার স্বাধীনতা চান। তিনি চাইলে সবাইকে একসাথে মুমিন বানাতে পারেন কিন্তু তা তিনি করেননি। তিনি চেয়েছেন মানুষ যেন স্বাধীনভাবে বুঝেশুনে ঈমান আনে।
দশম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর মহানবি ও বিশ্বনবি (সা.) আনন্দ উদযাপন করেছেন। বিজয়ে প্রথম আনন্দে তিনি আদায় করেছেন ৮ রাকাআত নামাজ। প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতায় তিনি এত বেশি খুশি হয়েছিলেন যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। বিজয়ের আনন্দে তিনি (সা.) সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘যারা কাবাঘরে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ। এভাবে মক্কার সম্ভ্রান্ত কয়েকটি পরিবারের ঘরে যারা আশ্রয় নেবে; তারা যত অত্যাচার নির্যাতনকারীই হোক তারাও নিরাপদ। এ ছিল প্রিয়নবির মক্কা বিজয়ের আনন্দ উৎসবের ঘোষণা।
বিজয়ের এ দিনে আমাদের করণীয়-বিজয় দিবস আমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, দোয়া এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে উদযাপন করার চেষ্টা করতে পারি। মহানবি (সা.) মক্কা বিজয়ের আনন্দে প্রথমেই তিনি নফল নামাজ আদায় করেছিলেন। আমরাও পারি রাতে উঠে তাহাজ্জদ নামাজ আদায় করে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করে বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করতে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে যে বিজয় দান করেছেন তার মর্যাদা রক্ষা করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্টৃ।
এইচআর/জেআইএম