স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন অধিকতর শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে খসড়া সংশোধনী ও উল্লেখ্য ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ই-সিগারেট, ভ্যাপিং), হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সব পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধের প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের (এনসিডিসি) লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বাজার নিয়ন্ত্রণে এর আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবনার পাশাপাশি এর সম্প্রসারণে সহায়ক সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিবৃতিতে বলা হয়, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের জন্য ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার অন্যতম প্রধান ঝুঁকির কারণ। এ ঝুঁকি নির্মূলের জন্য বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই সমন্বিতভাবে সে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
Advertisement
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখনো সীমিত হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ই-কমার্স সাইটের বহুল প্রচার ভবিষ্যতে এ সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মাঝে এর ব্যাপক প্রচলনের আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে ই-সিগারেটের উৎপাদন-বিপণন নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সংশোধনীর প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গভীর উদ্বেগের সঙ্গে প্রচলিত তামাক পণ্যসমূহের বাইরে আধুনিক কিছু পণ্যের প্রচলন পর্যবেক্ষণ করছে। সময়োপযোগী যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে। ই-সিগারেট এমনই একটি নতুন প্রজন্মের তামাকজাত পণ্য। ব্যাটারি চালিত এ যন্ত্রের মাধ্যমে আরও কিছু কেমিক্যালসহ তামাকের নির্যাস বা নিকোটিনকে বাষ্পীভূত করা হয়, যা নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করা যায়। নিকোটিন ছাড়া এতে সরাসরি ব্যবহৃত কেমিক্যালসমূহের মাঝে থাকে প্রোপাইলিন গ্লাইকল, গ্লিসারল এবং বিভিন্ন ফ্লেভার।
নিকোটিন একটি উচ্চমাত্রার আসক্তিকর কেমিক্যাল, এর ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এর ফলে হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। গর্ভবর্তী নারী ও শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে নিকোটিনের ব্যবহার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। ই-সিগারেটে ব্যবহৃত কেমিক্যালসমূহ খাদ্যমান সম্পন্ন হলেও দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসতন্ত্রে ঝুঁকির আশঙ্কায় জনস্বাস্থ্যের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এছাড়াও ই-সিগারেটে ব্যবহৃত তরল বাষ্পীভূত করার ফলে ফরমালডিহাইড উৎপন্ন হয়, যা ক্যান্সারের কারণ।
গবেষণায় ই-সিগারেটের বাষ্পে সিসা, নিকেল, ক্রোমিয়ামসহ অন্যান্য ভারী ধাতুর উপস্থিতিতেও প্রমাণিত হয়েছে, যা ক্যান্সারসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে ই-সিগারেট ব্যবহারজনিত জটিলতায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ ফুসফুসের মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়, যার মাঝে কমপক্ষে ৬৮ জন মৃত্যুবরণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ই-সিগারেট ব্যবহারে হৃদরোগ ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং এখনো প্রথাগত ধূমপানের চেয়ে এর ক্ষতির মাত্রা কম হওয়ার পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গবেষণায় প্রতীয়মান, ধূমপানের সঙ্গে ই-সিগারেটের ব্যবহার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি পাঁচগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ধূমপান নিবারণে সহায়ক ঘোষণা দেওয়ার পরিবর্তে ই-সিগারেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এরই মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩২টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করেছে।
শিশু-কিশোরদের ই-সিগারেটের প্রতি আগ্রহ এবং ই-সিগারেট দিয়ে শুরু করে পরবর্তী সময়ে ধূমপানে আসক্তি, যা যুক্তরাষ্ট্রে প্রমাণিত। এটি বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। ই-সিগারেট বাজারজাতকরণে কোম্পানিগুলোর শিশু-কিশোরদের চিত্তাকর্ষক বাজারজাতকরণ কৌশল এবং প্রতিষ্ঠিত তামাক কোম্পানিগুলোর ই-সিগারেট ব্যবসায় সম্প্রসারণ এ উদ্বেগকে আরও বৃদ্ধি করে।
এএএম/এমকেআর/জেআইএম