দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিছুদিন আগেই আমরা পালন করলাম স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এখন আমরা পালন করবো একান্নতম বিজয় উৎসব। আর এই বিজয় উৎসব নিয়ে তরুণদের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তারা জানান বিজয় নিয়ে ভাবনা, মতামত, আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা।
Advertisement
জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড জয়ী মুহাম্মাদ শাওন মাহমুদ বলেন, ‘বিজয় হচ্ছে সেই পারিশ্রমিক, যা প্রাপ্তির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যান একজন অদম্য যোদ্ধা। একটি বিজয় থেকে সামান্য শিক্ষা নিয়ে জেতা যায় আরও হাজারও যুদ্ধ। আমাদের আনন্দে-অশ্রুতে মাখা মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের আনন্দের মাঝেই চাউর হয় বিজয়ের দু’দিন আগে এদেশের সূর্যসন্তান শত শত বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে পৈশাচিক হিংস্রতা নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন করে হত্যা করেছে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা। বিজয়ের দিনটিতেও অনেক বুদ্ধিজীবীর ক্ষত-বিক্ষত শবদেহ খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিল। গত ৫১ বছর ধরে এক চোখে অশ্রু, আরেক চোখে আনন্দ নিয়ে দিবসটি পালন করছে জাতি। এক ফালি চাঁদের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি প্রায়ই। বিজয়ের অর্ধশত বছর পরে বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি টিকে থাকার ক্ষেত্রে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ ভয়ের কারণ বৈকি। গ্রেফতারকৃত এক আলবদর দাবি করেছিল, আরও কিছু দিন সময় পেলে সব বুদ্ধিজীবীকেই হত্যা করে ফেলা হতো। এমন মতাদর্শ যারা ধারণ করেন, তাদের সংখ্যা কমেছে কি?’
তরুণ লেখক ইসমত আরা প্রিয়া বলেন, ‘বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই এক অন্যরকম আনন্দের। তবে একইসঙ্গে দিনটি বেদনারও। বিশেষ করে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের জন্য। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাকহানাদার বাহিনী। ছিনিয়ে এনেছিল লাল-সবুজের রং। বিজয়ের এই উল্লাসে লাল-সবুজ শুধু দুটি রংই নয়, এ যেন অনুভূতির আরেক নাম। এ পতাকার জন্য বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন। এ পতাকা আমাদের অস্তিত্ব। তাই এ বিজয় দিবসে যেমন আনন্দ অনুভূতি হয়, একই সাথে বেদনাও।’
তরুণ উদ্যোক্তা আর্ফিয়াস আল-দ্বীন বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় অর্জন হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় লাভ। আমরা সেই দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বর্বর পাষাণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করি। সেই অর্জন মোটেও সহজ ছিল না। ৩০ লাখ বাঙালির রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। প্রিয় বাংলাদেশকে করেছি পাক-হানাদারমুক্ত। আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড, একটি নিজস্ব মানচিত্র ও পতাকা। আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ পাচ্ছি। এ বিজয়ের গৌরব ও আনন্দ অম্লান হয়ে থাকবে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। আমরা মহান বিজয় দিবসকে প্রতিবছর জাতীয় সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করি। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করি। তাই বিজয় দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতীয় উন্নতির জন্য সব ভেদাভেদ ভুলে একযোগে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
Advertisement
বুক কনটেন্ট ক্রিয়েটর অথৈ দাস বলেন, ‘বাঙালির কত ত্যাগ, কত স্বপ্নের, কত পরিশ্রমের ফলাফল এই ১৬ ডিসেম্বর! বাংলার মানুষের বিজয় দিবস অন্যতম গর্বের দিন, আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, স্মৃতি কী নেই ১৬ ডিসেম্বরকে ঘিরে? আমরা বাঙালি, বাংলাদেশ আমাদের! তবে বর্তমানে আমরা বিশেষ করে তরুণরা বিজয়ের চেতনা কতটুকু ধারণ করি? একাত্তরে সেই মানুষগুলো জীবন বাজি রেখে বয়ে এনেছেন বিজয়। যা আমাদের শেখায় মাতৃভূমি কতটা আপন। কত সংগ্রামের ফলাফল এই বাংলাদেশ! আমরা কি সেই চেতনা থেকে অনেকটা দূরে? নিজের দেশ, ভাষা, সংস্কৃতিকে কতটা বহন করছি। ১৬ ডিসেম্বর আমাকে সত্যের সাহস জোগায়! দেশকে ভালোবাসতে শেখায়! নিঃস্বার্থভাবে নিজের দেশের জন্য ভাবতে শেখায়। তাই নিজের দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি, পরিচয় নিয়ে কাজ করতে হবে। জানতে হবে, জানাতে হবে নিজেদের ইতিহাস! ভালোবাসতে হবে নিজের দেশকে, সত্যের পথে থেকে বিজয়ের চেতনা বুকে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। বিজয়ের শক্তি ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে।’
তরুণ উদ্যোক্তা ও লেখক বিজয় বি কে বলেন, ‘৫১তম বিজয় উদযাপন হবে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এ অপেক্ষায় বাংলাদেশের জনগণ। তাই বিজয় দিবস আমাদের জন্য আনন্দের এক অন্যরকম ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসছে। প্রত্যেক বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিজয় দিবস ঐতিহ্যের সাথে পালন করা হয়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রায় সব সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে তৈরি যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল। এর মাধ্যমে বিশ্বের বুকে নতুন স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়, যার নাম বাংলাদেশ। এই বিজয় দিবসের শপথ হোক হিংসা, লালসা ও বিদ্বেষকে পেছনে রেখে জাতি এবং দেশের কল্যাণে সবাই একত্রে কাজ করবো।’
এসইউ/এএসএম
Advertisement