মতামত

অসাধারণ মেসি, দুর্দান্ত টিম আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে যেভাবে মেসির নেতৃত্বে ও নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনা জয়ী হয়েছে তা এককথায় অসাধারণ। সেই সাথে মেসিময় ম্যাচে যে আধিপত্য বিস্তার করে তারা বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠে গেলো তা দুর্দান্ত টিম আর্জেন্টিনাকেই তুলে ধরছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আমি "শুভ কামনা মেসি, জয়তু আর্জেন্টিনা" কলামেই তুলে ধরেছিলাম আর্জেন্টিনা টিম নিয়ে আমার বিশ্লেষণ।সে লেখায় আমি আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা, ফিনিশিংয়ে উন্নতি ইত্যাদি বিষয়গুলো আলোকপাত করেছিলাম। এবং আশাপ্রকাশ করেছিলাম ৩৬ বছরে বিশ্বকাপ না পাওয়ার ব্যর্থতা এবার হয়তো ঘুচাতে পারবে টিম আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছরের সে বন্ধ্যাত্ব দূর করার সুযোগ এখন আর্জেন্টিনা টিমকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে মেসিকে। আশাকরি ফুটবল জাদুকর মেসির হাতেই উঠবে এবারের বিশ্বকাপ শিরোপা। ভাগ্যদেবীও বোধ হয় বরণডালা সাজিয়ে সেই উজ্জ্বলক্ষণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন!

Advertisement

ফিরে আসি গতকালের ম্যাচে। কোয়ার্টারে ব্রাজিলকে হারিয়ে ক্রোয়েশিয়া সেমিতে উঠায় অনেকেই ধারণা করেছিলেন এ ম্যাচেও হয়তোবা তারই প্রতিফলন হলেও হতে পারে। তাদের স্ট্রাইকার, গোলকিপারসহ একটা টোটাল টিম ওয়ার্ক আমরা দেখতে পেয়েছি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে তরতাজা গত বিশ্বকাপ ইতিহাস। কারণ ক্রোয়েশিয়া সেবার রানার্স আপ হয়েছিল। সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনা টিমের জন্য একটা চাপ ছিল বৈকি- তা বস্তুত অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

কিন্তু সকল আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনা একদম শ্রেয়তর ব্যবধানে রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করেই এ ম্যাচে জয়ী হয়েছে। বিদগ্ধজনের বিশ্লেষণ কতটা নিখুঁতভাবে ভুল প্রমাণ করা যেতে পারে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হতে পারে গতকালের ম্যাচে আর্জেন্টিনার অনবদ্য পারফরম্যান্স। একটা দল হিসেবেও তারা কতটা উন্নতিলাভ করেছে সেটারও একটা ক্যানভাস হতে পারে গতকালের ম্যাচ।

এটি ছিলো মেসিময় ম্যাচ। আচ্ছা বলুন তো গতরাতের খেলা দেখে কখনও কি আপনার মনে হয়েছে ক্রোয়েশিয়া আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়ী হতে পারে? আর্জেন্টিনা বিরোধী শিবিরের কেউ তেমন ভাবলেও হয়তো ভাবতে পারেন। তবে বাস্তবে সেটা ঘটা অবাস্তবই ছিলো! কারণ আর্জেন্টিনার রয়েছে একজন অপূর্ব জাদুকর- মেসি; যেন হ্যামিলিয়নের বংশীবাদক। তার পায়ের মোহনবাঁশিতে তিনি কি না করতে পারেন বলেন? আমাদের জীবনের কৈশোরে আমরা ম্যারাডোনা জাদু দেখেই আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়েছিলাম। এখন দেখছি মেসিকে। ২০১৪ তে ফাইনালে গিয়েও তিনি শিরোপা জেতাতে পারেননি। যেমন ১৯৯০ এ ফাইনালে গিয়ে পারেননি ম্যারাডোনাও। কিন্তু ১৯৮৬ এ আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করার কৃতিত্ব তো তারই। মেসির এই একটা জায়গায়ই অপূর্ণতা রয়ে গেছে। জেতা হয়নি কোনো বিশ্বকাপ! এবার তার জন্য সে সুযোগ তৈরি হয়েছে আবারও। প্রশ্ন হচ্ছে, ফাইনাল ম্যাচ (প্রতিপক্ষ ফ্রান্স নাকি মরক্কো যদিও তা ঠিক হবে আজ রাতে) জিতে মেসি কি পারবেন তার অতৃপ্ত মনের এ ক্ষুধা নিবারণ করতে?

Advertisement

এ অবধি মেসিকে আমরা যে ফর্মে দেখতে পাচ্ছি তাতে একজন দর্শক হিসেবে উপরের প্রশ্নের উত্তর দিতে বেগ পাওয়ার কথা না কারোরই। প্রতিটি ম্যাচে তার যে ক্যারিশমা তা তো রীতিমতো চোখে লেগে রয়েছে। গতকালের ৩য় গোলটির কথাই আলাদাভাবে ভাবুন! আলভারেজ যে গোলটি করলেন সেটা তো মেসির অনবদ্য নৈপুণ্যের জন্যই সম্ভবপর হলো! আগের গোলটিও মেসির এসিস্টেই হয়েছে। নিজে তো পেনাল্টি থেকে গোল করেছেনই। বিশ্বকাপে টোটাল গোল সংখ্যায় ছাড়িয়ে গেছেন বাতিগোল খ্যাত বাতিস্তুতাকেও। ফাইনালেও মেসি ম্যাজিক চলমান থাকবে সে আশা তাই করাই যায়। ভাগ্যদেবী তার নিজ আশীর্বাদপুষ্ট সন্তানকে একটু আলাদা দৃষ্টিতে দেখবেন, তার হাতে তুলে দিতে চাইবেন আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি( কারণ এটাই হয়তো ফুটবল জাদুকর মেসির শেষ বিশ্বকাপ)-আমরা ভক্তকুলও সে প্রার্থনা সর্বান্তকরণে তো করতেই পারি!

পরিশেষে বলব, বিশ্বকাপ জেতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মেসির হাতে সম্মানজনক একমাত্র এ অধরা বিশ্বকাপ ট্রফিটি উঠে আসুক সেটা চাওয়াটা এখন আর শুধু আবেগীয় নয় বরং একইসাথে যৌক্তিকও বটে!প্রার্থনা করি টিম আর্জেন্টিনা জ্বলে উঠুক ফাইনালে। জ্বলে উঠুক মেসি। ফাইনালও যেন হয়ে ওঠে মেসিময়! মেসি ঝলকেই ঝলকে উঠুক বিশ্বকাপ ফাইনাল।

লেখক: চিকিৎসক।

এইচআর/জেআইএম

Advertisement