আইন-আদালত

ফখরুল-আব্বাস ডিভিশন পেয়েছেন, হাইকোর্টকে জানালো রাষ্ট্রপক্ষ

কারাগারে ডিভিশন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিএনপির দুই নেতার পক্ষে ডিভিশন চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাইকোর্টকে এমন তথ্য জানান।

পরে আদালত এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য ও আদেশের অনুলিপি দেখার পর বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।

হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আদেশের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

Advertisement

সরকারের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার ডিভিশন কার্যকর করার বিষয়টি আদালতকে জানান।

এসময় বিএনপি নেতাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডিভিশন কার্যকর করার বিষয়ে ডিএজির বক্তব্যের সমর্থনে লিখিত আদেশ আদালতে দাখিলের আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করে বুধবার দুপুর ১২টায় এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য নির্ধারণ।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আদালতকে জানিয়েছি, মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) থেকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত নথিও আদালতে উপস্থাপন করে দেখিয়েছি। সেজন্য তাদের রিট আবেদন প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির আইনজীবীরা নিশ্চিত হতে চান আসলেই মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে কি না। এ কারণে আদালত আদেশের জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করেছেন।’

Advertisement

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

তাদের সহায়তা করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল ও ব্যারিস্টার ফজলুর রহমান মণ্ডল জুয়েল। শুনানিকালে মির্জা ফখরুল ও আব্বাসের স্ত্রী ছাড়াও শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের পক্ষে তাদের স্ত্রীরা রিট করেন। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুজনের পক্ষে পৃথক দুটি রিট করা হয়। মির্জা ফখরুলের জন্য কারাগারে ডিভিশন চেয়ে তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম রিট করেন। আর মির্জা আব্বাসের জন্য কারাগারে ডিভিশন চেয়ে রিট করেন তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস।

রিটের বিষয়টি জানিয়ে তাদের আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস উভয়ই সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। এ কারণে আইন অনুসারে তারা কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। অথচ কারা কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করে তাদের সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার খর্ব করেছে। তাই পৃথক দুটি রিট করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের বাসায় গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পৃথক অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুজনকে প্রথমে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে।

বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় ১১ ঘণ্টা পর দুজনকে গ্রেফতারের কথা জানায় ডিবি। তখন ডিবি আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছিল, ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলা, উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ফখরুল ও আব্বাস জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন। সোমবার তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।

৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত ও অর্ধশত আহত হন।

সংঘর্ষের পর পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালায়। ঘটনার পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় পৃথক চারটি মামলা করে পুলিশ। এতে দুই হাজার ৯৭৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭২৫ জনের। তবে নাম উল্লেখ করা বিএনপির নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস ছিলেন না।

বিএনপি বলছে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় তাদের গণসমাবেশের যে কর্মসূচি ছিল, মূলত সেটি বানচাল করার উদ্দেশ্যেই পুলিশ ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করেছে।

এফএইচ/এএএইচ/এমএস