আন্তর্জাতিক

ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন কমবে, বাড়বে ভ্রমণ-বিনোদনে

মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে বৈশ্বিক বিজ্ঞাপনের বাজারে যে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির আশা জেগেছিল, তা এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুটি মিডিয়া-বায়িং কোম্পানি ২০২২ সালের পর ২০২৩ সালেও বিজ্ঞাপন ব্যয়ে মন্দাভাব থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে।

Advertisement

তারা জানিয়েছে, নতুন বছরেও বিজ্ঞাপন বিক্রি প্রত্যাশা অনুযায়ী হবে না। এর জন্য চীনে ব্যবসায় ধীরগতি এবং বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ও মন্দার শঙ্কাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডব্লিউপিপি’র গ্রুপএম গত জুনের পূর্বাভাসে বলেছিল, ২০২২ সালে বৈশ্বিক বিজ্ঞাপন ব্যয় প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। তবে তাদের সবশেষ পূর্বাভাস বলছে, এ বছর বিজ্ঞাপন ব্যয় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে মূলত ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মিডিয়া ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানিটি তাদের পূর্বাভাসে ২০২৩ সালে বিজ্ঞাপন ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাব্য হারও কমিয়ে এনেছে। গত জুনে তারা এর হার ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বললেও নতুন পূর্বাভাসে তা ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা দেখিয়েছে।

Advertisement

অন্যদিকে, ইন্টারপাবলিক গ্রুপের ম্যাগনার অনুমান বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপন ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়বে, যা চলতি বছরের চেয়ে ২ শতাংশ কম। তবে গত জুনের পূর্বাভাসে তারা নতুন বছরে বিজ্ঞাপন ব্যয় বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছিল।

বৈশ্বিক বিজ্ঞাপনের বাজারে এই মন্দাভাবের কারণ হিসেবে ‘ক্ষয়প্রাপ্ত সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি’র কথা উল্লেখ করেছে ম্যাগনা।

কোম্পানিটির গ্লোবাল মার্কেটিং ইন্টেলিজেন্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট লেটাং সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘মন্দাভাব এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।’

এ ধরনের পূর্বাভাস মার্কিন মিডিয়াগুলোকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারে। বড় বড় টেলিভিশন মালিক বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে অধিক প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে চুক্তি করতে রাজি হয়েছেন। সাধারণত বাজারে যখন অস্থিরতা থাকে বা মন্দাভাব শুরু হয়, তখন এই কৌশল অবলম্বন করা হয়।

Advertisement

কমকাস্ট, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি, এএমসি নেটওয়ার্কসহ অনেক টিভি কোম্পানি খরচ কমানোর জন্য এরই মধ্যে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে।

এই সময়ের কিছু বিষয় আবার সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। গ্রুপএম এক গবেষণাপত্রে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সালের শেষের মাসগুলোতে লাইভ স্পোর্টস বাদে সবচেয়ে বেশি দেখা টিভি প্রোগ্রামগুলো ছিল স্ট্রিমিং প্রোভাইডারদের। লাইভ স্পোর্টসে এখনো রাজত্ব করছে সাধারণ নেটওয়ার্ক ও ক্যাবল চ্যানেলগুলো।

‘কিন্তু অ্যাপল, অ্যামাজন এবং অন্যান্য অপ্রচলিত খেলোয়াড়রা স্পোর্টস রাইটসের বাজারে প্রবেশ করলে প্রথাগত দর্শকদের এই শেষ ঘাঁটিরও নিশ্চয়তা থাকবে না। ক্যাবল ও স্যাটেলাইট প্রোভাইডারদের ভিডিও গ্রাহক হারানোর ক্ষতি অবশ্যই স্পোর্টস একা পূরণ করতে পারবে না।’

গ্রুপএমের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রে গৃহস্থালি পর্যায়ে মাল্টিচ্যানেল ভিডিও প্রোগ্রামিং ডিস্ট্রিবিউটর (এমভিপিডিএস) ও ভার্চুয়াল এমভিপিডিসহ পে-টিভি গ্রাহকের হার ২০২৫ সালে ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

ম্যাগনার হিসাবে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞাপন বিক্রি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে এটি ২০২২ সালের তুলনায় কম। চলতি বছর দেশটিতে বিজ্ঞাপন ব্যয় ৬ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৩১ হাজার ২০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপনী সংস্থাটির নোটে আরও বলা হয়েছে, আগামী বছর মিডিয়া কোম্পানিগুলো প্রতিকূলতার মুখে পড়বে। সুদের উচ্চহার ও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে নিম্নমুখী গতির কারণে আর্থিক সেবা সম্পর্কিত সংস্থাগুলো বিজ্ঞাপন থেকে সরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারকরাও বিজ্ঞাপনী খরচ কমিয়ে দিতে পারে।

ম্যাগনা বলছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশের অনিশ্চয়তা ও সরবরাহ সমস্যার কারণে স্বয়ংক্রিয় বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বড় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। তবে বিনোদন, ভ্রমণ ও জুয়া সম্পর্কিত কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন ব্যয় বাড়তে পারে।

সূত্র: ভ্যারাইটি

কেএএ/এসএইচএস/জেআইএম