আন্তর্জাতিক

এশিয়ার আবাসন ব্যবসায় অশুভ ছায়া

এশিয়ার আবাসন ব্যবসায় চীনের অবস্থা অনেকটা বড় ভাইয়ের মতো। এ অঞ্চলে যখনই সম্পত্তি সম্পর্কিত বড় কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়, তখন অগ্রভাগে দাঁড়িয়ে বিপদের বেশিরভাগটাই নিজের করে নেয় চীন। তবে এশিয়ার অন্যান্য অংশে, বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে সফল অঞ্চলগুলোর পরিস্থিতিও গুরুতর উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

Advertisement

একসময় ‘এশিয়ান টাইগার’ নামে পরিচিত দেশ ও অঞ্চলগুলোতে বাড়ির দাম বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সাম্প্রতিক আর্থিক-স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীতে বাড়ির গড় দাম স্থানীয় আয়ের ১৯ গুণ এবং তাইওয়ানের রাজধানীতে বাড়ির গড় দাম স্থানীয় আয়ের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি।

টেক্সাসভিত্তিক থিংক-ট্যাংক আরবান রিফর্ম ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, হংকংয়ে আয় ও বাড়ির দামের পার্থক্য ২০ দশমিক ৭ গুণ। অর্থাৎ এ অঞ্চলে বাড়ির দাম পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরগুলোর চেয়েও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর যথাক্রমে সান জোসে এবং বৃহত্তর লন্ডন। এ দুটি শহরে আয় ও বাড়ির দামের পার্থক্য যথাক্রমে ১২ দশমিক ৬ গুণ এবং আট গুণ।

Advertisement

বিশ্বব্যাপী সুদের সর্বনিম্ন হার বাড়ির দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। ২০০৭-০৯ সালের আর্থিক সংকটের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার বেশিরভাগ ব্যাংককে বছরের পর বছর ধুঁকতে হয়েছে। সেই তুলনায় পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো অনেকটাই কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাছাড়া, পরবর্তী বছরগুলোতে চীনের দ্রুত প্রবৃদ্ধি প্রতিবেশীদেরও এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।

এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে গৃহস্থালি ঋণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। হংকংয়ে এর হার জিডিপির ৯৪ শতাংশ, তাইওয়ানে ৯৭ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যথাক্রমে রেকর্ড ৭৭ শতাংশ ও ৮৫ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি।

কিন্তু পূর্ব এশিয়ায় যে শক্তির জোরে আবাসন ব্যবসা এগিয়ে যাচ্ছিল, তা দ্রুত কমতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, যদিও পশ্চিমের অনেক দেশের তুলনায় এর হার কম। হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের মুদ্রাগুলো সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করে যার যার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের দ্রুত সুদের হার বাড়ানোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে এ অঞ্চলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক কর্তৃপক্ষও সুদের হার বাড়িয়েছে।

এশিয়ার আকাশে পরিবর্তনের অশুভ লক্ষণ এরই মধ্যে দৃশ্যমান। স্থানীয় ব্যাংকগুলো বন্ধকীর হার বাড়াতে শুরু করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন গৃহস্থালি ঋণে গড় সুদের হার গত সেপ্টেম্বর মাসে ৫ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগে ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

Advertisement

রিয়েল এস্টেট সংস্থা জেএলএল হংকং’র চেয়ারম্যান জোসেফ সাং বলেছেন, হংকংয়ে গত দুই দশক আবাসন ব্যবসায় দুর্দান্ত সময় গেলেও আগামীতে বাড়ির দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে৷

কিছু কিছু দেশ আবার আর্থিক হুমকি মোকাবিলার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হারাতে বসেছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ান উভয়ই সেমিকন্ডাক্টর, ইলেকট্রনিক্স ও শিল্প পণ্য রপ্তানি থেকে বিপুল মুনাফা অর্জন করে। এর মাধ্যমে কারেন্ট অ্যাকাউন্টের উদ্বৃত্ত নিয়ে তারা গর্ব করে। সম্প্রতি আমদানি করা বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান মূল্য সেই মুনাফায় ধস নামিয়েছে।

অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক পুঁজি প্রবাহের ওপর আরও নির্ভরশীল করে তোলে। এই প্রবাহ অত্যন্ত পরিবর্তনশীল এবং আতঙ্কের মুহূর্তে এটি সম্পত্তির দামে ধস নামাতে পারে। ১৯৯৭-৯৮ সালে এশিয়ায় আর্থিক সংকটের আগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অনেক দেশেই অস্বাভাবিক কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি ছিল। যদিও এই মুহূর্তে এ অঞ্চলে আর্থিক ভারসাম্যহীনতা তুলনামূলকভাবে কম।

কিন্তু সম্পত্তির দাম কমে যাওয়া কীভাবে প্রবৃদ্ধিকে লাইনচ্যুত করতে পারে, তার আদর্শ উদাহরণ জাপান। কয়েক দশকের ঊর্ধ্বগতির পর ১৯৮৯-৯০ সালে দেশটিতে সম্পত্তির দাম কমতে শুরু করে। এসময় জমি ও বাড়ির নিম্নমুখী মূল্য ভোক্তা এবং করপোরেশনগুলোকে মিতব্যয়িতার পথে ধাবিত করে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে একপ্রকার থামিয়েই দিয়েছিল। ফলে জাপানের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে যে মিল দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আশঙ্কার কারণ হওয়া উচিত।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

কেএএ/এসএইচএস/জিকেএস