ভিটামিন সি’যুক্ত বিভিন্ন ফলের মধ্যে পেয়ারা অন্যতম। সহজলভ্য এই ফল এখন সারাবছরই পাওয়া যায় বাজারে। অতি-সুস্বাদু এই ফলে আয়রনের সঙ্গে ভিটামিন সি ও এ সমৃদ্ধ।
Advertisement
যদিও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল হিসেবে বিবেচিত পেয়ারা, তবে শীতে এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল সবচেয়ে বেশি খান সবাই। কারণ এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
তবে জানলে অবাক হবেন, শুধু পেয়ারা নয় এর পাতাও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। পেয়ারা পাতার উপকারিতা বহুগুণ।
খারাপ কোলেস্টেরল থেকে শুরু করে ওজন কমানো এমনকি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও পেয়ারা পাতা খুবই কার্যকরী। তবে কীভাবে ব্যবহার করবেন এই পাতা। জেনে নিন উপায়-
Advertisement
ওজন কমাতে সাহায্য করে
একটি মাঝারি আকারের পেয়ারায় মাত্র ২৭ ক্যালোরি থাকে ও তা মুহূর্তেই পেট ভরার অনুভূতি জোগায়। ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এই ফল।
তাই মধ্য সকাল কিংবা বিকেলের স্ন্যাকস হিসেবে পেয়ারা খেলে ভাজাপোড়া খাওয়ার প্রবণতা কমবে। এমনকি এ সময় এক কাপ পেয়ারা পাতার চা পানেও আপনি খুব দ্রুত ওজন কমাতে পারবেন।
হজম প্রক্রিয়া বাড়ায়
Advertisement
পেয়ারার পাতায় অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে, যা আমাদের পাচনতন্ত্রের অবাঞ্ছিত অণুজীবকে মেরে ফেলে। এতে অন্ত্রের গতিবিধি উন্নত হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও অ্যাসিডিটির সমস্যাও সারে। শুধু তাই নয়, পেয়ারা পাতার চা পেটে আটকে থাকা গ্যাস দূর করতে ডিটক্সের মতো কাজ করে।
ত্বক ও চুলের গঠন উন্নত করে
ত্বক ও চুলের যত্ন নিতেও উপকারী পেয়ারা পাতা। এজন্য প্রতিদিনের ডায়েটে পেয়ারা পাতা অন্তর্ভুক্ত করুন। শুধু পেয়ারা পাতার সেদ্ধ পানি পান করলেই আপনার ত্বক ভিটামিন সি ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ ডোজ পাবে।
পেয়ারার পাতায় থাকা উপাদানসমূহ ফ্রি র্যাডিক্যালকে ধ্বংস করে (যা চুলের গোড়াকে দুর্বল করে দেয় ও আমাদের ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস, পিম্পল ইত্যাদি সৃষ্টির অন্যতম কারণ)। স্বাস্থ্যকর ভিটামিনের উপস্থিতি বার্ধক্যজনিত লক্ষণ কমাতে কাজ করে।
কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে হার্ট অ্যাটাক, স্থূলতা ও স্ট্রোক এসবই মূলত অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে সৃষ্ট উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের কারণে বেশি ঘটে। তাই এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
আপনি যদি এরই মধ্যে এসবে ভোগেন তাহলে পেয়ারা পাতার চা বেছে নিন, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ও ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতিতে সহায়তা করে।
এটি এইচডিএল বাড়াতে ও এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদযন্ত্র ও লিভার সুস্থ থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে ভরসা রাখুন পেয়ারা পাতায়। এজন্য পেয়ারা পাতার চা পান করুন। ব্রঙ্কাইটিস, দাঁতের ব্যথা থেকে শুরু করে অ্যালার্জি, ক্ষত, গলা ব্যথা ও দুর্বল দৃষ্টির সমস্যায় পেয়ারা পাতা খুবই উপকারী।
এই পাতায় থাকা অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আমাদের সিস্টেমের বিপজ্জনক কোষ ও ভাইরাসগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে ও ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
এসব উপাদান মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ কারণেই দ্রুত চিকিৎসার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে অসংখ্য মানুষ পেয়ারা পাতার ওপর নির্ভর করে।
প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করে
পেয়ারা পাতা যৌন স্বাস্থ্য ও উর্বরতার উন্নতির জন্যও সমানভাবে উপকারী বলে মনে করা হয়। একজন পুরুষ বা নারী উভয়ই তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এটি গ্রহণ করতে পারে। পুরুষদের জন্য এটি শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে।
নারীদের জন্য এটি মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এজন্য পেয়ারা পাতার চা সবচেয়ে উপকারী। পেয়ারা পাতা ও অশ্বগন্ধা কম লিবিডো বা উর্বরতার সমস্যা সারাতে দারুন উপকারী।
কীভাবে পেয়ারা পাতার চা বানাবেন?
মাঝারি আঁচে একটি প্যানে ১ লিটার পানি গরম করে নিন। এবার এতে ৫-৬ পেয়ারা পাতা মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। পাতা সেদ্ধ করুন যতক্ষণ না ১/৩ তরল অবশিষ্ট থাকে। তারপরে পেয়ারা পাতা ছেঁকে পানিটুকু ছেঁকে নিন ও চায়ের মতো পান করুন। দিনে দু’বার পান করুন এই চা।
পেয়ারা পাতা আরও যেভাবে ব্যবহার করবেন
পেয়ারা পাতা অন্যান্য পদ্ধতিতেও ব্যবহার করতে পারেন। চুল বড় করতে বিভিন্ন হেয়ার মাস্কের সঙ্গে মেশাতে পারেন পেয়ারা পাতা।
যে কোনো স্থানের ব্যথা উপশমের জন্য ও তাৎক্ষণিক ফলাফল পেতে পেয়ারার পাতা বেটে রস বের করুন। এটি যে কোনো তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যথার স্থানে প্রয়োগ করুন। তাৎক্ষণিক ব্যথা থেকে পরিত্রাণ মিলবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/জেআইএম