দেশজুড়ে

বিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন ভবনই যেন একটি ‘পাঠাগার’

মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন ধুরাইল। এর চারদিক ঘিরে আছে আড়িয়াল খাঁ নদ। নদীর ভাঙা-গড়ার খেলায় ইউনিয়নটির মানচিত্র পাল্টেছে একাধিকবার। এখানে ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। তবে উত্তর বিরঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কিছুটা ব্যতিক্রম। পুরো জেলায় চরাঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয়টি শিক্ষার বাতিঘর নামেও খ্যাতি পেয়েছে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় নদী বেষ্টিত এ ইউয়নের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। সে সময় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল এখানকার কোমলমতি শিশুরা।

১৯৪৩ সালে উত্তর বিরঙ্গল গ্রামের মনোহর মন্ডল ও তার স্বজনরা মিলে ৩৩ শতাংশ জমি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন। প্রতিষ্ঠা হয় উত্তর বিরঙ্গল প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই থেকে আজও নদী বেষ্টিত এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বিদ্যালয়টি।

বিদ্যালয়ের সামনে যেতে চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন সড়ক। যার নাম দেওয়া হয়েছে শেখ রাসেল কচিকাঁচা সড়ক। বিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারে একটি তোরণ আছে। যা নীলকণ্ঠ ফুল গাছের লতায় আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আছে বঙ্গবন্ধু পুষ্পকানন। যাতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছও।

Advertisement

এছাড়া বিদ্যালয় ভবনের ওয়াল ও পিলারে শোভা পাচ্ছে পবিত্র কোরআন, আল হাদিস, শ্রীমদ্ভগবদ গীতা, বেদ, উপনিষদ, মুনি, ঋষি ও সাহিত্যিকদের অমিয় বাণী, ইংরেজি ও বাংলা বর্ণমালা। আঁকা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আলপনাও। দেখেই মনে হচ্ছে ভবনই যেন একটি পাঠাগার।

শিশুদের পড়াশোনায় আগ্রহ সৃষ্টির জন্য প্রাক-প্রাথমিকের কক্ষটিকেও আরও দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে। দ্বিতল ভবনের সিঁড়ির দুপাশে লাগানো হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। বিদ্যালয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন দৃশ্য আঁকা হয়েছে।

এছাড়া বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পুষ্পকাননে রোপণ করা হয়েছে শিউলি, বেলি, হাসনাহেনা, গোলাপ, রঙ্গণ, জবাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রুপা জানায়, আমাদের বিদ্যালয়টি অনেক সুন্দর। আমরা সবাই এই বিদ্যালয়কে ভালোবাসি।

Advertisement

পঞ্চম শ্রেণির আরেক ছাত্রী স্বপ্না খান জানায়, বিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখে বাড়ির পড়াটা বিদ্যালয়ে বসেই করতে ইচ্ছে হয়। আমাদের শিক্ষকরা আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে পড়ান। আমাদের বিদ্যালয়টি অনেক ভালো।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপা রাণী মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, আমি একজন শিক্ষক। আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি। বিদ্যালয়টির অনেক শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন স্থানে উচ্চ পদে চাকরি করছেন। বিদ্যালয়টির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার স্বপ্ন ছিল বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য ও শিক্ষার্থীদের মন আকৃষ্ট করতে বিদ্যালয়টিকে মনের মতো সাজানোর। সেই আলোকেই আমার দুজন সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওবাইদুর রহমান খান সম্প্রতি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি একটি ব্যস্ততম সড়কের পাশে। খেলার মাঠটিও নিচু। তাই প্রধান শিক্ষক বাউন্ডারি ও মাঠ ভরাটের আবেদন করেন। মাঠ ভরাট হয়েছে। বাউন্ডারি নির্মাণও চলছে।

এসজে/জেআইএম