বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে ১০ ডিসেম্বর কী হবে? তা নিয়ে সাধারণ মানুষ যেমন উদ্বিগ্ন ছিলেন, তেমনি উদ্বিগ্ন ছিলেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। যার ফলে টানা দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে দেখা দেয় লেনদেন খরা। ধারাবাহিকভাবে লেনদেন কমতে কমতে ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় চলে যায়। তবে, গণসমাবেশ শেষ হতেই সেই উদ্বেগ যেন অনেকটাই কেটে গেছে। যার সুফল দেখা গেছে শেয়ারবাজারেও।
Advertisement
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১১ ডিম্বের) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে, বেড়েছে তার প্রায় আটগুণের। বিএনপির গণসমাবেশের পরের দিনেই শেয়ারবাজারে এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মিললো।
অবশ্য দাম বাড়া বা কমার তুলনায় ডিএসই ও সিএইতে দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ক্রেতার দেখা তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়— রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লেনদেনের শেষপর্যন্ত অব্যাহত থাকে। সেইসঙ্গে দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে ফ্লোর প্রাইসের বাইরে থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।
Advertisement
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৬৩ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮টির। আর ২৪৩টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৩৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২০৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৯৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১১৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারে যেকোনো বিষয় প্রভাব ফেলে। ঝড়-বৃষ্টি, বন্য হলেও এর প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। সেখানে রাজনৈতিক বিষয় প্রভাব ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। ১০ ডিসেম্বর ঘিরে কী হবে, তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন ছিল। যে কারণে শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যায় এবং দরপতন হয়। তবে, এখন সেই উদ্বেগ অনেকটাই কেটে গেছে। যে কারণে লেনদেন বেড়েছে এবং ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে বাজার।
Advertisement
তিনি বলেন, বিশেষ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইচ্ছার বাইরে গিয়ে ফ্লোর প্রাইস দিয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। এ কারণে লেনদেন কম হচ্ছে। তবে, আমরা আশাবাদী এ অবস্থা থেকে বার বেরিয়ে আসছে। আমরা চাই শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের ওপরে উঠে আসুক এবং বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাক।
সূচক ও লেনদেন বাড়ার দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে স্যালভো কেমিক্যালের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের ৩৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২০ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেনেক্স ইনফোসিস, বেক্সিমকো ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, আমরা নেটওয়ার্ক, আমরা টেকনোলজি, চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং মুন্নু এগ্রো।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২টির এবং ৪৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এমএএস/এমএএইচ/জিকেএস