রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইমায়েত হোসেন। প্রতিদিন পুরান ঢাকার লালবাগের বাসা থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে গুলশান-২ নম্বরের অফিসে আসেন। পথে পথে যানজট, যানবাহনের হর্নের বিকট শব্দ ও ধুলোবালি মেখে অফিসে পৌঁছাতে কমপক্ষে পৌনে এক ঘণ্টা সময় লেগে যায় তার। কিন্তু আজ (শনিবার) অফিস গেটে পৌঁছে ঘড়িতে তাকিয়ে হতবাক হয়ে যান ইমায়েত। বাসা থেকে অফিসে মাত্র ১৫ মিনিটেই পৌঁছেছেন তিনি।
Advertisement
জাগো নিউজকে ইমায়েত হোসেন বলেন, সত্যিই এ এক অন্যরকম ঢাকা। রাজপথ একেবারে ফাঁকা। অধিকাংশ রাস্তায় এক-দুইটি রিকশা, মোটরসাইকেল কিম্বা প্রাইভেটকার চলছে। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বসে ঝিমোচ্ছেন। বেইলি রোড ও হাতিরঝিলে দিনের বেলাতেই রীতিমতো গা ছমছম পরিবেশ। সাধারণত ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ নগরবাসী যখন গ্রামে যান তখন কয়েকটি দিন ঢাকাতে এমন চিত্র দেখা যায়।
এমন কথা শুধু ইমায়েত হোসেনের নয়, আজ যারা বাইরে বের হয়েছেন তাদের প্রায় সবারই একই অভিমত। তারা বলছেন, অন্যান্য দিন ঢাকা শহরের কোনো এলাকা থেকে সপ্তাহের যে কোনো দিন বাইরে বের হলেই নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে কি না তা নিয়ে নগরবাসীর মনে সংশয় থাকে।
কারণ দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ রাজধানীতে মানুষ কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে থাকেন। একদিকে প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তাঘাটের অপ্রতুলতা, অন্যদিকে অধিকসংখ্যক রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও ছোট-বড় বাস চলাচলের কারণে যানজট লেগেই থাকে। কিন্তু আজ রাজধানীর চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
Advertisement
আজ বহুল আলোচিত ১০ ডিসেম্বর। গত কয়েক মাস ধরে এ দিনটি নিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করবে বলে আগেই ঘোষণা দেয়। এক সময়ের ডাকসাইটে ছাত্রনেতা, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বর্তমানে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান কিছুদিন আগে এক সভায় ১০ ডিসেম্বরের পর তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে এমন ঘোষণা দিলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এমন বক্তব্যে নড়েচড়ে বসে সরকারি দল আওয়ামী লীগও। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টন কার্যালয়ে সভা করবে বলে বারবার বলে আসছিলেন।
দিন তিনেক আগে (৭ ডিসেম্বর) বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
পরে বহুল আলোচিত এ সমাবেশ হবে কি না তা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নয়াপল্টনের বিকল্প রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করতে রাজি হয়। আজ সেখানে বিএনপির সমাবেশ চলছে।
Advertisement
এ সমাবেশে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ সমবেত হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেন কোনো সহিংসতা না ঘটে এজন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাড়া-মহল্লাসহ সর্বত্র সতর্ক পাহারায় থাকতে বলেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আজ ভোর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে জড়ো হয়ে পাহারা বসিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশপথে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা সমবেত হয়ে ক্যাম্পাসে চলাচল করা যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। মোটরসাইকেল নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছেন তারা। এছাড়া পাড়া-মহল্লা থেকে রাজপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক পাহারা বসিয়েছেন।
রাজধানীর লালবাগ, ধানমন্ডি, রমনা, তেজগাঁও, বাড্ডা ও গুলশানসহ বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে বিএনপির এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কায় নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হননি।
রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রত্যেক শনিবার ছুটির দিনে তিনি সারাসপ্তাহে জমে থাকা কাজ বা আত্মীয়ের বাসায় যান। আজও শনির আখড়ায় বৃদ্ধ মাকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে তার মা-ই তাকে ফোন করে ঘর থেকে বের হতে মানা করেছে বলে জানান তিনি।
দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দুজন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল দাঁড়িয়ে খোশগল্প করছিলেন। জাগো নিউজকে তারা বলেন, অন্যান্য দিন দুপুরে যানবাহনের এত চাপ থাকে যে, গল্প তো দূরের কথা যানজট সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। আজ সকাল থেকেই রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম।
এমইউ/আরএডি/এএসএম