গতরাতে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ দুটি ছিল সত্যিকার অর্থেই উত্তেজনায় ঠাসা। এমনিতেই আর্জেন্টিনা অথবা ব্রাজিলের ফুটবল খেলা নিয়ে সমর্থকদের ভেতরে এক ধরনের আবেগ, উৎকণ্ঠা কাজ করে। তার উপরে সেটা যদি হয় বিশ্বকাপ ফুটবল তাহলে তো কথাই নেই। গতকাল অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালে যারা রাত জেগে খেলা দেখেছেন তাদের শারীরিক ও মানসিক ধকল গেলেও খেলার শিহরণটা ঠিকই নিতে পেরেছেন। জমজমাট লড়াই তারা দেখতে পেয়েছেন।
Advertisement
কোয়ার্টার ফাইনালে টানটান উত্তেজনা নিয়ে ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া এবং আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে খেলা হয়েছে। দুটো খেলাই অতিরিক্ত সময় গড়িয়ে টাইব্রেকারে এসে নিষ্পত্তি হয়েছে। আর তাতে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়ার কাছে পরাজিত হলেও নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে আর্জেন্টিনা। সেমিতে এই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেই খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
খেলায় হার-জিত তো থাকবেই। গতরাতে ব্রাজিল হেরে যাওয়ায় আমাদের দেশে ব্রাজিল সমর্থকদের হৃদয় নিদারুণ কষ্টে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। হার-জিত থাকবেই কথাটি যত সহজে বলা যায় ঠিক তত সহজে কি আর মেনে নেয়া যায় বলেন? কারণ এর সাথে মিশে থাকে আবেগ। ফলে প্রিয় দল জয়ী হলে যেমন বর্ণনাতীত আনন্দ লাভ হয় পরাজিত হলে কষ্ট লাগাটাও তেমনি স্বাভাবিক। তবে আবেগ নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় হলেই ভালো হয়। কারণ আবেগের আতিশয্যে আমরা অনেক সময় আর সমর্থক না থেকে সেটাকে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে যাই। এটা ঠিক নয়। বরং ফলাফলকে সহজভাবে নিতে শিখতে হবে।
ব্রাজিল টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় একদিকে যেমন সমর্থকদের মনে কষ্ট লেগেছে অন্যদিকে ফুটবল বিশ্ব দুই ল্যাটিন জায়ান্ট ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার দ্বৈরথ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হলো। আমরা যে যে দলের সমর্থকই হই না কেন মূলত সেটা তো ফুটবলকে ঘিরেই। তাই না? ফলে সেমিতে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হলে তা হতো দেখার মতো বিষয়। অনেকে অবশ্য এ শঙ্কাও প্রকাশ করছিলেন যে, তাতে দেশের অনেক জায়গায় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে। ফলে এ দুদলের মধ্যে দেখা না হলেই ভালো হয়।
Advertisement
গতরাতের ফলাফল যা হলো তাতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নিয়ে যারা শংকা প্রকাশ করছিলেন তারা এখন অনেকটা নির্ভার হতে পারবেন। কারণ গতকাল ব্রাজিল হেরে গিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। ফলে এ দুই দেশের দ্বৈরথ এবার আর দেখা হবে না।
কোয়ার্টারে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ী হওয়ায় ল্যাটিন আমেরিকা থেকে শুধু এখন আর্জেন্টিনাই শিরোপা দৌড়ে টিকে রইলো। যদি ব্রাজিলও জিততো তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যেতো যে, বিশ্বকাপের ফাইনাল দুই মহাদেশ-দক্ষিণ আমেরিকা বনাম ইউরোপের মধ্যে হতে যাচ্ছে। এখন শুধু আর্জেন্টিনা সেমিতে উঠতে পারায় সে নিশ্চিয়তা এই মুহূর্তে দেয়া অবশ্য সম্ভব নয়৷ কারণ ইউরোপ বনাম ল্যাটিন আমেরিকার ফাইনাল দেখতে হলে আমাদেরকে সেমিতে আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়ার খেলার দিকে নজর রাখতে হবে। সেখানে আর্জেন্টিনা জয়ী হলেই কেবল ইউরোপ বনাম ল্যাটিন আমেরিকার দ্বৈরথ দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। এ মুহূর্তে তাই শিরোপা কি আবার ইউরোপেই যাবে নাকি ল্যাটিনে ব্যাক করবে বহু বছর পরে হলেও- আগ বাড়িয়ে সেটা নিয়ে বলাটা মুশকিলই বটে৷ তবে যারা চান শিরোপা ল্যাটিনে আবার ফিরুক তাদের কাছে আর্জেন্টিনার সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে জয় দেখতে চাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ফাইনাল থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে আর্জেন্টিনা। ভক্তরা চাইছেন মেসির হাতেই উঠুক এবারের কাতার বিশ্বকাপ।
পরিশেষে সেমিতে পৌঁছানোর জন্য আর্জেন্টিনা টিমকে অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে প্রশ্ন রাখতে চাই, বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে এই যে দর্শক উন্মাদনা, আবেগ আমরা দেখতে পায় সেটার গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে আমাদের ফুটবল ফেডারেশন কি তাদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারেন না? নাকি দিনে দিনে ফুটবলকে আরো ক্ষয়িষ্ণু হতে দিয়ে দর্শকদের হতাশ করতেই থাকবেন?
লেখক: চিকিৎসক, শিক্ষক।
Advertisement
এইচআর/জেআইএম