জয়পুরহাটের জামালপুরের চাষি আজহার মিয়া। প্রতি বছর শীতে বাড়ির পাশের প্রায় দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি আর মুলা চাষ করতেন। এ বছর সেখানে লাগিয়েছেন ভুট্টা। কারণ গত বছর সবজির ভালো দাম পাননি তিনি।
Advertisement
আজহার বলেন, গত বছর আড়াই হাজার টাকা মণ গেছে ভুট্টা। সেখানে সবজির দর গেছে তিন-চারশো টাকা। ফলন ভালো হলেও ভরা মৌসুমে কপি-মুলার দাম পাই না। খরচই ওঠে না। সে কারণে এ বছর ফসল পরিবর্তন করেছি।
একই অবস্থা নঁওগা সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের কৃষক মঈনুলের। তিনি শীতের সবজির বদলে চাষ করেছেন আমন। খাদ্যসংকটের শঙ্কার কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
মঈনুল বলেন, শুনেছিলাম দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। সেজন্য ধান লাগিয়েছি। আমন তুলে সরিষা লাগাবো। এবার সবজি করছি না।
Advertisement
এ পরিস্থিতির কারণে চলতি বছর সবজির উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হতে পারে এমন তথ্যও উঠে এসেছে সরকারি পরিসংখ্যানেও। তথ্য বলছে, এ রবি মৌসুমে বাংলাদেশের বেশিরভাগ কৃষক লাভজনক দামের জন্য ধান এবং ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছে। কমেছে সবজির আবাদ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গত বছরের একই সময়ে দেশে ৪ লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছিল। এ বছর হয়েছে ৩ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টরে। রবি মৌসুমের প্রায় শেষভাগে এসেও এ বছর সরকারের সবজি চাষাবাদের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। এ বছর সরকারের ৬ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল।
সবজির মধ্যে প্রধান আলু চাষও এ বছর কম হয়েছে। এ পর্যন্ত সারাদেশে ১ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা গত বছর একই সময়ে ১ লাখ ২১ হাজার হেক্টর ছিল।
অন্যদিকে চলতি মৌসুমে আমন আবাদ ৫৬ লাখ হেক্টর থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ লাখ হেক্টরে। এবং ভুট্টার জমি ১ লাখ হেক্টর থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর।
Advertisement
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক গাজী এম এ জলিল জাগো নিউজকে বলেন, দুই কারণে কৃষকরা লাভজনক ফসল উৎপাদনে আগ্রহী ছিল। সেক্ষেত্রে তারা এ বছর সবজিকে সঠিক মনে করেনি।
এক, দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। সেজন্য ধানের প্রতি আগ্রহী বেশি হয়েছে। আরেকটি বিষয় শস্য ও ভুট্টার দামের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা কৃষকদের সেগুলো চাষে উৎসাহিত করেছে।
চাষিরাও বলছেন এমনটা। ভোক্তারা সবসময়ই চড়া দামে সবজি খেলেও তারা দাম পান না। একদম ভরা মৌসুমে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন ব্যয়ই অনেক সময় ওঠাতে হিমশিম খেতে হয় সবজিচাষিদের। একদিকে বীজ, সার-কীটনাশক, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বৃদ্ধি, অন্যদিকে বাজারে কঠিন ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
চাষি আজহার মিয়া বলেন, ভরা মৌসুমে ফুলকপি ১-২ টাকা পিসও বিক্রি করতে হয়। প্রায় প্রতি বছর এমন ঘটনা ঘটে। তখন সেগুলো বিক্রি না করে গরুকে খাওয়ানো ভালো। মুলার মণ নামে ৩০-৪০ টাকায়। এ টাকায় পরিবহন খরচই ওঠে না।
যদিও রাজধানী বা অন্য কোনো শহরের বাজারে এতো সস্তা দরে কখনো সবজি কিনতে পারে না সাধারণ মানুষ। ফুলকপি কিংবা মুলা কিনতে ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ টাকা গুনতে হয় ভরা মৌসুমে। আর মৌসুমের শুরুতে আরও কয়েকগুণ।
অন্যদিকে এখন সবজি চাষে খরচ বেশ বেড়েছে বলে জানান অরেক চাষি জামালপুরের ফরিদ হোসেন। তিনি বলেন, আগে সবজি ক্ষেতে দুই সপ্তাহে একবার কীটনাশক দিতে হতো। এখন পোকা ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ খুব বেড়েছে। দুদিন পরপর ক্ষেতে বালাইনাশক দিতে হয়। আর সেগুলোর দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে বেড়েছে সবজি বীজের দামও।
তিনি বলেন, এ বছর কিছু জমিতে গাজর চাষ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বীজের দাম গত বছরের থেকে কেজিপ্রতি ৫ হাজার টাকা বেড়েছে। মৌসুমের শুরুতে ছিল সাড়ে ২১ হাজার টাকা। সেজন্য কিনতে পারিনি। অন্যান্য বীজের দামও বেশি ছিল বলে জানান তিনি।
এনএইচ/এসএইচএস/জেআইএম