কৃষি ও প্রকৃতি

২ বছরে ২২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন দেলোয়ার

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের বাগানে মাল্টা, পেয়ারা, কুল, কদবেল, জাম্বুরা, লেবু, পেঁপে, দার্জিলিং কমলার পাশাপাশি চায়না কমলা চাষ হচ্ছে। চায়না কমলা চাষে বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন চাষি দেলোয়ার হোসেন।

Advertisement

উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের বাগানে চায়না কমলার ভালো ফলন হয়েছে। তার বাগানে ১০০টি চায়না কমলা গাছের মধ্যে ৬৪টি গাছে কমলা ধরেছে। প্রতিটি গাছে ২০-৩০ কেজি কমলা আছে। প্রতি কেজি কমলা ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে কমলা চাষ দেখতে আসছেন অনেকেই। তারা বাগান দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

দেলোয়ার হোসেন উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। স্নাতক পাসের পর ঢাকায় বায়িং হাউজে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি গড়ে তোলেন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালে দুই ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়েন। পরে বাড়ি ফিরে নিজেদের জমিতে পেয়ারা গাছ লাগিয়ে বাগান শুরু করেন। বর্তমানে চায়না কমলা চাষে পেয়েছেন সাফল্য।

২০১৫ সালে ১০০টি পেয়ারা গাছের চারা দিয়ে বাগান শুরু করেন দেলোয়ার। ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিলু এগ্রো ফার্ম নাম দেন এবং প্রথম ৮৫টি মাল্টা গাছ লাগান। বর্তমানে বাগানে ৮০০টি সবুজ মাল্টা ও ৩০০টি হলুদ মাল্টা গাছ আছে। ২ বছর ধরে তিনি মাল্টা, পেয়ারা, পেঁপে, আম, আমড়া, চেরি ফল ও বাউকুল বিক্রি করছেন।

Advertisement

দেলোয়ার পর্যায়ক্রমে প্রায় ৬০০ শতাংশ জমিতে ৪ হাজার পেয়ারা, ১১০০টি মাল্টা, ৬০০টি লেবু, ৩০০টি কলা, ৩৫০টি পেঁপে, ২৬০টি বারোমাসি আম, ১০০টি দার্জিলিং কমলা, ১০০টি চায়না কমলা, ৪০টি বারোমাসি আমড়া, ৩০টি লটকন, ২৫টি কদবেল, ২০টি জাম্বুরা, ১৪০টি কাশ্মীরিকুল ও বনসুন্দরী, ৮টি ডালিম, ৬টি চেরি ফলসহ বাউকুল, আপেলকুল ও রামবুটান গাছ রোপণ করেছেন।

তিনি ২০১৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে রামবুটানের চারা, ২০২০ সালে মালয়েশিয়া থেকে এবুকেটরের চারা ও বীজ আনেন। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও কম্বোডিয়া ভ্রমণ করে ওইসব দেশের বাগান দেখে এ ব্যবসায় ঝোঁকেন।

সরেজমিনে জানা যায়, এ সময়ে বাগানের প্রতিটি গাছেই হলুদ সবুজ রঙের চায়না কমলা। আরও ঝুলছে পেয়ারা। মাঝেমধ্যে দার্জিলিং কমলাও ঝুলছে। এখন চায়না কমলা ১৫০ টাকা, দার্জিলিং কমলা ১৭০ টাকা এবং পেয়ারা ৪৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত ২ বছরে ২২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদে ৫ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। বর্তমানে পেয়ারা বিক্রি করে বাগান পরিচর্যার খরচ মেটাচ্ছেন তিনি।

পেয়ারা চাষে দেলোয়ার হোসেন ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করেন। জৈব সার, রাসায়নিক সার, দানাদার বিষ ও কীটনাশকের মাধ্যমে ঠিকমতো যত্ন নিলেই ফলন হয়। তিনি নাটোর, দিনাজপুর ও ঝিনাইদহ থেকে এসব চারা সংগ্রহ করেন। ৭৫ থেকে ২৫০ টাকা দরে প্রতিটি চারা কিনেছেন। বাগানে নিয়মিত ৪ জন শ্রমিক কাজ করছেন। অনিয়মিত আরও কয়েকজন কাজ করছেন। দেলোয়ারের উদ্যোগ দেখে স্থানীয় কৃষি বিভাগও তাকে সহায়তা করছে।

Advertisement

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পেয়ারা দিয়ে বাগান শুরু করলেও পরে মাল্টা, চায়না ও দার্জিলিং কমলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। আমি মাটির গুণাগুণ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তবে আমাদের এ মাটি যথেষ্ট উপযুক্ত। ফল খুবই মিষ্টি। বাজারে বর্তমানে চায়না কমলা ও পেয়ারা বিক্রি করছি। সবুজ মাল্টা মিষ্টি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। তবে লোকজন এসে মাল্টা খেয়ে প্রচুুর কিনছেন। গত বছর বিষমুক্ত আমও বিক্রি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত চারা সংগ্রহ ও পরিপূর্ণ বাগান তৈরি করতে প্রায় ১৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বাগানের খরচ কমে আসে। পানি দিতে পাইপ ব্যবহার করি। যন্ত্রের সাহায্যে নিড়ানির কাজ করি। বাগানে পানি সরবরাহ করার জন্য মাটির নিচ দিয়ে পাইপ স্থাপন করেছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা আলী আকবর, আব্দুল হালিম, আলমগীর হোসেন ও ফরহাদ মিয়া জানান, এখন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে ফল কিনছেন। এতে দেলোয়ারও স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্য লোকও বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সেই সঙ্গে বিষমুক্ত ফল পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

বাগানে পেয়ারা নিতে আসা দেওহাটা এলাকার সিরাজ মিয়া, মির্জাপুরের রফিক মিয়া জানান, তারা অনেক আগে থেকেই এ বাগান থেকে পেয়ারা নিয়ে থাকেন। এখন চায়না কমলা নিচ্ছেন। চায়না কমলা চীন বা অন্য দেশ থেকে আসা কমলার মতো না হলেও অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু।

মির্জাপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার পাল জানান, দেলোয়ার হোসেন বারি-১ জাতের মাল্টা, বাউকুল, কলা, লেবু, দার্জিলিং কমলার পাশাপাশি থাই-১০, থাই-৭ ও থাই-৫ জাতের পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ একর জমিতে প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাকে সার, চারা, ওষুধ, স্প্রে মেশিনসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

এস এম এরশাদ/এসইউ/জিকেএস