পরিকল্পিত মহাসড়ক ও রেলওয়ে তৈরি করে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আরও ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অপরিকল্পিত সড়ক ও রেল প্রকল্প থেকে মানুষ এবং প্রকৃতির সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং অসুবিধার বিষয় তুলে ধরেছেন।
Advertisement
কানাডার মন্ট্রিলে স্থানীয় সময় বুধবার (৭ ডিসেম্বর) জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে (কপ-১৫) এই গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
এ সম্পর্কিত সমীক্ষাতে উল্লেখ করা হয়, প্রধান সড়ক এবং রেলওয়ে অবকাঠামোর সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রকৃতিকে আরও ভালোভাবে রক্ষা করতে পারে। একই সঙ্গে এটি অর্থনৈতিক সুবিধাও বাড়াতে পারে।
গবেষকরা একটি অনলাইন ভিউয়ার টুল তৈরি করেছেন- যার নাম দেওয়া হয়েছে গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্যাক্ট ভিউয়ার। বৈশ্বিক একটি মানচিত্রের মাধ্যমে এটি এ সংক্রান্ত সড়ক ও রেলপথ প্রকল্পের ঝুঁকি এবং সুবিধার মানগুলি প্রদর্শন করে।
Advertisement
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, গত দুই বছরে মহাসড়ক ও রেলপথ নির্মাণের ফলে বিশ্বের সংরক্ষিত এলাকা বা মূল জীববৈচিত্র্য এলাকাগুলির প্রায় ৬০ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। এর ফলে প্রায় ২৫ হাজার পাখি, উভচর এবং স্তন্যপায়ী প্রজাতির আবাসস্থল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এজন্য বিশ্বব্যাপী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির হ্রাস আরও বাড়ছে।
এতে আরও বলা হয়, অপসারণ করা গাছ এবং গাছপালা থেকে ৮৮৩ মিলিয়ন টন কার্বন ছেড়েছে। কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত গাছপালা নষ্ট হওয়ার ফলে এক দশমিক ১১ মিলিয়ন টন নাইট্রোজেন ধারণ করাও বিপন্ন হবে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন নিম্নধারায় প্রবাহিত পানি বিষাক্ত করে তুলতে পারে।
পরিবেশ বিষয়ক বৃহৎ সংগঠন ইউএনইপি-ডব্লিউসিএমসির (UNEP-WCMC) গবেষকদের সহ-প্রধান অ্যান্ডি আর্নেল বলেন, মানব উন্নয়নের জন্য সুপরিকল্পিত পরিবহন অবকাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের সম্প্রসারণ নীতির কারণে প্রকৃতির জন্য একটি বিশাল হুমকি সৃষ্টি করে চলেছে। তবে বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবেশ উন্নয়ন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করে কাজ করতে পারে। তাহলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন, আমাদের গবেষণাটি কোনোভাবেই সম্পূর্ণ নয়, এটি প্রকল্পগুলির একটি স্ন্যাপশট দেয় শুধু। তবে হুমকির মধ্যে থাকা প্রজাতি নির্গমন, অর্থনৈতিক প্রভাব এবং প্রকল্পগুলির বিষয়ে স্থানীয় এবং আঞ্চলিক ঝুঁকি-সুবিধা মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাহ্য করে না। আমরা আশা করি এই গবেষণা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পগুলির জন্য আরও যাচাই-বাছাইকে উৎসাহিত করবে। একই সঙ্গে আমাদের পদ্ধতিগুলো প্রধান সড়ক ও রেল উন্নয়নের ঝুঁকি আরও বিশ্লেষণের জন্য একটি স্প্রিংবোর্ড প্রদান করবে।
Advertisement
ইউএনইপির টেকসই অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রধান রোয়ান পালমার বলেন, টেকসই মানব উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এখন আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের গবেষণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে পরিবহন প্রকল্প নিয়ে আরও ভালো পরিকল্পনা করার বিষয়ে একটি নতুন উপায় উপস্থাপন করবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকার এখন সড়ক ও রেলপথ সম্পর্কিত নতুন ডাটাবেজ বাড়াতে চাইছে। যাতে কাজটি ক্রমাগত আপডেট করা যায়। এটি একটি সার্বজনীন উদ্যোগ এবং এর ফলে জীববৈচিত্র্য আরও রক্ষা করা সম্ভব।
এইচএস/কেএসআর/জেআইএম