পারস্পরিক হাদিয়া-তোহফা বিনিময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পারস্পরিক হাদিয়া বিনিময়ে উৎসাহিত করেছেন। কারণ, এর দ্বারা অন্তরে ভালোবাসা তৈরি হয়। সম্পর্ক দৃঢ় হয়। যেটি দুনিয়ার জীবনে অনেক বড় নেয়ামত। বিপদ-মুসিবত থেকে হেফাজতের মাধ্যম। শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য খুবই সহায়ক। হাদিয়া দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
Advertisement
‘যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে, এরপর খোটা বা তুলনা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তার অনুগমন করে না। তাদের জন্য রবের কাছে রয়েছে তাদের বিনিময়, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬২)
একনিষ্ঠতার সঙ্গে হাদিয়া দেওয়া হলে এর সওয়াব দান-সদকা থেকে কম নয়। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি। হাদিয়া এবং দানের পার্থক্যের ফলাফল হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন। নিজেও ব্যবহার করতেন। তবে তিনি সদকা গ্রহণ করতেন তবে নিজে ব্যবহার করতেন না। অন্যদের দিয়ে দিতেন। হাদিয়া ব্যবহার করতে নিষেধ নেই। এ মর্মে আল্লাহ বলেন-
‘তারা যদি খুশি হয়ে তোমাদেরকে দিয়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪)
Advertisement
হাদিয়ার উপকারিতা
হাদিয়া ভালোবাসা বৃদ্ধির মাধ্যম। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান কর, তাহলে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ (আদাবুল মুফরাদ ৫৯৪)
হাদিয়া হিংসা দূর করার উপায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় কর এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা ও হিংসা দূর হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ ৯২৫০)
হাদিয়ার বিনিময়ে হাদিয়া
Advertisement
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়ম ছিল তিনি হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং এর বিনিময়ে নিজেও কিছু হাদিয়া হিসেবে দিয়ে দিতেন।’
হাদিয়ার বিনিময়ে দাতাকে কিছুই দেওয়ার না থাকলে অন্তত জাযাকাল্লাহু খায়রান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন) এতটুকু বললেও তার অকৃতজ্ঞতা বলে গণ্য হবে না। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যাকে হাদিয়া দেওয়া হয় যদি তার কাছে হাদিয়ার বিনিময়ে দেওয়ার মতো কিছু থাকে তাহলে দিয়ে দেবে। আর যার কাছে দেওয়ার মতো কিছুই থাকে না তখন সে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তার প্রশংসা করে দেবে এবং তার ব্যাপারে ভালো কথা বলে দেবে। যে এমন করল সে কৃতজ্ঞতা আদায় করল। আর যে এমন করল না এবং উপকারকে গোপন করল সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।’ (তিরমিজি)
অল্প হাদিয়াকে তুচ্ছ জ্ঞান না করা । নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে মুসলিম নারীগণ! তোমাদের প্রতিবেশীর জন্য সামান্য উপহার বা হাদিয়াও তুচ্ছ মনে কর না। যদিও তা বকরির পায়ের খুর হয়।’ (বুখারি ২৪২৭)
অল্প জিনিস হলে কাউকে তা হাদিয়া দিতেও লজ্জা না করা। আবার অল্প হাদিয়া গ্রহণ করতেও নাক না ছিটকানো। কারণ এতে করে হাদিয়াদাতা মনে মনে কষ্ট পাবে। এমনটি কারলে আস্তে আস্তে হাদিয়া দেওয়া-নেওয়ার প্রচলন বন্ধ হয়ে যাবে।
তবে হাদিয়া দিয়ে খোটা দেয়া যাবে না। হাদিয়া দিয়ে খোটা দেয়া খুবই ভয়ঙ্কর অপরাধ ও ক্ষতির কারণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘খোটাদানকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিয়া দেওয়া-নেওয়ার প্রচলন জারি রাখার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী হাদিয়া দেওয়া-নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস