দেশজুড়ে

সিদ্ধিরগঞ্জে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি, ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মজিববাগ এলাকায় রাস্তার মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

এদিকে, প্রকল্পটির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, রাস্তার মাঝ থেকে খুঁটি সরিয়ে নিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে জানালেও তারা কেন এটি সরিয়ে নেয়নি তা জানা নেই। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নিতে কোনো টাকা জমা দেয়নি, তাই এটি সরানো হয়নি।

তবে দুই কর্তৃপক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে ভোগান্তিতে পড়েছেন এই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন চালকরা। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র লক্ষ্য করা যায়।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিটি গভর্নেন্স প্রকল্পের (সিজিপি) আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিদ্ধিরগঞ্জের খালগুলো পুনঃখননসহ রাস্তা, ড্রেন, ওয়াকওয়ে, ল্যান্ডস্কেপিংসহ সৌন্দর্যবর্ধন শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়। ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মে দুইধাপে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকল্পটির কাজের উদ্বোধন করেন।

Advertisement

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নাসিক ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গলাকাটা পুল থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ডিএনডি খালের সৌন্দর্যবর্ধনে ৬৩ কোটি ৪৮ লাখ এবং লেকের ওপর ছয়টি ব্রিজ নির্মাণে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স উদয়ন বিল্ডার্স এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে।

এদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জ লেক ঘেঁষে দুই লেনের সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও মজিববাগ এলাকার দিকে রাস্তার মধ্য থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জ শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় এই সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। তাই ভোগান্তি থেকে মুক্তি ও দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয়রা দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তার মধ্য থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

আবুল হোসেন নামে এক অটোরিকশাচালক বলেন, বিদ্যুতের খুঁটির কারণে আমাদের এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই রাস্তা নির্মাণের আগে এখানে যানবাহনের চাপ তুলনামূলক অনেক কম ছিল। তাই তখন দুর্ঘটনার কোনো ভয় ছিল না। তবে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও বিদ্যুতের খুঁটি না সরানোয় দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে।

আব্দুল করিম নামে এক ট্রাকচালক বলেন, বাড়ির নির্মাণসামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভারী মালামাল আনা-নেওয়া করতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয় আমাদের। এই সড়কে যখন গাড়ির চাপ বেশি থাকে তখন এক লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হয়। বিদ্যুতের খুঁটির কারণে এক লেনে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স উদয়ন বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকার কামরুল হুদা বাবু বলেন, রাস্তার মাঝখানে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরাতে আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে। এখানে কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে যেগুলো প্রত্যেকটি ১ লাখ ২০ হাজার ভোল্টের। এগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থা জড়িত। বেশিরভাগ সংস্থার অফিস ঢাকায় অবস্থিত। এসব সংস্থার কাছে আবেদন করলে তারা বেশিরভাগ বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরিয়ে নিয়েছে।

তিনি বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকার তিনটি বৈদ্যুতিক খুঁটি সরাতে আমাদের ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা লেগেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ মোটামুটি সবগুলো খুঁটি সরিয়ে নিলেও মজিববাগ এলাকার সামনের এই খুঁটিটি কেন সরিয়ে নিলো না তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে ঢাকা পাওয়ার ড্রিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) সিদ্ধিরগঞ্জ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন যখন এই রাস্তা নির্মাণ করেছে তখন আমাদের এই খুঁটিটি রাস্তার মধ্যে পড়ে গেছে। তারা এটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো টাকা জমা দেয়নি, তাই এটি সরানো হয়নি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহীদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি।

রাশেদুল ইসলাম রাজু/এমআরআর/জিকেএস