সজীব দত্ত ১২ বছর ধরে বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। বাবা সমীর দত্ত ও মা রিক্তা দত্ত। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট সজীব। তিনি খুলনার সরকারি ব্রজলাল (বি এল) কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক হিসেবে প্রথম কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
Advertisement
তার এ দীর্ঘ উপস্থাপনা জীবনের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—
জাগো নিউজ: উপস্থাপনায় এলেন কীভাবে?সজীব দত্ত: উপস্থাপনায় আসার ইচ্ছে ছিল ছোটবেলা থেকেই। স্কুলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। অনেকেই প্রশংসা করতেন আমার কণ্ঠের। সেখান থেকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হই। স্বপ্ন ছিল এবং স্বপ্নের পথে আন্তরিক ভাবে লেগে ছিলাম। সে কারণেই আজ স্বপ্ন বাস্তব করতে পেরেছি। আসলে স্বপ্নের পেছনে সত্যিকার লেগে থাকলে স্বপ্ন বিফলে যায় না। আমি খুলনা বেতারে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম এবং আবেদন করে রেখেছিলাম। এরপর ২০১১ সালে উপস্থাপনার জন্য অডিশনে ডাক পাই এবং কণ্ঠস্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। ২০১১ সাল থেকে আমার উপস্থাপনা জীবন চলমান। খুলনায় ছিলাম ১ বছর। ঢাকায় ২০১২ সাল থেকে আছি।
জাগো নিউজ: উপস্থাপনা জীবনে পথচলা সম্পর্কে বলুন—সজীব দত্ত: এখনো শিখছি। শেখার ভেতরই আছি সব সময়। রেডিওর অনুষ্ঠানের কারণে সারাদেশে ভ্রমণ হয়েছে। একেক এলাকার মানুষের জীবনাচরণ, আনন্দ, বেদনা দেখেছি বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান, আলোকিত মানুষ, সংগ্রামী মানুষসহ নানামুখী অনুষ্ঠান করেছি। অভিজ্ঞতা হয়েছে জীবনের। ছুটে চলার প্রতিটি পরতে পরতে যেন জীবনের জয়গান খুঁজে পেয়েছি।
Advertisement
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ বেতারে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?সজীব দত্ত: বাংলাদেশ বেতারে আমার কাজের অভিজ্ঞতা নানামুখী। যা একটু আগেই বললাম। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান ধারণ করেছি সারাদেশে যেমন; তেমনি বেতার স্টুডিওতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি। গান, নাটক, সাহিত্য, চলচ্চিত্র প্রভৃতি অঙ্গনের বরেণ্যদের নিয়ে আমার একটি অনুষ্ঠান আছে ‘প্রিয় যারা কেমন তারা’। এ ছাড়াও সাক্ষাৎকারমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছি। সব মিলিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ। আমার শুরু বাংলাদেশ বেতার দিয়ে, আমি আমৃত্যু এখানে কাজ করতে চাই।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ বেতারের ‘তারুণ্যের কণ্ঠ’ অনুষ্ঠান নিয়ে সারাদেশে ঘুরেছেন, এ সম্পর্কে বলুন—সজীব দত্ত: বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সারাদেশে অনুষ্ঠান নিয়ে ঘুরেছি। দেশের ২৫০টির বেশি উপজেলায় গিয়েছি। আমি অত্যন্ত আপ্লুত যে, অনুষ্ঠান শুনে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কয়েকটি সংগঠন দেশের বিভিন্ন উপজেলায় যাত্রা শুরু করেছে। যা সত্যিই অভাবনীয় আনন্দের। অনেক শিক্ষার্থী স্বপ্নবাজ হচ্ছেন। নিজেরাই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছেন। যা সত্যিই আশা জাগানিয়া।
জাগো নিউজ: উপস্থাপক হতে চাইলে কী করা উচিত?সজীব দত্ত: উপস্থাপনা অনেকটা সাধনার মতোই। খুব গুরুত্ব সহকারে এটি নিতে হবে। রেডিও শুনতে হবে। চর্চা করতে হবে। চর্চা ছাড়া, পরিশ্রম ছাড়া উপস্থাপক হওয়া সম্ভব নয়। অবশ্যই সমসাময়িক জ্ঞান, সুমধুর কণ্ঠ, শুদ্ধ উচ্চারণ, সময়জ্ঞান—এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
জাগো নিউজ: কোথা থেকে প্রশিক্ষণ নিলে ভালো হয়?সজীব দত্ত: আসলে প্রশিক্ষণ নেওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজের অধ্যবসায় ও চর্চা। অনেক ভালো ভালো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান কোর্স করিয়ে থাকে। খোঁজ-খবর নিয়ে ভালো কোনো জায়গা থেকেই কোর্স করা যেতে পারে।
Advertisement
জাগো নিউজ: উপস্থাপনা পেশা হিসেবে কেমন?সজীব দত্ত: একেক জনের চিন্তা-ভাবনা একেক রকম। আমার কাছে তো অবশ্যই এটি চমৎকার একটি পেশা। কারণ এ পেশায় অর্থ, সম্মান, নিজের ভালো লাগা সবকিছুই পাওয়া যায়। যারা উপস্থাপনায় আসেন, তারা এ মানসিকতারই মানুষ। তাই নেশা ও পেশা মিলে গেলে যা হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
জাগো নিউজ: উপস্থাপনাকে পেশা হিসেবে নেওয়া কতটা সময়োপযোগী চিন্তা?সজীব দত্ত: আমি তো আমার কাছে যুক্তিযুক্তই বলবো। কারণ আপনি যখন শতভাগ পেশাদারিত্ব নিয়ে আপনার কাজটি করবেন; তখন সব কাজই যুক্তিযুক্ত। যদি আপনি সামগ্রিক ভাবে ভালো থাকেন। এখানেও নিজের উপরই সাফল্য বা এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?সজীব দত্ত: আমার ভবিষ্যতে পরিকল্পনা বলে কিছু নেই সেরকম। কারণ আমি প্রতি মুহূর্তে বাঁচি। সব সময় বর্তমান সময়েই চিহ্ন রেখে চলার চেষ্টা করি। একটি মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি।
এসইউ/এএসএম