ডেঙ্গুজ্বর এবার ব্যাপক ভোগাচ্ছে নগরবাসীকে। এরই মধ্যে ৫৮ হাজারের বেশি আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মারা গেছেন ২৫৭ জন। চলতি মাসের শুরু থেকে ঢাকা শহরে এডিস মশার প্রকোপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। নির্মূল হয়নি এখনো। শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই নগরে একই সঙ্গে উপদ্রব বাড়ছে কিউলেক্স মশার। বিকেল হতে না হতেই দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও নিস্তার মিলছে না এ মশা থেকে।
Advertisement
ডেঙ্গুর সংক্রামক এডিস মশার মতো কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণেও বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তবে নিয়ন্ত্রণে তারা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে শুরুতেই উঠছে প্রশ্ন। কারণ ডেঙ্গু নিয়ে নগরবাসীর অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়।
নগরবাসীর অভিযোগ, এডিস মশা বাসা-বাড়ির আঙিনায় জন্মায়-এমন কথা বলে দায় এড়িয়ে গেছে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি। অথচ ডেঙ্গুজ্বরে শত শত মানুষ মারা গেছেন। ডেঙ্গু এখন নিয়ন্ত্রণের পথে। কিন্তু এর মধ্যে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ছে। এই মশা সিটি করপোরেশনের নালাসহ পরিত্যক্ত জায়গায় জন্মায়। তা পরিষ্কার ও সেখানে ওষুধ ছিটানোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এই দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৫৮ হাজার ৯২৭ জন। এদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৭ হাজার ৩৯০ এবং ঢাকার বাইরের ২১ হাজার ৫৩৭ জন। এছাড়া ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৫৭ জনের, যা ইতিহাসের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
Advertisement
ডিএনসিসিএডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে সারাবছরই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে ডিএনসিসি। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় ডিএনসিসিকে বরাবরই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে তারা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই সফল বলে দাবি করে। এখন কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) নগর ভবনে শুষ্ক মৌসুমে মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে ডিএনসিসি। সভায় ডিএনসিসি আওতাধীন এলাকায় মশার বর্তমান পরিস্থিতি এবং মশা নিধনে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে ১৫ দিনের জন্য ১, ১৭, ৪৯, ৫০ ও ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সব বিভাগের সমন্বিত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বর্জ্য বিভাগ প্রতিটি এলাকার ড্রেন, খাল, নালা ও জলাশয় নিয়মিত পরিষ্কার এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।
সভায় মশককর্মীদের অবহেলা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি জানিয়ে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মশক নিধন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও তৎপর হতে হবে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকদের প্রতিটি এলাকা পরিদর্শন করে কোন কোন ড্রেনে ময়লা বেশি সেটার তালিকা তৈরি করতে হবে। কোন কোন ড্রেনে ও নালায় কচুরিপানা ও অন্যান্য ময়লা বেশি তা চিহ্নিত করে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে সেগুলো। মাঠে কাজের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মশক নিধন কার্যক্রমে কর্মীদের অবহেলা পেলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ডোবা-জলাশয়ের মালিকদের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আশাকরি শুষ্ক মৌসুমে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
Advertisement
গত মাসের শুরু থেকেই কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মহাখালীর হাজী বাড়ির বাসিন্দা আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, বিকেল ৪টার পর থেকেই বাসায় মশা ঢুকতে থাকে। দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। তারপরও বাসায় মশা ঢোকে। কিন্তু মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা তেমন দেখি না।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, বুধবার (৭ ডিসেম্বর) ডিএনসিসির উত্তরা ও আশপাশের এলাকাগুলো থেকে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু হবে। এই কার্যক্রমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ আশপাশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হবে।
সবার সমন্বিত কার্যক্রমে মশক নিধন কার্যক্রমে গতি আসবে বলে জানান তিনি।
ডিএসসিসিডিএসসিসিও সারা বছর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নানান কর্মসূচি পালন করেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোসহ জনসচেতনা করেছে তারা। এখন এডিস মশা নিয়েও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে ডিএনসিসির তুলনায় তাদের কর্মসূচি বা কার্যক্রম কম বলে জানিয়েছেন নাগরিকরা।
সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এখন সারা বছরই মশার আতঙ্কে থাকতে হয়। বাসায় মশারি ছাড়া ঘুমানো যায় না। সিটি করপোরেশনের তেমন কোনো কার্যক্রমও চোখে পড়ে না। অথচ মশা নিধন সিটি করপোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জাগো নিউজকে বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় এডিস মশার উপদ্রব কম ছিল। ডেঙ্গু অনেকটাই আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এখন কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে ডোবা-নালায় ওষুধ ছিটাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এমএমএ/এএসএ/এএসএম