সাহিত্য

সানাউল্লাহ সাগরের পাঁচটি কবিতা

 

আশ্রয়কেন্দ্র

Advertisement

তুমি এসে গেছো!যাই যাই করেও যাওয়া হলো না আমার,অথবা নিরক্ষর এই জীবন ছেড়েকোথাও যেতে চাইনি কখনও;তবুও তুমি এলেঅগাধ ক্ষরণ নিয়েনিঃসংকোচে ছড়িয়ে দিলে স্নিগ্ধ অভয়।চিরকালই অলস, ভীতু আমিএমন অল্পতেই মরে যাই...

****

ভুট্টা, শৈত্যপ্রবাহ ও দোতারার অসুখ

Advertisement

এই শৈত্যপ্রবাহে কেউ কি বের হয়? অকারণে! গোল্লায় যাওয়া অগ্রহায়ণের বিপত্তি মাথায় আমি বের হলাম। শরীরে অফিস আর মনের মধ্যে তুমুল বৃক্ষবাহাস। কেবল একটু সহজ হতে। লেকের আগাছায় মুখ ঘষে নিজের মুখটা দেখাও ছিল বিস্ময়ের। তুমিও ছিলে। অথবা কোথাও ছিলে না। কিন্তু আমি দৃশ্যের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্র সরোবরের অঙ্গসজ্জা খেয়ে নিচ্ছিলাম। হাতে কোনো ঘড়ি নেই। বুকের মধ্যেও নেই কোনো চাবি। যত ছবি ছিল শীতের উষ্ণতায় বিলি হয়ে গেছে। এই যে একটু আগে সাঁই করে রিকশায় একজোড়া দোতারা চলে গেল। তাদের নিমগ্নতায় শোকাক্রান্ত শীত। আর হাতে ধরা ভুট্টা। দেখে মনে হলো এরা তো কেবলই ফিরে এসেছে বিনয় মজুমদারের বাড়ি থেকে। তুমি ফেরোনি। আমি শীতের কব্জিতে উষ্ণতা লিখে লিখে মুছে গেছি তৃতীয়বার। তোমাকে কখনো ভুটা খেতে দেখিনি। বরং সরব হতে সতীর্থের কান্নায়! এমন স্বর্গীয় ভঙ্গি শতবার দেখতে চাই। তুমি চুমুকে ঘেমে যাচ্ছো আর আমি উষ্ণ চাদরে জড়িয়ে রাখছি গোপন। যেন ইচ্ছে হলেই ভিজে যেতে পারি মঙ্গার মুখে মুখে। তোমার অফিস ফেরত হাত আর চোখে জ্বলজ্বল করা ভুট্টার কিলবিল হয়তো লেকের এই গাঁথুনিটাই পেরোতে পারবে না। কিন্তু আমি মনে রাখছি—মনে রাখবো ‘তুমি আমি মিলে বিনয়ের জ্যামিতিক কবিতা।’

****

পৌষ শেষে

এই যে তুমি হস্যোজ্জ্বল থাকছো—খেলছো, দৌড়াচ্ছো, উড়ে আসছো নাকে-মুখে। লবণাক্ত চোখের সীমায়। কিংবা স্থির হয়ে রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছো। নিরিবিলি। একা। অন্যত্র টুংটাং বাহারি পদ্য! খেলে যাচ্ছে বালিকা বিদ্যালয়। রক্ত মেখে ফুরফুরে মেজাজ জারি রাখছো হরদম। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না কোথাও। গলি থেকে বেরোচ্ছে না কোনো অশ্লীল সাপ। মোড়ে মোড়ে উড়ছে না মশলার ঘুড়ি। দীর্ঘ রাস্তায়ও মিলছে না কোনো পিঁপড়ার খোঁজ। কুকুরের লেজ থেকে ঝরে যাচ্ছে জীবনমুখী গান! শৈশব-কৈশোর। অন্যরকম ফিসফাসে জড়িয়ে যাচ্ছে গ্রামসকল। রাতের স্বাদে অবশিষ্ট থাকছে না কৈলাশ খের। কেবল কাবলীওয়ালা। মৃত্যুর মুদি! বাড়ছে। বেড়েই যাচ্ছে। পাড়া মহল্লায়। মোড়ে মোড়ে তৈরি হচ্ছে জাহাজ জাহাজ কবর। আর দীর্ঘ রোডজুড়ে মুখোমুখি লজ্জারা লংমার্চ করছে। তুমি খেলছো। উড়ছো। বেহিসেবি রাঙাও হচ্ছো দুর্দম। নানা নামে ছড়িয়ে যাচ্ছো। প্রতিটি অঙ্গে। নিজস্ব গর্তে।

Advertisement

****

আতর বিক্রেতার ডায়েরি

একদম হুটহাট তোমার গন্ধ পাই। ধরো সকালে মাছ বাজারে ঘুরে ঘুরে বউয়ের আদেশ মতো তাজা ইলিশ খুঁজছি, দু-একটা কাতল মাছের কানসা টানাটানি করে তাজা কি না পরীক্ষা করছি। এরই মধ্যে তোমার গন্ধ টের পাই! ভেসে যায় মাছ-বাজার। অথবা পাবলিক বাসে মানুষের যুক্তিহীন ঘামের গন্ধে বমি বমি উৎসব শুরু হচ্ছিলো—তখন কোত্থেকে তোমার গন্ধ এসে জড়িয়ে ধরে আমাকে। আমি ভেতরে ভেতরে পুড়ে যাই। অশ্লীলও হই কিছু। অস্থির হই এতটাই যে চোখের ডোবায় অগণিত নদী সাঁতরাতে থাকে। কোনো বিঘ্ন ছাড়াই উড়ে যাই তোমার লজ্জাবনত স্তন শয্যায়—নাভির শেষ স্তর ছুঁয়ে লাল অন্তর্বাসের আড়ালে। অথচ কত ছুটিবার চলে যায় একবারও দেখা হয় না আমাদের। ভোটাভুটির ভয় ছেড়ে তুমিও আসো না নাকের কাছাকাছি। তবু আমার কাছে তোমার নাক আর বিজলি ছড়ানো চোখ জমা হয়। দরিদ্র চাষিদের গামছায় আমি তোমার গন্ধ জমিয়ে রাখি।

****

জাহাজ

বিশ্বস্ত ওই হাত তোমার আমাকে ডুবিয়ে মারবে জানিতবু ঘাস লতা-পাতাবৃষ্টি-মেঘ-ছাতাবুকের জ্বরে টানি...শেষ হয় না কিছুই, চুপচাপ শীত আসেজাপ্টে রাখে শেষ রাতের ঘানি।

অসহায় নদী বলে, লবণ চিনে রাখো; ভুলে যাও চোখমুখের আড়ালে আরও মুখপাহাড়ে পাহাড় ঘিরে গভীর মাতমউঠোনে চাঁদের শোক—নিজেকে বিক্রি করে খালি হাতে ফিরছিলাম সেদিন...

এসইউ/জিকেএস