কয়লাসহ নানা সংকটে বরিশালের অধিকাংশ ইটভাটা চালু করতে পারছেন না মালিকরা। বেশি দামে কয়লা কিনে ইট তৈরির কাজ করলে বড় ধরনের লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। কিছু ভাটা মালিক ঋণ ও দাদনের বোঝা থাকায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার দিন কাটছে তাদের।
Advertisement
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির একাধিক সদস্য জানান, ২০১৯ সালে টনপ্রতি কয়লার দাম ছিল সাড়ে সাত হাজার টাকা। তিন বছরে চারগুণ বেড়ে সে কয়লার দাম ৩০ হাজার টাকা হয়েছে। বেশি দাম দিয়েও কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে বেশি দামে কেনা কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হলে খরচও বাড়বে।
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১০ উপজেলায় প্রায় ৩০০টির মতো ইটভাটা রয়েছে। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকায় কয়েক বছর ধরে অর্ধেকের বেশি ইটভাটায় কয়লা পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে।
জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার দোয়ারিকা এলাকার রাকী ব্রিকসের ব্যবস্থাপক হেমায়েত উদ্দিন বাদল জানান, কার্তিক মাস থেকে ইট তৈরির মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু কয়লা সংকট ও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলে তাদের ইটভাটা চালু সম্ভব হয়নি।
Advertisement
সালাম ব্রিকসের ব্যবস্থাপক মো. সেলিম জানান, কয়লার দাম চড়া। কিন্তু বেশি দামে কেনা কয়লা দিয়ে পোড়ানো ইট তাদের আগের দরেই বিক্রি করতে হবে। সেই দরে ক্রেতা পাওয়া যাবে না। এতে ইটভাটার মালিকের মূলধন হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে অনেকেই এবার ইটভাটা চালু করেনি।
তিনি আরও বলেন, কয়লার দাম কমার অপেক্ষা ছিলাম। কিন্তু দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো কয়লার সংকট। মালিক ব্যবসা টিকেয়ে রাখতে চড়া সুদে ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। তাছাড়া অনেক ক্রেতার কাছ থেকে ইট বিক্রির অগ্রিম টাকা নেওয়া হয়েছে। তারাও ইট নেওয়ার জন্য বার বার তাগাদা দিচ্ছেন। তাই কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির কাজ শুরু করেছি।
ফাইন ব্রিকসের মালিক মো. আব্বাস উদ্দিন জানান, কয়লার দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। ওই দামে কয়লা কিনে ইট পোড়ানো হলে খরচ বাড়বে। এক হাজার ইটের দাম হবে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু সেই দামে ইট বিক্রি হবে না। অন্যদিকে কয়েক বছর ধরে ব্যবসা মন্দ যাওয়ায় ধার-দেনা হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির কাজ শুরু করেছেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি জানান, করোনার কারণে এ খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে। সেই সঙ্গে গত তিন বছরে কয়লার দাম বেড়েই চলছে। যার ফলে এ ব্যবসা গত দুই বছর ধরেই নিম্নমুখী। এ বছরে এসে চারগুণ বেড়ে বর্তমানে সেই কয়লার টন ৩০ হাজার টাকা উঠেছে। অথচ ২০১৯ সালে টন প্রতি কয়লার দাম ছিল সাড়ে সাত হাজার টাকা।
Advertisement
তিনি বলেন, আগস্ট মাস থেকেই কয়লা কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গার আমদানিকারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গত কয়েকদিনে কয়েকজন আমদানিকারকের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। কয়লার সংকট থাকায় আমদানি কমে গেছে। ডলার সমস্যার কারণে অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না। সব মিলিয়ে বলা যায়, ইটভাটা মালিকরা কঠিন দুঃসময় পার করছেন।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির একাংশের সভাপতি আসাদুজ্জামান খসরু জানান, কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। অন্যদিকে কয়লার দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে অধিকাংশ ইটভাটা চালু করতে পারছেন না মালিকরা। তাছাড়া কয়লা সংকট। বিষয়টি ইটভাটা মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আব্দুল হালিম জানান, ইট তৈরির মৌসুম শুরু হয়েছে। এরমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ইটভাটা মালিকদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা থেকে যাদের লাইসেন্স আছে, তাদের নবায়ন করাতে বলা হয়েছে। যাদের পরিবেশ ছাড়পত্র নেই, তাদেরকে শর্ত মেনে ছাড়পত্র নিয়ে ভাটা চালু করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইটভাটা মালিকদের কয়লা না পাওয়ার সমস্যার বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারকে জানানো হয়েছে। কয়লা না পেলে কাঠ বা ভিন্ন কিছু পুড়িয়ে ইট তৈরির সুযোগ নেই। কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ।
সাইফ আমীন/আরএইচ/জিকেএস