মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের মুখে নৈতিকতা পুলিশকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে ইরানের আদালত। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরির বরাত দিয়ে রোববার (৪ নভেম্বর) দেশটির গণমাধ্যমগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর আরব নিউজের।
Advertisement
দেশটির আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরি বলেছেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে নৈতিকতা পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া এ পুলিশকে বিলুপ্ত করা হয়েছে।
তেহরানে এক ধর্মীয় সম্মেলনে চলাকালে ‘কেন নৈতিকতা পুলিশ বাতিল করা হচ্ছে’ প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ মন্তব্য করেন।
জানা যায়, নারীদের মাথা ঢেকে রাখার আইন পরিবর্তন করা দরকার কি না, সে বিষয়ে সংসদ ও বিচার বিভাগ উভয়ই কাজ করছে বলে মনতাজেরির মন্তব্যের একদিন পরই নৈতিকতা পুলিশ বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়।
Advertisement
এর আগে, শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ইরানের প্রজাতন্ত্র ও ইসলামিক ভিত্তি সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। তবে সংবিধান বাস্তবায়নের পদ্ধতি নমনীয় করা হতে পারে।
ঠিকভাবে হিজাব না পরায় এ বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনি। ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কুর্দি বংশোদ্ভূত ওই তরুণী। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মাশা আমিনির মৃত্যুর পর দেশটিতে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, যা বর্তমানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। দেশটির সরকার স্বীকার করেছে, এ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ২০০ জন নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, হিজাববিরোধী এ আন্দোলনে ইরানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিংসতায় কমপক্ষে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন।
Advertisement
ইরানের নৈতিকতা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে গাশত-ই এরশাদ বা গাইডেন্স পেট্রোল নামে পরিচিত। দেশটির সাবেক কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের আমলে শালীনতা ও হিজাবের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে পুলিশের এ শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো টহল শুরু করে পুলিশের এ শাখা।
১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের চার বছর পর ইরানে হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। ওই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশটিতে তৎকালীন মার্কিন-সমর্থিত সরকারকে উৎখাত ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ওই বিপ্লবের পর এবারই প্রথম এত বড় বিক্ষোভের মুখে পড়েছে ইরান সরকার। এতে চাপে পড়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও।
সূত্র: এএফপি
এসএএইচ