আসছে ফেব্রুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বইমেলা। এদিকে বেড়ে গেছে প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট উপাদানের দাম। এ নিয়ে লেখক-প্রকাশক-পাঠকরা হতাশা প্রকাশ করছেন। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাবে বইয়ের দামও। বইমেলায় নিশ্চয়ই এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন অনেকেই। তাই আসন্ন বইমেলা নিয়ে কবি-লেখকদের ভাবনা তুলে ধরা হলো—
Advertisement
কবি ও প্রাবন্ধিক আবু আফজাল সালেহ বলেন, ‘কোভিডের কারণে গত দুটি বইমেলা আশানুরূপ হয়নি। তাই এবারের প্রত্যাশা থাকবে বেশি। তবে কাগজ ও মুদ্রণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়। খরচ বেশি হওয়ায় সঙ্গতকারণেই প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কমবে। প্রতিবছর মেলা আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে মানসম্মত বই কম হয়। আরও একটি বিষয় দেখা যায়, অনেক প্রকাশক বাংলা একাডেমিতে বই জমা না দেওয়ার কারণে মেলা শেষে প্রকাশিত বইয়ের তালিকায় আসে না। আমি আশা করি, এবার মানসম্মত বই তুলনায় বেশি হবে এবং প্রকাশকগণ আরও আন্তরিক হবেন। মেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত বইগুলো যথাসময়ে ও যথানিয়মে একাডেমি ও অন্যান্য স্থানে জমা দেবেন। লিটলম্যাগ হচ্ছে রক্তক্ষরণের নাম। এ বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেক পাঠক যাতে কমপক্ষে ১টি বই কিনতে পারেন, তার উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য ৫০ টাকা মূল্যের প্রবেশ ফি কাম কুপন (ক্রয়কৃত বইয়ের সঙ্গে সমন্বয় হবে) প্রথা চালু করা যায়।’
লেখক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিক রাহিতুল ইসলাম বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর অপেক্ষায় আছি। প্রতিবারই আলোচনায় আসে বইমেলা মনে হয় জমবে না। বইমেলায় এবার কম বিক্রি হবে। পাঠক কম আসবে। পাঠকের চেয়ে লেখকদেরই বইমেলায় বেশি দেখা যাবে। এমন বিভিন্ন আলোচনা শোনা যায় বইমেলা এলেই। আমার কাছে এমনটি মনে হয় না যে, বইমেলা জমবে না বা পাঠক আসবে না। আমার কাছে মনে হয়, বইমেলার অপেক্ষায় আছে বই পড়ুয়ারা। বছরে এই একটি মাস বইমেলার নতুন নতুন বই নিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠে পাঠক ও গণমাধ্যম। তবে হ্যাঁ, কাগজের দাম বাড়াতে বই কম বের হবে বলে ধারণা করছেন অনেকে। এর একটু প্রভাব পড়বে ২০২৩ সালের বইমেলায়। একজন লেখক হিসেবে আমার মনে হয় না, এ প্রভাব পাঠককে আটকাতে পারবে। পাঠক কম হোক বেশি হোক তাদের প্রিয় লেখকের বইটি বেছে নেবেন। ২০২৩ সালের বইমেলা জমে উঠবে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়েই। বইমেলায় সব বয়সের পাঠক মেতে উঠবেন বলে আশা করছি।’
কবি ও গল্পকার আনিস ফারদীন বলেন, ‘বইমেলা আমাদের লেখক, পাঠক এবং বইপ্রেমী মানুষের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত এক উপলক্ষ। আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনবদ্য স্থান দখল করে আছে এ আয়োজন। বইমেলার মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন-পুরাতন কবি, সাহিত্যিক, লেখক, প্রকাশক এবং পাঠকদের মধ্যে এক অকৃত্রিম মেলবন্ধনের যোগসূত্র তৈরি হয়। একজন লেখক এবং পাঠক হিসেবে প্রত্যাশা থাকবে, জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে আয়োজিত হবে ২০২৩ এর বইমেলা। সাথে সরকার এবং আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যাতে ব্যাপক পরিসরে প্রচারণা চালানো হয় বইমেলাকে নিয়ে। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখক ও প্রকাশকদের জন্য সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হোক। এতে নতুন লেখকরা আগ্রহ পাবেন এবং এ প্রক্রিয়ায় বই ক্রয়ের ক্ষেত্রে বইয়ের মূল্য পাঠকদের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকবে। প্রয়োজনে পাঠকদের জন্য ব্যাপক পরিসরে ছাড়ে বই কেনার সুযোগ দিতে হবে। সাথে প্রতিদিন বিভিন্ন সাহিত্য সম্পর্কিত আলোচনা ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পাঠকদের বইমেলামুখী করার ব্যবস্থা করতে হবে। বইমেলার স্টলে যোগ্য ও দক্ষ বিপণনকর্মী নিয়োগের মাধ্যমে পাঠকদের সাথে আন্তরিক এবং হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে মনোযোগ দিতে হবে।’
Advertisement
লেখক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার বলেন, ‘আমার লেখক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হিসেবে শক্তি জুগিয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক মেলবন্ধন সৃষ্টিতে অমর একুশে বইমেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা। এবারের বইমেলা নিয়ে লেখক ও পাঠকের বাড়তি আগ্রহ আছে। বাঙালি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশে রূপ নিয়েছে বইমেলা। বাংলা একাডেমি কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের পদচারণা উৎসবমুখর আবহ নিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস করি। বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। সৃষ্টিশীলতা ও সাহিত্যচর্চার এ প্ল্যাটফর্ম আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবে। সম্প্রীতির মেলবন্ধনে এগিয়ে যাবে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি। মেলায় কিশোর-যুবা-বৃদ্ধদের মেলবন্ধনে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করবে সে প্রত্যাশা রইলো। আশা করি, প্রাণের বইমেলা তার আপন মহিমায় পাঠকের তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হবে।’
কবি ও কথাশিল্পী মাঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে অমর একুশে বইমেলার উপর অশুভশক্তির হানা লেগেই আছে। এর আগে করোনা অতিমারি, এবার হলো বইসংশ্লিষ্ট দ্রব্যমূল্যের অভাবনীয় ঊর্ধ্বগতি। যার ফলে প্রকাশনী খানিকটা চাপে পড়বে একথা সত্য। তবে বিরাট আকারে প্রভাব হয়তো পড়বে না। বইয়ের দাম কিছুটা বাড়বে। নতুন বইয়ের সংখ্যা তুলনামূলক কমবে। কিন্তু এভারেজ বিক্রিটা এবারের বইমেলায় হবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। যে পাঠক অন্যবার গড়ে পাঁচটি বইটি কিনতেন, তাঁরা হয়তো এবার তিনটি কিনবেন। আর এ তিনটির মূল্য আগের পাঁচটির মূল্যকেই ছুঁয়ে ফেলবে। প্রকাশকরা যদি লেখার মান খেয়াল রেখে এবং প্রকাশের খরচ যতটা সম্ভব কমে রাখতে পারেন, তাহলে আশানুরূপ প্রফিট তারা লাভ করতে পারবেন। পুরোনো বইগুলো আবারও মেলায় আনতে পারেন। প্রকাশনী রিলেটেড সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ছোট বা মাঝারি প্রকাশনীরা এখন অর্থসংকটে থাকলে বাংলা একাডেমির উচিত তাদের খোঁজ নেওয়া এবং যথাসম্ভব প্রণোদনা দেওয়া।’
এসইউ/এএসএম
Advertisement