ব্র্যান্ডিং খুবই আলোচিত একটা শব্দ। একটা দেশ বিশ্ব দরবারে পরিচিত হতে পারে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক- দুভাবেই। এতদিন " ব্র্যান্ডিং" শব্দটা নিয়ে কোম্পানি বা বিভিন্ন সংস্থা কাজ করতো তাদের পণ্য, সেবা বা কর্মতৎপরতা দেশ এবং বিদেশে পরিচিত করানোর জন্য। এজন্য তারা তাদের পণ্য অথবা কর্মতৎপরতা তুলে ধরার জন্য এজেন্ট নিয়োগ করতো। নানা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সাথে দেনদরবার করতো।
Advertisement
নিয়োগ দিতো শুভেচ্ছা দূতও। আর এজন্য কিন্তু খরচ করতে হয় প্রচুর অর্থও। এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি আছে। ফলে সে উদাহরণ দিয়ে অহেতুক লেখাটাকে বড় করতে চাইনে। আপনারা পত্রিকা থেকে বা গুগল করেও বিভিন্ন কোম্পানির এজেন্ট বা শুভেচ্ছাদূতদের নাম জেনে নিতে পারবেন। পারবেন বিজ্ঞাপনের পেছনে তাদের ব্যয়েরও বিবরণ।
ইদানীং শুধু কোম্পানি বা সংস্থা নয়; এসেছে দেশকেও ব্র্যান্ডিং করার নতুন ধারণা। সেটা হতে পারে ব্যবসা, পর্যটন, খেলাধুলা, চিকিৎসা, পড়াশুনাসহ নানা ক্ষেত্রেই। প্রতিটি দেশ তার পরিচিতি বাড়ানোর জন্য চরম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। কারণ পুঁজিবাদী বিশ্বে সবকিছুই এখন "প্রোডাক্ট" ।
একটা কোম্পানি তার ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির জন্য পণ্যের প্রচার করে। এজন্য বিজ্ঞাপনের পেছনে অঢেল টাকাও খরচ করে থাকে তারা। এ খরচের ফলে আখেরে কোম্পানি লাভবানই হয়। যতটা খরচ হয় এজন্য তার চেয়ে বরং লাভ হতে থাকে অনেক বেশি। এজন্য শুধু প্রয়োজন হয় বাজারব্যবস্থায় তার পরিচিতি বাড়ানো। যত বেশি পরিচিতি বাড়বে তত বেশি তার বেচাকেনা বাড়বে। যতবেশি বেচাকেনা ততবেশি লাভ। মূলত এটাই হচ্ছে ব্র্যান্ডিং কনসেপ্ট ।
Advertisement
সেই আদলে এখন দেশগুলোও চেষ্টা করে যাচ্ছে যেদিকে যে যে দেশ শক্তিশালী সেটার প্রচার এবং প্রসার ঘটানোর। এজন্য নানামাত্রিক তৎপরতা তারা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে থাকে। এতে করে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং হতে থাকে। তার ফলও হয় সুদূরপ্রসারী। দেশটির নাম তার পণ্য বা সেবার সাথে সাথে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে।
সেই সাথে সেদেশের নাগরিকরা যখন অন্য দেশে যান তখন অটোমেটিক্যালি সম্মানিত হতে থাকেন। ঠিক যেভাবে আমরা আমাদের গার্মেন্টস পণ্যের জন্য বিদেশে সম্মানিত হই। অন্য দেশে গিয়ে তাই যখন শপিংমলগুলোতে পোশাকের গায়ে "মেইড ইন বাংলাদেশ" লেখা দেখিন তখন আবেগে আপ্লুত হই। গর্বভরে বলতে পারি এটা আমরা তৈরি করেছি!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কিভাবে অটোমেটিক ব্র্যান্ডিং বা পরিচিত হচ্ছে? কারণ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলই তো নেই। নিকট ভবিষ্যতে আমাদের দেশ বিশ্বকাপে খেলতে পারবে সে আশাও দেখছি না। তাছাড়া সরাসরি কোনোরকম ইনভেস্টমেন্টও নেই আমাদের ফুটবল বিশ্বকাপে।
তবুও আমরা ইতিবাচকভাবেই বিশ্বমিডিয়ায় উঠে আসছি। আর এর পেছনে কাজ করছে আমাদের ফুটবেলের প্রতি আবেগ। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, এ ব্র্যান্ডিংটা হচ্ছে আর্জেন্টিনার হাত ধরে।
Advertisement
ফুটবল বিশ্বকাপে না থেকেও বাংলাদেশ এখন তাই বিশ্বমিডিয়ায় আলোচিত হচ্ছে! এটা সম্ভবপর হয়েছে শুধু এদেশে আর্জেন্টিনার এত এত সাপোর্টার থাকায়! এ খবর পৌঁছে গেছে আর্জেন্টিনা দলের কাছেও। সেদেশের কোচও তাই বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিলেন নক আউট পর্ব শুরুর আগে সাংবাদিক সম্মেলনে।
তার আগেই অবশ্য আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনও তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশী সমর্থকদের ছবি প্রকাশ করেছে। এমনকি মেসির হাতে বাংলাদেশের পতাকা দিয়েও তারা ছবি প্রকাশ করেছে। বলা যায়, এভাবেই বিশ্বকাপে দল হিসেবে না থেকেও আমরা দারুণভাবে আছি । বিশ্ব দরবারে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। অটোমেটিক ব্র্যান্ডিং হচ্ছে বাংলাদেশ!
আর্জেন্টিনার একজন সমর্থক হিসেবে "বাংলাদেশ" যখন ব্র্যান্ডিং হয় প্রিয় দলের হাত ধরে; নিজের কাছেই তখন ভালোলাগার এক অসম্ভব অনুভূতি কাজ করে। মনে হতে থাকে আর যাই হোক, আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করে একবিন্দুও ভুল করিনি! এর জন্য খরচ হচ্ছে না একটা পয়সাও! শুধুই ফুটবল বিশ্বে প্রভাবশালী দল হিসেবে আর্জেন্টিনাকে সাপোর্ট করার জন্যই তারা আমাদেরকে তুলে ধরছে বিশ্ব মিডিয়ায়! এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে বলুন?
আমাদের দেশে তো ব্রাজিলের সাপোর্টারও অনেক। আবার ল্যাটিন আমেরিকায় আয়তন, অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার দিক থেকে ব্রাজিলের অবস্থান এক নম্বরে। ফলে আর্জেন্টিনার সাথে যদি ব্রাজিল দলের মুখ থেকেও বাংলাদেশ নামটি উচ্চারিত হতো তাহলে নিশ্চয় ব্র্যান্ডিংটা আরো চমৎকার হতো! আশাকরি সেটাও হবে হয়তো! দেখা যাক হয় কিনা!
হাজার কথার এত কথা যদি এক লাইনে বলতে গেলে বলতে হয়- আর্জেন্টিনা দলের মাধ্যমে স্বদেশের এমন ব্র্যান্ডিং হতে দেখে মনের গহীনে সত্যিই এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে!
পরিশেষে শুভ কামনা জানাই আর্জেন্টিনা দল ও দেশের জন্য! এগিয়ে যাক আর্জেন্টিনা! সেই সাথে বারংবার উচ্চারিত হতে থাকুক "বাংলাদেশ" নামটিও।
লেখক: চিকিৎসক, শিক্ষক।
এইচআর/এমএস