আইন-আদালত

বাবা-মায়ের হাহাকার, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আশা

পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে ডেকে পাঠানো হয় অভিভাবক। তারা স্কুলে গেলে করা হয় অপমান। এ কারণে আত্মহত্যা করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী। আজ তার চলে যাওয়ার চার বছর। ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস নিয়ে প্রাণ দেয় অরিত্রী।

Advertisement

চার বছর পেরিয়ে মেয়ে হারানোর হাহাকার নিয়ে দিন পার করছেন তার বাবা-মা। তারা বলছেন, নকল করার যে অভিযোগ, সেটি মিথ্যা। আমরা আদালতে এটি প্রমাণ করে ছাড়বো। এজন্য প্রয়োজনে যাবো সর্বোচ্চ আদালতে।

ভিকারুননিসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে করা মামলাটি ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। মামলায় ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ শেষ হয়েছে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কার্যক্রম শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশাও তাদের।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সালাউদ্দিন হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, ভিকারুননিসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যার প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমরা জোর চেষ্টা করছি। খুব অল্প দিনের মধ্যে মামলাটি শেষ হবে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে, এ প্রত্যাশা করছি।

Advertisement

মামলার বাদী ও অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী জাগো নিউজকে বলেন, সন্তান হারানোর অপূর্ণতায় দিন পার করছি আমরা। আমার মেয়েকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলেন শিক্ষকরা। আমার মেয়েকে নকল করার যে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে, তা আমি প্রমাণ করে ছাড়বো। আসামিরা যে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন, আমি তা প্রমাণ করতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যাবো।

আরও পড়ুন: অরিত্রীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা: ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

তিনি আরও বলেন, আজ আমার মেয়ে বেঁচে থাকলে এইচএসসি পরীক্ষা দিতো। তার বান্ধবীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সব সময়। মেয়ের জন্মদিন পালন করে তার বান্ধবীরা। আমরাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। আমার স্ত্রী তার মেয়ের জন্য কান্না করে দিন পার করে। মানসিকভাবে আমরা মোটেও ভালো নেই।

২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর পরীক্ষা চলাকালে অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান শিক্ষক। মোবাইল ফোনে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীর মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। দিলীপ অধিকারী তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এরপর অধ্যক্ষের কক্ষে গেলে তিনিও একই আচরণ করেন। এসময় অরিত্রী দ্রুত অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে শান্তিনগরে বাসায় গিয়ে দিলীপ অধিকারী দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস নিয়ে ঝুলছে। এ ঘটনার পরের দিন অরিত্রীর বাবা দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারায় মামলা করেন তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এর পরের দিন (৫ ডিসেম্বর) শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ ডিসেম্বর আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে ৯ ডিসেম্বর জামিন পান হাসনা হেনা। ১৪ জানুয়ারি নাজনীন ফেরদৌস ও জিনাত আক্তার আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।

আরও পড়ুন: বাঙালির মুখ চাবুক!

২০১৯ সালের ২০ মার্চ নাজনীন ফেরদৌস ও জিনাত আক্তারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কামরুল হাসান তালুকদার। আর শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে অভিযুক্ত করার মতো সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তার অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আসামিদের নির্দয় ব্যবহার ও অশিক্ষক সুলভ আচরণে অরিত্রী আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়।

একই বছরের ১০ জুলাই এ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ২৫ নভেম্বর এ মামলার বাদী ও অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর জবানবন্দির মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপরে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট অরিত্রীর মা বিউটি অধিকারী সাক্ষ্য দেন আদালতে।

এদিকে দুই আসামির বিরুদ্ধে যে ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা, মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে ওই ধারায়।

জেএ/এমএইচআর/এমএস