প্রিন্স মনিরুজ্জামান
Advertisement
‘অগ্র’ শব্দের অর্থ হলো প্রথম বা প্রধান। ‘হায়ণ’ শব্দের অর্থ হলো বছর। সে অর্থে অগ্রহায়ণ মাস বাংলা বছরের প্রথম মাস। বৈশাখ বঙ্গাব্দের প্রথম মাস নয়। অগ্রহায়ণ মাসের আগের নাম ছিল মার্গশীর্ষ। মৃগশিরা নক্ষত্রের নামানুসারে এ মাসের নামকরণ করা হয়েছিল। তবে এখন অগ্রহায়ণ বা অঘ্রান বাংলা সনের অষ্টম এবং শকাব্দের নবম মাস।
পুরাণে আছে, বাঙালি জাতির বারো মাসে তেরো পার্বণ। নবান্নকে কেন্দ্র করে অগ্রহায়ণের শুরুতেই গ্রামবাংলায় চলে আসে নানা আয়োজন। কার্তিকের হাত ধরেই অগ্রহায়ণ ফিরে আসে ঋতুবৈচিত্র্যের আবর্তনে। কার্তিক আর অগ্রহায়ণের কৃষ্টি, সংস্কৃতি দিয়েই গঠিত হেমন্তের শরীর।
তাই তো হেমন্ত এলেই দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ ছেয়ে যায় হলুদে। সোনালি ফসলে বিমোহিত কৃষকের মন নেচে ওঠে আনন্দে। পাকা ধানের নজর কাড়া সোনালি রঙে মন হয়ে যায় মাতোয়ারা। দোয়েলের শিস তখন ভর করে কৃষকের ঠোঁটে। কাস্তে হাতে ছুটে যায় মাঠে। নতুন ধান তুলে আনে ঘরে। রাতদিন এক করে লেগে যায় ধান গোলাজাত করতে।
Advertisement
কুসুম শীতের ছোঁয়াকে ফসলের গায়ে মেখে দিয়ে কৃষক ভুলে যায় নাওয়া-খাওয়া। অঘ্রানের ঘ্রাণে বুক ফুলে নিঃশ্বাস নেয়। গুনগুনিয়ে পথ চলাচল তখন কৃষকের ভীষণ সুন্দর সময়ের সাক্ষী হয়ে থাকে। কাজের ফাঁকে একটু খানি ফুরসৎ পেলেই বিড়ির গোড়ায় ঠোঁট চেপে ধরে ধোঁয়া উদগীরণ করে। শরীরে নিকোটিনের জোগান দেয়। প্রাকৃতিক সুখ অনুভব করে মনে। সোনালি ফসলের সঙ্গে কৃষকের মনও হাসতে থাকে কুয়াশার আড়ালে লুকিয়ে থাকা রৌদ্রের মতো।
কিষাণীর ধুলোপড়া গায়ের সেঁধো গন্ধ শুঁকে ধানী পোকারা ইতিউতি ওড়াউড়ি করে। কাজের ব্যাঘাত ঘটায়। হেঁসেলে নতুন চালের ভাত বসিয়ে দিয়ে কিষাণী ছোটে ধানের মাচায়। ধেনুদুগ্ধ দোহাতে হাত রাখে ওলানের মধ্য বাঁটে। কর্ম সারা করতে করতে একসময়ে ভুলে যায় হেঁসেলে ভাত বসিয়ে রাখার কথা। ভাতের পোড়া গন্ধ পেয়ে কিষাণীর হুঁশ ফেরে। হেঁসেলের দিকে ছুটে চলার মতো এমন কত দৃশ্যই না দেখা যায় এই অগ্রহায়ণে।
প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির জীবনে নতুন বার্তা নিয়ে আসে অগ্রহায়ণ। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা পিঠা, পায়েসসহ হরেক রকম সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ। প্রতিটি বাড়ি হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। ঝি, জামাই নিমন্ত্রণ খেতে আসে বাপের বাড়ি। ঠিক উৎসবের আমেজে কাটে অগ্রহায়ণের পুরোটা মাস।
অগ্রহায়ণকে নবান্নের মাসও বলা হয়ে থাকে। নবান্ন শস্য ভিত্তিক একটি উৎসব। শস্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করেই মূলত নবান্নের উৎসব পালিত হয়ে থাকে। অগ্রহায়ণ বারবার ফিরে আসুক কৃষকের হাসি হয়ে। নবান্নের গন্ধে ভরিয়ে দিক গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘর। তাদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো মেলুক ডানা। ভালো থাকুক দেশের মানুষ, ভালো থাকুক বাংলাদেশ।
Advertisement
লেখক: কথাশিল্পী।
এসইউ/এমএস