পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি হচ্ছে পর্যটনের একটি সম্ভবনাময় স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এখানে সারা বছর পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও দক্ষ জনবলের অভাবে এখানকার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
Advertisement
কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশি ও সবুজ পাহাড়ের মিতালি বারবার কাছে টানে পর্যটকদের। তাইতো পর্যটকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষে অন্যতম স্থান হিসেবে থাকে এই পার্বত্য জেলা। পর্যটন সম্ভবনাময় জেলাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দ আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে এরইমধ্যে রাঙ্গামাটিতে নতুন উদ্যাক্তাদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে বেশকিছু পর্যটন স্পট।
তবে সঠিক কোনো পরিকল্পনা বা সরকারিভাবে নির্দেশনা না থাকায় পর্যটনশিল্প নিয়ে যেমনটা আশা করা যায় তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। সরকারিভাবেও পর্যটনকে কাজে লাগিয়ে মোটা অংকের রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা থাকলেও সে তুলনায় আদায় করতে পারছে না। একইভাবে রয়েছে দক্ষ জনবলের অভাব। তবে পর্যটন সেক্টরকে এগিয়ে নিতে দক্ষ জনবল ও সঠিক পরিকল্পনা নিতে পারলে এ অঞ্চলের বেকারত্ব যেমন দূর হবে ঠিক তেমনি অর্থনৈতিক চাকাও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন টুরিস্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সচেতন সমাজ।
রাঙ্গামাটির চেঙ্গি ট্যুরিজম’র অ্যাডমিন মিশু দে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এখানে বেশি সমস্যা হচ্ছে দক্ষ জনবলের অভাব। যারা রয়েছে তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। যার কারণে দেশ ও বিদেশ থেকে যারাই আসছেন তাদের সেবা দিতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে কোনো পর্যটন স্পট গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। যার ফলে যত্রতত্র পর্যটন স্পট গড়ে উঠছে। এর প্রভাবে তাদের যে পরিমাণ গ্রাহক পাওয়ার কথা তারা তেমনটি পাচ্ছে না।
Advertisement
রাঙ্গামাটির ট্যুরিস্ট গাইড নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ট্যুরিস্ট গাইড পেশার সঙ্গে জড়িত। আমাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। অনেক বেকার তরুণ এ পেশায় আসতে চায় তবে সঠিক গাইডলাইন ও প্রশিক্ষণ না পাওয়ায় তারা আসতে পারছে না। সেজন্য সরকারিভাবে যদি প্রশিক্ষণ ও সঠিক গাইডলাইন দেওয়া যায় তাহলে এ অঞ্চলের বেকারত্ব দূরীকরণে ট্যুরিস্ট গাইড পেশা ভূমিকা রাখবে বলে আমার মনে হয়।
লেখক ইয়াছিন রানা সোহেল বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে অপার সম্ভাবনাময় স্থান। দুঃখজনক হলেও সত্য এখানে প্রাকৃতিকভাবে যে সমস্ত স্পটগুলো রয়েছে সে স্পটের অনেকগুলো সরকারি অব্যবস্থাপনার কারণে এবং দেখাশুনা না করার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার একটি উদাহরণ হচ্ছে সুবলং ঝরনা। এ ঝরনা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে একটি পরিচিত নাম। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য সরকার ও প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবে এ সুবলং ঝরনাটি এখন মৃত ঝরনায় পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি রাঙ্গামাটিতে পর্যটন স্পটগুলো গড়ে উঠছে প্রায় বেসরকারিভাবে। আমরা যারা লেখালেখি করি তারা লেখনির মাধ্যমে সরকারকে দেখিয়ে দেই রাঙ্গামাটির কোন কোন স্পট সম্ভবনাময়। কিন্তু সরকার এসকল স্পটের উন্নয়ন করার জন্য সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা নিচ্ছে না। এছাড়া বেসরকারিভাবে যারা পর্যটন স্পট গড়ে তুলছে সরকার তাদেরকেও সঠিক কোনো পরিকল্পনা বা সহযোগিতা করছে না। সরকার যদি সুষ্ঠুভাবে পর্যটন সেক্টরকে উন্নত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর বেকার সমস্যা দূর হবে তার পাশাপাশি সরকার এই পর্যটন খাত থেকে বিশাল অংকের রাজস্ব আদায় করতে পারবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্লোবাল ভিলেজ’র নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, যে কোনো অঞ্চলে পর্যটন বিকশিত করতে হলে আগে সে অঞ্চলকে ঘিরে একটি মাস্টারপ্লান করতে হবে। সে মাস্টারপ্লানকে ধরে ধীর লয়ে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তবে দুঃখজনক ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পর্যটন বিকাশের জন্য কোনো মাস্টারপ্লান তৈরি করা হয়নি। এমনকি সরকারি কোনো পর্যায় থেকে বিশেষ কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে বড় ধরনের বরাদ্দ হয়নি। এসব অঞ্চলে পর্যটন বিকাশ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয়, বিপর্যয় হয়, পরিবেশ সামান্যতম বিরক্ত হয় এরকম কোনো কিছু করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও পরিবেশকে সমন্বয় করে ঠিকঠাক রেখে এখানকার স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে যদি ট্যুরিজম বিকাশ করতে চান তাহলে এখানে সফল পর্যটনশিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এর বাইরে বিকল্প কোনো ভাবনা সম্ভব না।
Advertisement
এসএইচএস/জেআইএম