জাতীয়

বিদেশি পর্যটক আকৃষ্টে উদ্যোগ নেই পর্যটন করপোরেশনের

#তিন বছরে কতজন বিদেশি পর্যটক এসেছেন সে তথ্যও নেই#প্রচারের অভাব, পরিকল্পনার ঘাটতি ও পরিবেশ নেই#পর্যটন উন্নয়ন সূচকে একেবারেই পেছনের সারিতে বাংলাদেশ

Advertisement

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে কমবেশি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে দেশের প্রায় সব খাত। গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে অর্থনীতিতে। তবে এর ব্যতিক্রম পর্যটন খাত। নানা অব্যবস্থাপনা আর সমন্বয়হীনতায় কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না পর্যটন। ফলে বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশের পর্যটনে আকৃষ্ট হচ্ছে না।

এদিকে গত তিন বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কতসংখ্যক পর্যটক বাংলাদেশে এসেছে তার কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। এছাড়া বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে তার বিস্তর তথ্য দিতে পারেনি তারা। ফলে ভবিষ্যতেই দেশি-বিদেশি পর্যটক কতটা আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচারের অভাব, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার ঘাটতি এবং পরিবেশ তৈরি করতে না পারায় দেশের পর্যটন খাত পিছিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো নিয়ে বিদেশে কোনো প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় না। বিদেশি পর্যটকরা বাংলাদেশে আকর্ষিত হন না। অথচ বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিন, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য কুয়াকাটা, নিঝুম দ্বীপ, সিলেটের চা-বাগান, সুন্দরবন, পুরাকীর্তিসহ নানান আকর্ষণ আছে।

Advertisement

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য ঢাকার আগারগাঁওয়ে শোভাযাত্রা, সভা-সেমিনারসহ নানান কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। এসব সভা-সেমিনারে দেশের পর্যটন খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন বক্তারা। কিন্তু বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না। করপোরেশনের এমন কর্মকাণ্ডে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আলী কদর জাগো নিউজকে বলেন, দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে প্রচার-প্রচারণাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে পর্যটন করপোরেশন। এছাড়া বিদেশে পর্যটকদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পর্যটন করপোরেশনের বিদেশি পর্যটকদের তালিকা কেন নেই, এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

পর্যটন খাতে নানা সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে আলী কদর বলেন, সীমাবদ্ধতার কারণে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছি না। এখন পর্যটন খাতের উন্নয়নে ৩০ বছর মেয়াদি একটা মহাপরিকল্পনার প্রণয়নের কাজ চলছে। আশা করি ধাপে ধাপে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবো। তখন বিদেশিরা বাংলাদেশ ভ্রমণে আরও আগ্রহী হবে।

বিদেশি পর্যটক আসছে না

Advertisement

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে দেশে পর্যটক এসেছিলেন তিন লাখ ২৩ হাজার। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে এখন পর্যন্ত আর কোনো পর্যটক আসেননি। বিদেশি নাগরিক বা পর্যটকদের জন্য নানান বিধিনিষেধ ছিল। পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক আসার বিধিনিষেধ তুলে দেয় সরকার। এ ছাড়া বিদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরের পর থেকে বুধবার (৩০ নভেম্বর) পর্যন্ত ঠিক কতজন বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে এসেছেন তার কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি পর্যটন করপোরেশন।

পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকট উত্তরণে কার্যকর পথনকশা না থাকা, প্রচার-প্রচারণার অভাব, দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় ও করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং অদক্ষতার কারণে দেশের পর্যটন খাতের এই দশা হয়েছে। এখন পর্যটন এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের অবস্থা খুবই নাজুক। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভ্রমণ ও পর্যটন উন্নয়ন সূচকে ১১৭টি দেশের মধ্যে একেবারেই পেছনের সারিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১১০তম। ২০১৯ সালে ছিল ১১৩তম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পর্যটন করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে বিদেশি পর্যটকদের হালনাগাদ তথ্য থাকে। সেখান থেকে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা জানা যায়। কিন্তু পর্যটন করপোরেশনের তা জানা বা তথ্য সংগ্রহে কোনো আগ্রহ নেই।

তবে পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, তারা আগে নিয়মিত বিদেশি পর্যটকদের তথ্য রাখতেন। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে তা জানতে ইমিগ্রেশনে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। সব শেষ কবে চিঠি পাঠানো হয়েছে তাও জানাতে পারেননি নজরুল ইসলাম।

বাংলাদেশে পর্যটন পরিস্থিতি নিয়ে এশিয়ান ট্যুরিজম ফোয়ারের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, বৈচিত্র্যপূর্ণ পর্যটনসম্পদ থাকার পরও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে পেছনের সারিতেই আছে বাংলাদেশ। এর বড় কারণ, বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা তা পূরণ করতে না পারায় তারা আসছেন না। দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে পারলে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করা যাবে। তখনই দেশের পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি দুইভাবে অবকাঠামো দরকার।

দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম এক্সপো (বিআইটিটিআই)। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) আয়োজিত এই মেলা চলবে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

জানতে চাইলে আটাবের সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাতে দেশের পর্যটন ছড়িয়ে পড়ে, সেই ব্যবস্থা করা এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ছাড়া আমরা কীভাবে বিদেশি মুদ্রা আয় করতে পারি, একইসঙ্গে সাউথ এশিয়ার এভিয়েশন হাব হিসেবে কীভাবে নিজেদের দেশকে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।

পর্যটন খাতে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশি পর্যটক আসছে না বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। সম্প্রতি তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশি পর্যটকদের যেসব চাহিদা তা আমরা পূরণ করতে পারি না। এখন তাদের আকর্ষণে নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী আগামীতে কাজ করা হবে।

কিন্তু কী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, কবেইবা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে তার কিছুই তিনি বলেননি।

এমএমএ/এসএইচএস/জেআইএম