কৃষি ও প্রকৃতি

মিরসরাইয়ে কমেছে কালোজিরা ধানের চাষ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কালের বিবর্তনে চাষ কমেছে কালোজিরা ধানের। হাইব্রিড ধানের প্রভাবে আগের মতো এ ধান চাষ করেন না কৃষকরা। অথচ একসময় উপজেলার কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল কালোজিরা ধান। গ্রামীণ জীবনে ধানটি ছিল অপরিহার্য। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ ধানের জায়গা দখল করে নিয়েছে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭-৮ বছর আগেও প্রতিটি বাড়িতে সংরক্ষণ করা হতো কালোজিরা ধান। এ জাতের সুগন্ধি চালের নাম শুনলে কার রসনায় জল না আসে। এ সুগন্ধি চিকন চাল দিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানে তৈরি হয় পিঠাপুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি ও জর্দাসহ সুস্বাদু মুখরোচক নানা খাবার। এ ছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন পূজা-পার্বণের ভোগ, মিষ্টান্ন রান্নার কাজে কালোজিরা চাল ব্যবহার করেন। ফলে ধানটি সবার কাছেই বিশেষ প্রয়োজনীয়। কিন্তু এসবই এখন কালের স্মৃতি।

উপজেলার অর্ধশতাধিক ছোট-বড় হাট-বাজারে এখন আর এ চাল পাওয়া যায় না। বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী এ সুগন্ধি ধান। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য অনুযায়ী, মেয়ের জামাই এলে শ্বশুরবাড়িতে চিকন চালের ভাত দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। নিম্নব্ত্তি বা মধ্যবিত্ত হলেও দিনে একবেলা অবশ্যই এ চালের ভাত রান্না হতো। এ ধান কাটার সময়কে ঘিরে গ্রামবাংলা মেতে উঠত নবান্ন উৎসবে। সেসব এখন অতীত দিনের স্মৃতি। বীজের অভাব, সার, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সুগন্ধি ধানের চাষাবাদ।

মিরসরাই উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী মো. নুরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২২০ একর জমিতে কালোজিরা ধানের চাষ হয়েছে। একটা সময় এই জাতের ধান চাষ হতো অনেক বেশি। এখন কালোজিরার পরিবর্তে হাইব্রিড ধান বেশি আবাদ হচ্ছে।’

Advertisement

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ জাতের ধান আবাদে কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বা প্রদর্শনী প্লট প্রকল্প গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির হাত থেকে তা ফেরানো সম্ভব। উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, ওয়াহেদপুর, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিরসরাই সদর ইউনিয়নের কৃষি জমিগুলোতে দেখা যায়, খুব কম জমিতে কালোজিরা ধান চাষ হয়েছে।

বিভিন্ন জাতের ধানচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ জাতের ধানের ফলন হয় কম। বিঘা প্রতি অন্য জাতের ধান যেখানে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মণ উৎপন্ন হয়, সেখানে এ জাতের ফলন হয় সর্বোচ্চ ৮ মণ পর্যন্ত। তবে বাজারে দাম দ্বিগুণ পাওয়া যায়। সার, সেচ ও পরিচর্যাও লাগে কম। সে হিসেবে আবাদে লোকসান হয় না বললেও চলে। এখনো গ্রামের মানুষের কাছে এ ধানের কদর যথেষ্ট।

মিরসরাইয়ের মধ্যম ওয়াহেদপুর গ্রামের কৃষক সাইফুল্লাহ বলেন, ‘গুয়া ধানের (কালোজিরা) চাউলের ভাত রান্না করলে মৌ মৌ গন্ধে চতুর্দিক ভরে যেত। এ ভাত এমনি এমনিই খাওয়া যায়। গুয়া ধানের চাউলের ভাতের স্বাদের কথা জীবনেও ভুলতে পারবো না।’

দক্ষিণ মঘাদিয়া ঘোনা এলাকার চাষি এনামুল হক বলেন, ‘একসময় প্রত্যেক চাষিই কম-বেশি এ ধান চাষ করতেন। ১০ বছর আগেও ১২০ শতক জমির মধ্যে ৩০ শতকে কালোজিরা চাষ করতাম। এখন করি ৪-৫ শতক জমিতে। এভাবে প্রত্যেকে চাষিই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কেউ কেউ চাষই করছে না। কারণ এ ধানের ফলন অন্য ধানের চেয়ে অনেক কম।’

Advertisement

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফলন কম হওয়ায় এ ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। মিরসরাই উপজেলায় প্রায় ২২০ একরের মতো জমিতে এ ধান চাষ হয়েছে। বিকল্প হিসেবে ব্রি-ধান ৩৪ চাষ হচ্ছে। কৃষকরা নিজ আগ্রহে এ জাতের ধান চাষ করেন। এটি হুবহু কালোজিরার মতো এবং ফলনও বেশি।’

এসইউ/জিকেএস