ক্যাম্পাস

বাকৃবির ৭ম সমাবর্তন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজন

সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একটি আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। এর মাধ্যমে শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ হাতে পান শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে সমাবর্তনের মাধ্যমে জীবনের পরম অর্জন সার্টিফিকেটটি গ্রহণ করার। কিন্তু অনেকাংশে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। নানা সমস্যার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় না। মান সম্মত উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষে ১৯৬১ সালে যাত্রা শুরু করেছিল দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও সমস্যার জন্য বাকৃবিতে নিয়মিত কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়নি। দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি কৃষিবিদগণদের জ্ঞান, দক্ষতা ও মেধার বাস্তবসম্মত ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডকে অব্যাহত রেখে দেশের জন্য কৃষি উন্নয়নে শক্তিশালী বুনিয়াদ নির্মাণে সফলকাম হওয়ার প্রার্থনা করে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি বাকৃবিতে ৭ম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ ৫৪ বছরে মাত্র ৬ বার সমাবর্তন হয়েছে। ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে বেড়াজালে ঘেরা শিক্ষার নগরী বলে খ্যাত প্রাচীন শহর ময়মনসিংহ। শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পুরাতন বহ্মপুত্র নদের পার ঘেঁষে ১১০০ একর এলাকার বিশাল সবুজ চত্বর নিয়ে গ্রামীণ পরিমণ্ডলে গড়ে উঠেছে প্রকৃতি কন্যা খ্যাত বাকৃবি ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই নজরে পড়বে চোখ ধাঁধানো সবুজের সমারোহ।ইতিহাসের পাতা থেকে...জাতীয় শিক্ষা কমিশন, খাদ্য ও কৃষি কমিশন এবং অপরাপর বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দেশে উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৬১ সনের ১৮ আগস্ট ‘পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ’ বলে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।’ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম বিগত ১৯৬১-৬২ শিক্ষাবর্ষে ময়মনসিংহস্থ অ্যানিম্যাল হাজব্যান্ড্রি ও ভেটেরিনারি কলেজ প্রাঙ্গণকে কেন্দ্র করে শুরু হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭২ সনে ‘এডাপটেশন অব ইউনিভার্সিটি ল’জ’ অধ্যাদেশ বলে এর নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ঐতিহ্যবাহী এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৪২ হাজার ১ শ’ ৩৮ জন শিক্ষার্থী কৃষি শিক্ষায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। যারা বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরকে পরিচালনা করে আসছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় জন্মলগ্ন থেকেই আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে বাংলাদেশের কৃষিকে করেছে মহিমান্বিত এবং গবেষণা কাজের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জনের ধারা বজায় রাখছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।   ফিরে দেখা ৫ সমাবর্তনবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৬ বার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তনবিশ্বদ্যিালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৮ সনের ২৮ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আবদুল মোনায়েম খানের নেতৃত্বে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় সমাবর্তনস্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পর ১৯৭২ সনের ৩১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সমাবর্তনে চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর হাত থেকে কৃষি গ্রাজুয়েটগণ সনদপত্র গ্রহণ করেন। তৃতীয় সমাবর্তন১৯৯৪ সনের ৫ জুন ছিল বাকৃবির জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ এদিনই বাকৃবিতে প্রথম তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিশ্বদ্যিালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে চ্যান্সেলর হিসেবে কৃষি গ্রাজুয়েটদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন। ওই সমাবর্তনে মোট ১৫১৫ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র এবং ১৯ জনকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।চতুর্থ সমাবর্তন১৯৯৭ সনের ২০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। ওই সমাবর্তনে মোট ৬৫৫ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র এবং ২১ জনকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।পঞ্চম সমাবর্তন২০০৩ সনের ৫ ফ্রেবুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সমাবর্তনে চ্যান্সেলর হিসেবে গ্রাজুয়েটদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। ওই সমাবর্তনে মোট ৬১৯ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র প্রদান করা হয়।বিশেষ সমাবর্তন১৯৯৮ সনের ১৮ এপিল প্রথম বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের জনক ‘নোবেল লরিয়েট ড. আর্নেস্ট বোরলগ’ কে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ষষ্ঠ সমাবর্তনসর্বশেষ ২০১১ সনের ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সমাবর্তনে চ্যান্সেলর হিসেবে গ্রাজুয়েটদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। ওই সমাবর্তনে স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্ত ৫৯৯২ জন, মাস্টার্স ডিগ্রিপ্রাপ্ত ৬৪৩৮ জন এবং পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত ১০৩ জন শিক্ষার্থীকে সনদপত্র প্রদান করা হয়। সমাবর্তন উপলক্ষে গৃহীত নানা কর্মসূচিবিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য ৭ম সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বাকৃবি চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। রেজিস্ট্রেশনের প্রায় এক বছর পর অনুষ্ঠিতব্য ৭ম সমাবর্তনকে জাঁকজমকপূর্ণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবরকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয়েছে সমাবর্তন উদযাপন কমিটি। গঠন করা হয়েছে ১৭ টি সাব-কমিটি। ৭ম সমাবর্তনে এক হাজার নয়শত ঊনিশ জন স্নাতক, দুই হাজার আটশত একান্ন জন স্নাতকোত্তর ও আটত্রিশ জনকে পিএইচডি ডিগ্রির সনদ দেয়া হবে। এছাড়া ষষ্ঠ সমাবর্তনের পর থেকে যাদের সনদ প্রদান করা হয়নি এমন চার হাজার আটশত আট জন শিক্ষার্থীকে মূল সনদ প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ক্যাম্পাস সুসজ্জিতকরণের কাজ। ভিসির ভাবনা : বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেশের খ্যাতিমান পশু বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়ে সমাবর্তন আয়োজন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। দেশের কৃষি উন্নয়নে ঈপ্সিত গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে সার্বিক নেতৃত্ব দানে সমর্থ দক্ষ কৃষিবিদ, শিক্ষক, গবেষক ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ তৈরি করা আমাদের অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামীর দিনগুলোতে এদেশের কৃষি উন্নয়ন ও গ্রামীন দারিদ্র বিমোচনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তীর্ণ গ্রাজুয়েটগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এসএইচএস/এমএস

Advertisement